মনের জানালা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
আমার বয়স ১৮। একজনকে ভালোবাসি। তার সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু তাকে কখনো প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারিনি। দুই বছর পরে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে তার প্রেম হয়, আবার ভেঙেও যায়। আমাদের প্রেম হয় কলেজে ওঠার পর। হঠাৎ মাস ছয়েক আগে সে বলে, আমাকে শুধু ভালো বন্ধু হিসেবে ভাবে। সে অন্য কাউকে তার মন দিয়ে ফেলেছে। তার পরের দিন আমি ট্যাবলেট খাই। ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছি। মন থেকে আমি তাকে ঘৃণা করি। কিন্তু চলার প্রতি মুহূর্তে আমি তাকে স্মরণ করি। তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হলেও দেখা করার পর কত যে খারাপ লাগে, তা বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। অন্যদিকে, ট্যাবলেট খাওয়ার পর লজ্জায় আমি গত পাঁচ মাস বাসায় যাই না। খারাপ লাগে, যখন বাসায় ভাবে, আমি গোপনে বিয়ে করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নীলফামারী, রংপুর
পরামর্শ
তুমি এবং মেয়েটি দুজনেই এখনো বয়ঃসন্ধিতে রয়েছ। এই সময়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হঠাৎ তীব্র অনুভূতি বা আকর্ষণ হতে পারে, আবার এই ইতিবাচক অনুভূতির তীব্রতা কিছুদিন পর কমেও যেতে পারে। তুমি যখন প্রথম তাকে পছন্দ করেছিলে, তখন তোমার বয়স একেবারেই কম ছিল। এরপর নিশ্চয়ই তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে, যখন দেখলে মেয়েটি দুই বছর পর অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করল। কলেজে পড়ার সময় তোমাদের প্রথম সম্পর্ক হওয়ার সময় কি মেয়েটি আগের ছেলেটির সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছিল? আমি বলব, মেয়েটি আসলে কাউকেই নিজের মন দিয়ে দেয়নি। তা-ই যদি হতো, তাহলে সে এই বয়সে বারবার তার সঙ্গী বদলে ফেলত না। এতে মনে হচ্ছে, মেয়েটি খুব অস্থির চিত্তের এবং কাউকে ওর বেশিদিন ভালো লাগে না। তুমি অনেক ভেঙে পড়েছ বুঝতে পারছি, তবে ওকে ঘৃণা করলে তোমার মানসিক বিপর্যস্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। কাউকে তো জোর করে সম্পর্কের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব নয়। মেয়েটির পছন্দ-অপছন্দের প্রতি তোমাকে কষ্ট করে হলেও তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারটুকু দিতে হবে। তুমি যে নিজের এত বড় ক্ষতি করতে চেয়েছিলে, সেটি কি প্রমাণ করে না যে তোমার নিজের প্রতি ভালোবাসা কম। নিজের যত্ন করো এবং প্রতিজ্ঞা করো, তুমি আর কখনো এভাবে নিজেকে কষ্ট দেবে না।
সমস্যা
আমার বয়স ৩০। চার ও এক বছরের দুটি বাচ্চা আছে। প্রায় চার বছর হবে আমি খুব মানসিক সমস্যায় আছি। আমার মনটা সারাক্ষণ ভীষণ খারাপ থাকে। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি। এখন এমন অবস্থা যে মনে হয়, মন খারাপ করে থাকতেই বেশি ভালো লাগে। চেষ্টা করেও মন ভালো করতে পারি না। আর অসম্ভব খিটখিটে মেজাজ হয়েছে। ছোট বাচ্চাটাকে পর্যন্ত মারধর করি। আর হাসতে তো ভুলেই গিয়েছি। জানেন আপা, অন্যের হাসি দেখলেও সহ্য হয় না। ঘুম হয় না। চোখ বন্ধ করলেই হাবিজাবি ভাবতে থাকি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি যে খুব বেশি বিষণ্নতায় ভুগছ, তা খুব স্পষ্ট। তুমি নিজেই বুঝতে পারো না, কেন মন খারাপ হচ্ছে। তাহলে তো ধারণা করা যায় যে এটি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন। খুব ভালো হয় তুমি যদি ঢাকায় এসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গিয়ে কোনো মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নাও। মনে হচ্ছে, ওষুধ সেবনের প্রয়োজন রয়েছে। তোমার মেজাজ খিটখিটে থাকলে এবং রাতে ঘুম না হলে তো তার প্রভাব গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ওপরে পড়ছে। বিশেষ করে তোমার সন্তানদের যেহেতু এখন ব্যক্তিত্ব গঠনের সময়, এখন ওদের ওপরে নির্যাতন হলে ওদের আবেগীয় ও সামাজিক বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তোমার নিশ্চয়ই অনেক অপরাধবোধ হয়, ওদের মারধর করার পর। আর বিলম্ব না করে তুমি মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে যাও এবং পাশাপাশি সাইকোথেরাপি বা মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিংয়ের সেবা গ্রহণ করো।