আঁকিবুঁকির ডিজিটাল ক্যানভাস

গ্রাফিকস ট্যাবলেটেই এখন হাতে আঁকা যায়। পেন্সিল, রং–তুলির আবহ ফুটিয়ে তোলা যায় l ছবি: সুমন ইউসুফ
গ্রাফিকস ট্যাবলেটেই এখন হাতে আঁকা যায়। পেন্সিল, রং–তুলির আবহ ফুটিয়ে তোলা যায় l ছবি: সুমন ইউসুফ

আঁকাআঁকির জন্য অনেকের এখন পছন্দ গ্রাফিকস ট্যাবলেট। শখের কিংবা পেশাদার চিত্রশিল্পী অনেকে রং-তুলির কাজটি সারেন এই ডিজিটাল মাধ্যমে। ডিজিটাল চিত্রকলার জন্য প্রযুক্তিও এখন অনেক উন্নত। আর ছবি বা গ্রাফিকস ডিজাইন করার জন্য কার্যকর এক যন্ত্র হলো গ্রাফিকস ট্যাবলেট। ডিজিটাইজার, ড্রয়িং ট্যাবলেট বা ডিজিটাল আর্ট বোর্ড নামেও এটি পরিচিত।

২০০৯ সাল থেকে গ্রাফিকস ট্যাবলেট ব্যবহার করেন কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম। তন্ময় নামে পরিচিত এই শিল্পী বলছিলেন, ‘একসময় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে আঁকার বিষয়টা সায়েন্স ফিকশন মনে হতো। কখনো বাস্তবে এমনটা করা যাবে—ভাবতেই পারিনি। এখন নানা সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্রাফিকস ট্যাবলেট বাজারে পাওয়া যায়।’ তিনিই জানালেন, ট্যাবলেটের মাধ্যমে আঁকলে একদিকে যেমন সময় বাঁচে, আঁকাআঁকির ডিজিটাল সংরক্ষণ হয়; অন্যদিকে রং, তুলি কিংবা আর্ট পেপার নষ্ট বা শেষ হওয়ার ভয়ও থাকে না।

আঁকিবুঁকির কাজ ছাড়াও আরও নানা ধরনের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে গ্রাফিকস ট্যাবলেট। শিশুরা অ্যানিমি চরিত্র আঁকতে ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা থাকলে একজন শিক্ষক এটাকেই ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে ক্লাস নিতে পারেন। আলোকচিত্রীরা ছবি সম্পাদনার জন্যও এই ট্যাবলেট ব্যবহার করে থাকেন।

ডিজিটাল ছবি অাঁকার জন্য নানা রকম যন্ত্র আছে বাজারে
ডিজিটাল ছবি অাঁকার জন্য নানা রকম যন্ত্র আছে বাজারে

দিনে দিনে গ্রাফিকস ট্যাবলেটের কদর বাড়ছে বলে জানালেন সৈয়দ রাশাদ ইমাম। জনপ্রিয়তার কারণ হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিকস ডিজাইন বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ডিজিটাল আঁকাআঁকির বাজার বাড়ছে। কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাই দ্রুততম কাজের জন্য গ্রাফিকস ট্যাবলেটের ব্যবহারও বাড়ছে।

ব্যবহারের সুবিধা বিবেচনায় বাজারে তিন ধরনের গ্রাফিকস ট্যাবলেট রয়েছে বলে জানালেন প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কিংডমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এগুলো হলো পেন ট্যাবলেট, পেন ডিসপ্লে ও পেন কম্পিউটার। পেন ট্যাবলেট মূলত স্ক্রিনবিহীন ক্যানভাস। এটা কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করে যেকোনো আঁকাআঁকি বা নকশার কাজ করা হয়। পেন ডিসপ্লের সুবিধা হলো পুরো ক্যানভাসটাই আলাদা স্ক্রিন, তবে কাজ সংরক্ষণ করতে যন্ত্রটি কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হয়। আর পেন কম্পিউটার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র যন্ত্র, এখানে আঁকিবুঁকি করাসহ সংরক্ষণও করা যায়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘এখন আরও নানা সুবিধা নিয়ে গ্রাফিকস ট্যাবলেট বাজারে আসছে। এগুলো আঁকাআঁকির কাজের সঙ্গে দৈনন্দিন নানা কাজেই ব্যবহার করা যাবে।’

গ্রাফিকস ট্যাবলেটর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি পেন প্রেসার। আঁকাআঁকি নিখুঁত, দ্রুত করার ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

কত দাম, কোথায় পাব

শখের কিংবা পেশাদার আঁকিয়েদের জন্য বাজারে নানা ব্র্যান্ডের গ্রাফিকস ট্যাবলেট রয়েছে। তবে ওয়াকম, হুইন, এক্সপি পেন, আর্টিসুল, টুরকম, ইউজি ব্র্যান্ডের গ্রাফিকস ট্যাবলেট বেশি জনপ্রিয়। এগুলোর দাম নির্ভর করে ব্র্যান্ড, ধরন, আকারের ওপর। পেন ট্যাবলেটের দাম যেমন ৩ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। পেন ডিসপ্লে ৪০ হাজার থেকে ৩ লাখ, পেন কম্পিউটার ৭৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত।

তরুণ কার্টুনিস্ট জুনায়েদ আজিম চৌধুরী বলেন, ‘একসময় গ্রাফিকস ট্যাবলেট বেশ দামি ছিল। এখন দেশি আমদানিকারকদের জন্য অনেকটাই সুলভে পাওয়া যাচ্ছে। আপনি কতটা পেশাদার তাঁর ওপর নির্ভর করে কোন ট্যাবলেটটি আপনার প্রয়োজন।’

রাজধানীর বিসিএস কম্পিউটার সিটি, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টারসহ প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতা বিভিন্ন দোকানেই গ্রাফিকস ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এ দোকানগুলোতেই আলাদাভাবে গ্রাফিকস ট্যাবলেটের জন্য প্রয়োজনীয় পেন, নিবসহ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কিনতে পাওয়া যায়।