ডলারের হাতছানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেই সফলতা আসবে না

ডলারের হাতছানিতে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করলে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশিছবি: খালেদ সরকার

দেশের তরুণদের একটা বড় অংশ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজের প্রতি এখন আগ্রহী। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা থাকলে দেশে বসে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী বিদেশের কাজ করে ডলার আয় করা যায়। অনেকে পান ব্যাপক সাফল্য। সংবাদমাধ্যমে খবর হয়ে ওঠেন এসব তরুণ। কিন্তু অনেকেই ভাবেন বিষয়টা খুব সহজ, আর সাফল্যও আসে দ্রুত। আসলে তা নয়, নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তুতি না নিয়ে কিংবা তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিষয়ে দক্ষ না হয়ে ডলারের হাতছানিতে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করলে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।  

দেশের ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নে কাজ করা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনলাইনে থাকা ২৫৩টি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের (আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে থেকে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ নিয়মিত বিদেশি গ্রাহকের কাজ পান এবং সেই কাজ সম্পন্ন করে দেন।’

আরও পড়ুন

দেখা যাচ্ছে, প্রচুর মানুষ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং শুরু করলেও সফলতার হার এখনো কম। তানজিবা রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর এই কাজের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ধৈর্য এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষতা বাড়ানো। যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন এবং বাজারের ধারা (ট্রেন্ড) বোঝেন, তাঁরাই সফলতা পান। বাজারের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাঁরা দক্ষতা বাড়াতে পারছেন না, তাঁরা এ কাজে পিছিয়ে যাচ্ছেন।’
দেশের ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র দিচ্ছে সরকার। এই পরিচয়পত্রের (আইডি) সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধাও পান ফ্রিল্যান্সাররা। তবে তানজিবা রহমান জানালেন, ফ্রিল্যান্সার আইডি তাঁরাই পাবেন, যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আয়ও থাকতে হবে। সরকার এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে পরিচয়পত্র দিয়েছে।

আরও পড়ুন

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রযুক্তির নানা বিষয়ের কাজ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি লেখালেখি, ফটোগ্রাফি, ডিজাইনের মতো সৃজনশীল কাজও আছে। তানজিবা রহমান বলেন, ‘সব পেশার মানুষই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। তবে যাঁরা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এবং নিজেকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, তাঁদের এই ক্ষেত্রে আসা উচিত। সৃজনশীলতা থাকলে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে ভালো করা যায়।’

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কের শীর্ষ তালিকাভুক্ত (টপ রেটেড) ফ্রিল্যান্সার সুমন সাহা বললেন, ‘সংবাদমাধ্যমের সংবাদ-শিরোনামে দেখে আয়ের অঙ্কটা আমরা বড় করে দেখি, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির ফ্রিল্যান্সিংয়ে যাঁরা সফল, তাঁদের সফলতার পেছনে কত শ্রম, কত কষ্টের ইতিহাস লুকিয়ে আছে, তা আমরা দেখি না বা বোঝার চেষ্টা করি না। একজন ফ্রিল্যান্সার রাত-দিন এক করে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। তাঁর কষ্টের কাহিনি তিনিই জানেন। সেই গল্পও আমরা মাঝে মাঝে পড়ি সংবাদপত্রে। তাই এই কাজে এলেই যে হাজার হাজার ডলার আয় হবে, তা নয়।’

আরও পড়ুন

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সুমন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তাই ইংরেজি ভাষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর আপনি কোন ক্ষেত্র বা ক্যাটাগরিতে কাজ করতে চান, সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মার্কেটপ্লেসগুলো নিয়ে কিছুটা গবেষণা ও স্বচ্ছ ধারণা পেতে হবে। অর্থাৎ কেমন কাজ আছে, চলতি ধারাটা কী, কোন কোন বিষয় জানলে কাজ পাওয়া সহজ, এগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা প্রয়োজন। এরপর নির্দিষ্ট এক বা একাধিক বিষয়ে দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন। সেটা হতে পারে ডিজিটাল বিপণন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, এসইও ইত্যাদি। কাজ পাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহকের নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করে পাঠাতে হবে। মনে রাখা জরুরি, এখানে আপনার দক্ষতার সঙ্গে যদি কাজের প্রতি একাগ্রতার সমন্বয় না ঘটে তবে মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকা কষ্টকর। সে জন্য গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ, মার্কেটপ্লেসের নিয়মনীতি ইত্যাদি নিয়ে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের অর্থ পেতে খুব একটা সমস্যা হয় না বলে জানালেন সুমন সাহা। তিনি বলেন, ‘মার্কেটপ্লেসে আপনার জমানো টাকার নিরাপত্তা তারাই দেবে। তাই টাকা উত্তোলনের বিষয়ে প্রথমেই কৌতূহলী না হয়ে নিজের দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেকোনো সময় চাইলেই আপনার নিজের ব্যাংক হিসাবে অর্থ আনতে পারবেন।'

এখন দিন যত যাচ্ছে, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কাজের বাজারে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক দেশের তরুণেরা কাজ করছেন। সুমনা সাহা বলেন, ‘সফল হতে হলে পরিশ্রম, একাগ্রচিত্তে লেগে থাকার বিকল্প নেই। নিজেকে কখনো ছোট বা আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, এমনটা কখনো ভাবা যাবে না। এই হীনম্মন্যতা আপনাকে পিছিয়ে দেবে। নিজের দোষগুলো বের করার চেষ্টা করতে হবে। লেগে থাকুন আর নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে শিখুন।’

আরও পড়ুন