
আজ থেকে ২০ বছর আগে মো. মোস্তফার বাঁধভাঙা আনন্দ দেখেছেন এলাকাবাসী। প্রথম সন্তানের বাবা হয়েছিলেন তিনি। নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে সন্তানের নাম রাখলেন ‘মনিরা পারভীন’। ২০ বছর পর এখন মোস্তফার চোখে জল, বুকে গভীর কষ্ট। দিনদুপুরে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ২০ বছর ধরে কোলেপিঠে মানুষ করা তাঁর আদরের সন্তানটিকে।
ঘটনার এক মাস পার হয়ে গেছে। তবে আর্তনাদ থেমে নেই। মনিরার মা রেখা বেগম বিশ্বাসই করতে পারছেন না, সবার সামনে তাঁর মেয়েটিকে এভাবে মারা হয়েছে, অথচ তাঁকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমার মেয়েটার জন্য কারও মায়া হইল না?’
মনিরা ঢাকার খিলক্ষেত নিকুঞ্জ মডেল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভালোবেসে বিয়ে করেন একই এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিনকে। মনিরার পরিবারের চেয়ে নাসিরের পরিবার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। তাই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি নাসিরের পরিবার। খিলক্ষেত বাজারের পূর্ব দিকের সড়ক ধরে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার গেলে বরুয়া পশ্চিমপাড়ার লাহনিয়া। মনিরাদের দুই কক্ষের জীর্ণ বাসা। গত ১৮ জুন ওষুধ কেনার কথা বলে এ বাসা থেকেই বের হয়েছিলেন মনিরা। আর ফেরেননি।
এদিকে ‘মেনে নেওয়া হবে’—পরিবারের এমন আশ্বাসেই গত ২১ জুন মনিরাকে নিয়ে নিজ বাসার সামনে যান নাসির। কিন্তু নাসিরের বাবা হাছেন আট-নয়জনসহ হামলে পড়েন মনিরার ওপর। ২২ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করা, যৌতুক দাবি ও হত্যার অভিযোগ এনে বাবা মো. মোস্তফা বাদী হয়ে নাসিরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ নাসির ও তাঁর চাচা মুন্তাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
১৯ জুলাই মনিরার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো শোকে পাথর মনিরার পরিবার। বাসার এক পাশে সাজানো বই-খাতা, কলেজের পোশাক-জুতাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে মা রেখা বেগম বলেন, ‘আমার মাইয়ার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকে চাকরি করবে। সংসারের হাল ধরবে। সব শেষ হইয়া গেল।’ মা-বাবার মতো স্মৃতি আওড়ে কাঁদছিলেন ছোট তিন বোন।
মনিরার বাবা মোস্তফা বলেন, ‘আসামিরা হুমকি দিতেছে, টাকা দিয়া নাকি মামলা শ্যাষ কইরা দেবে। পুলিশ কী করতেছে, কিছু বুঝি না? গরিব বইলা আমার মেয়েটারে মরতে হইল। এখন কি সুবিচারও পামু না? আপনারা একটু লেখেন। মেয়ে হারাইছি। এখন বিচার ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই।’
নাসিরের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (্এসআই) আবু বকর জানান, আসামিরা এলাকায় নেই।