ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন নিয়ে নির্দেশিকা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দ্রুত ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে। এখন কম্পিউটার নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞান ও জ্ঞানবিষয়ক গবেষণা সংস্থা জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার (জেআরসি) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইনের নতুন নির্দেশাবলি প্রকাশ করেছে। এই নির্দেশাবলিতে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষমতা বাড়াতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির কথা বলা হয়েছে।
এআই আইন ইউরোপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখবে। ইউরোপের বাজারে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে। জেআরসির চিফ রাইটার হেনরিক জাঙ্কলেভিটস বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচলিত নিয়ম মেনে চললেও এআইয়ের মাধ্যমে ডেটা পয়জনিং বা প্রতিহিংসামূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়া এড়াতে বা নতুন নতুন হুমকি ঠেকাতে সমাধান প্রয়োজন। আমাদের নির্দেশিকা এ ব্যাপারে সহায়ক হবে।’
জেআরসির ৪ পরামর্শনীতি
১. এআই আইনের লক্ষ্য হলো এআই প্রযুক্তিব্যবস্থা। এআই প্রযুক্তিব্যবস্থার কিছু অংশ এআই–সম্পর্কিত, কিন্তু অন্যান্য অংশ নয়। এআই মডেল এআই ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও পুরো ব্যবস্থা এটি নয়। এআই আইনের সাইবার সুরক্ষা পুরো এআই ব্যবস্থায় প্রযোজ্য হবে। অভ্যন্তরীণ এক বা একাধিক অংশে নয়।
২. এআই আইনের সুফল পেতে সাইবার সুরক্ষার ঝুঁকিগুলোর মূল্যায়ন প্রয়োজন। এআই সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্য বিবেচনা করে এই মূল্যায়ন পুরো এআই ব্যবস্থার সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কী করণীয়, তা আবশ্যকতা নির্ধারণ করবে।
৩. এআই ব্যবস্থা নিরাপদ করতে একীভূত ও ধারাবাহিক পদ্ধতি প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সফটওয়্যারের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ এবং এআইয়ের সমন্বয়ে ব্যবহার করা উচিত। পুরো ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
৪. এআই মডেল নিরাপদ করার জন্য প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ও পরিপক্বতার এআই প্রযুক্তি রয়েছে। সব এআই প্রযুক্তি উচ্চ ঝুঁকির ব্যবস্থায় বা সিস্টেমে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে মডেল পর্যায়ে এআইয়ের সীমাবদ্ধতা পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব নয়।
ওপরের চারটি নীতি এআই ব্যবস্থায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়। এগুলো সাইবার ঝুঁকির বিস্তারিত মূল্যায়ন করা ও বিভিন্ন স্তরে উপযুক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরে।
জাঙ্কলেভিটস বলেছেন, এআই প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একের পর এক নতুন পদ্ধতি আসছে। একটি একীভূত নিরাপত্তাকৌশল অনুসরণ করা হলে অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও এআই মডেল সুরক্ষায় সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশন বিশ্ব মান সংস্থাগুলোকে এআইয়ের জন্য সমন্বিত মান উন্নয়নের জন্য চলতি বছরের শুরুতেই অনুরোধ জানিয়েছিল। এই মানগুলো এআই আইনের প্রয়োজনীয়তা, সাইবার সুরক্ষা ইত্যাদির প্রযুক্তিগত সমাধান দেবে। জেআরসির প্রতিবেদন মান নির্ধারণের চলমান এই প্রক্রিয়াকে তথ্যবহুল করার এক উদ্যোগ।
লেখক: সাইবার নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ