সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্রের অধ্যায়-২ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সালমান সাহেব আগে টিনের ঘরে থাকলেও এখন আধুনিক নকশায় নির্মিত পাকাবাড়িতে থাকেন। দামি আসবাব ও পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করেন। ধর্ম-কর্ম পালনের বিষয়েও তিনি খুবই সচেতন। অবসর সময়ে গল্প-উপন্যাস পড়েন। চিন্তাচেতনা ও মূল্যবোধে তিনি আধুনিক মানুষ।
প্রশ্ন: ক. সংস্কৃতি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী টেইলরের সংজ্ঞাটি লেখো।
খ. সংস্কৃতি অর্জিত আচরণ—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
গ. সালমান সাহেবের জীবনের কোন দুটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে?
ঘ. ওই বিষয় দুটি বাংলাদেশের সমাজ-জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করছে? উদাহরণ দিয়ে দেখাও।
উত্তর: ক. সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আইন, রীতিনীতি এবং অন্য যেকোনো দক্ষতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি।
উত্তর: খ. সংস্কৃতি অর্জনের ও ধারণের বিষয়। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা যায় না। সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষকে তা অর্জন করতে হয়। আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা, চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাবারদাবার প্রভৃতি বিষয় মানুষকে আত্মস্থ করতে হয়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ সংস্কৃতি অর্জন করে। তাই বলা যায়, সংস্কৃতি হলো অর্জিত আচরণ।
উত্তর: গ. সালমান সাহেবের জীবনের বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
সহজ অর্থে সংস্কৃতি বলতে মানুষের সৃষ্টিকর্মকে বোঝায়। ব্যাপক অর্থে সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবন প্রণালি (life style)। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত আচরণ। সংস্কৃতি বস্তুগত ও অবস্তুগত এ দুই উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। বস্তুগত সংস্কৃতি বলতে মানবসৃষ্ট বস্তুগত উপাদান বা আবিষ্কারকে বোঝানো হয়। মানুষ নিজের প্রয়োজনে যেসব বস্তুগত উপাদান সৃষ্টি করেছে, তা-ই এর আওতাভুক্ত। এই অর্থে কলকারখানা, যন্ত্রপাতি, হাতিয়ার, পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাব প্রভৃতি বস্তুগত সংস্কৃতি। অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে মানবসৃষ্ট অবস্তুগত উপাদানকে বোঝানো হয়। আইন, ভাষা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সংগীত, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। বস্তুগত সংস্কৃতি বাহ্যিক এবং তা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। অন্য দিকে অবস্তুগত সংস্কৃতি অভ্যন্তরীণ এবং তা মন্থরগতিতে পরিবর্তিত হয়। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, সালমান সাহেবের আধুনিক বাড়ি, আসবাব, পোশাক-পরিচ্ছদ হলো বস্তুুগত সংস্কৃতি। অন্যদিকে তাঁর ধর্ম বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ প্রভৃতি হলো অবস্তুগত সংস্কৃতি। এ দুই উপাদান নিয়েই মানুষের সংস্কৃতি।
উত্তর: ঘ. বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি বাংলাদেশের সমাজ-জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। বস্তুগত সংস্কৃতি বা আবিষ্কার বাংলাদেশের সমাজ-জীবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখে। বস্তুগত আবিষ্কারের ফলে সমাজ যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবনযাপনে এসেছে সমৃদ্ধি। বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়নে কৃষির উত্পাদন বেড়েছে। ফলে দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। আবার কলকারখানা ও যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে আধুনিক শিল্প ও নগর সমাজের বিকাশ ঘটেছে। যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় মানুষের চলার পথ সহজ হচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রযুক্তি মানুষের নানা রোগ নির্মূলসহ রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখাছে। নির্মাণ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ নিরাপদ ও আরাম-আয়েশে বসবাস করতে পারছে। আধুনিক যুগের আবিষ্কার রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ নানা প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের সমাজ-জীবনকে সহজ করছে।
অন্যদিকে অবস্তুগত সংস্কৃতিও বাংলাদেশের সমাজ-জীবনকে কম প্রভাবিত করে না। কেননা বস্তুগত সংস্কৃতির উদ্ভব এবং বিকাশের পেছনে রয়েছে অবস্তুগত সংস্কৃতি। আমাদের জাতীয় সংগীত যেমন আমাদের দেশাত্মবোধকে জাগ্রত করে, তেমনি রণসংগীত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায়। তেমনি কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাসও মানুষের সমাজ-জীবনকে প্রভাবিত করে। ধর্মীয় বিশ্বাস এখানকার সমাজ-জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। মানুষের চিন্তাচেতনাকে জাগ্রত করতে, জীবনকে সুন্দর ও সৌন্দর্যময় করতে এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এসব অবস্তুগত সংস্কৃতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজ-জীবনে বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মোহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহ, প্রভাষক
এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম