৫০টির বেশি ই-কমার্স উদ্যোগ গড়ে দিয়েছেন নাজমুল
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক এবং উন্নয়নশিক্ষায় স্নাতকোত্তর করা নাজমুল হোসেনের শিক্ষাজীবন ছিল বিজ্ঞান ও সমাজভাবনার এক অসাধারণ সংমিশ্রণ। ২০১৪ সালে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। ২০১৫ সালে ঢাকায় এসে ডিজিটাল বিপণন পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন এমন এক পেশাজীবন, যা অনেক তরুণের অনুপ্রেরণার উৎস।
২০০৭ সালে একটি ধার করা মডেম দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন নাজমুল হোসেন । ২০১৩-১৫ সালে ছিলেন আপওয়ার্কের শুভেচ্ছাদূত। ২০১৪ সালে বেসিসের দেশসেরা ‘বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন তিনি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘ইল্যান্স ওডেস্ক অ্যানুয়াল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’–এ উঠে আসে তাঁর গল্প। ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন দ্য টার্টেলস টার্ন, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স বিজনেস নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এমন একটি ইকোসিস্টেম, যা দেশের ই-কমার্স খাতের মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্য টার্টেলস টার্ন এখন শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, একটি আন্দোলন। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে ২০ হাজারের বেশি দক্ষ ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও কর্মী তৈরি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান শুধু প্রশিক্ষণ নয়, ফেসবুক অ্যাড অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং মেন্টরশিপসহ হাতে-কলমে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা দিয়ে উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’
বাংলাদেশের অন্যতম বড় ই-শপ ‘আলফাইশপ’-এর পেছনের কারিগরও নাজমুল হোসেন। দেশের ৫০টির বেশি ই-কমার্স ব্র্যান্ডের গল্পে তাঁর ছোঁয়া আছে। ইলেকট্রনিকস, ফ্যাশন, ফুটওয়্যার থেকে শুরু করে বিউটি কেয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত তাঁর সফলতার পরিধি।
নাজমুল হোসেন বাংলাদেশ ও নেপালের প্রান্তিক নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রেশিয়া বায়োকেয়ারস’ নামের একটি কমিউনিটি–নির্ভর স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড, যেটা নারীর ক্ষমতায়নের এক বাস্তব উদাহরণ।
নাজমুল হোসেনের পরবর্তী লক্ষ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুই খাত—পোশাক ও জুতাশিল্পকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশীয় প্রযুক্তি, দক্ষতা ও ডিজিটাল বিপণনের সমন্বয়ে এই খাত দুটি হতে পারে দেশের ‘এক্সপোর্ট সুপারস্টার’। সেই যাত্রায় ‘দ্য টার্টেলস টার্ন’ হবে গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার।
বর্তমানে নাজমুলের নতুন ই-কমার্স ব্যবসা হলো ফ্রেশিয়া বায়োকেয়ারস। নাজমুল ই-কমার্স পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্য টার্টেলস টার্নের প্রায় অর্ধশত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন ৫০ তরুণ। নাজমুলের বাবা মনোয়ার হোসেন একজন পুরকৌশলী ও মা নাজনীন সুলতানা গৃহিণী। স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। তাঁদের দুই ছেলে–মেয়ে—মাহানা হোসেন (১৩ বছর) ও আজমান হোসেন (৬ বছর)।