নির্বাচিত তিন নতুন উদ্যোগের কথা

অতিথি ও আয়োজকদের সঙ্গে স্ল্যাশ ২০১৭ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট এক্সিলারেটরের বাংলাদেশ পর্বের বিজয়ী উদ্যোক্তারা
অতিথি ও আয়োজকদের সঙ্গে স্ল্যাশ ২০১৭ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট এক্সিলারেটরের বাংলাদেশ পর্বের বিজয়ী উদ্যোক্তারা

স্ল্যাশ ২০১৭ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট এক্সিলারেটরের বাংলাদেশ পর্ব শেষ হয়েছে ৮ আগস্ট। এতে নির্বাচিত হয়েছে শীর্ষ তিন নতুন উদ্যোগ। উদ্যোগগুলো হলো যথাক্রমে সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং, বাইনো অ্যাপ ও জলপাই ইলেকট্রনিকস। এই তিন বিজয়ী উদ্যোগের সদস্যরা স্ল্যাশের বিচারকদের কাছে নিজের উদ্যোগকে তুলে ধরবেন। তারপর চূড়ান্ত করা হবে এ বছরের শেষের দিকে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় স্ল্যাশের মূল পর্বে এদের মধ্য থেকে কারা অংশ নেবে। যারা অংশ নেবে তারা মূল পর্বে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের সামনে নিজেদের উদ্যোগ তুলে ধরবেন। বিনিয়োগকারীদের কোনো উদ্যোগ পছন্দ হলে তাতে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগ (স্টার্টআপ) নিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় আয়োজন এটি। গত বছর থেকে বাংলাদেশে প্রতিযোগিতাটির আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের বাংলাদেশ পর্বে ১১৩টি স্টার্টআপের আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছিল ৩৮টি উদ্যোগকে। ৫ আগস্ট এই ৩৮টি উদ্যোগ নিয়ে চলে বিচারকাজ। আর সবশেষে ৮ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এমসিসি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম-ল্যাব বাংলাদেশে এই আয়োজন করে। সহায়তা করেছে হোয়াইট বোর্ড। শীর্ষ তিন উদ্যোগের কথা লিখেছেন এস এম নজিবুল্লাহ চৌধুরী

সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং

‘আমাদের ধারণাটা নতুন তা নয়, তবে আমরা যেটি করার চেষ্টা করছি সেটা হলো বায়োগ্যাস প্ল্যান্টকে সহজলভ্য করা।’ বলছিলেন সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিলয় দাশ। এরপর ব্যাপারটা পরিষ্কারও করলেন, কয়েক বছর আগে থেকেই স্বল্প খরচে জ্বালানি সমস্যার সমাধান করার কাজ করছিল সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য শুরুতেই স্বল্পমূল্যের স্টার্লিং ইঞ্জিন তৈরি করার চেষ্টা করে। তবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।

এরপর তারা কাজ শুরু করে বহনযোগ্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নিয়ে। আর এ ধারণার জন্যই স্ল্যাশের বাংলাদেশ পর্বে সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছে সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং। তাদের এই প্রকল্পে ব্যতিক্রম কী আছে? জানতে চাইলে নিলয় দাশ বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু উচ্চমূল্য এবং জটিল ব্যবহারবিধির কারণে তা জনপ্রিয় হয়নি। আমাদের উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মূল্য অনেক কম।’ এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের কাছে সবুজ জ্বালানি পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।

এই উদ্যোগ যখন শুরু করেন তাঁরা, তখন পানির জারে গোবর আর পানি মিশিয়ে গ্যাস তৈরির চেষ্টা চালান। এরপর আস্তে আস্তে বহনযোগ্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের উন্নত সংস্করণ করার কাজ চালিয়ে যান। এ জন্য নাকি ঢাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন দোকান ও ওয়ার্কশপে কাজ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। তাঁদের বর্তমান বায়োগ্যাস ডাইজেস্টারটি পলিথিনের। যা দেখতে অনেকটা বড় বেলুনের মতো।

উদ্যোগটির জন্য ২০১৬ সালে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের পক্ষ থেকে ফেলোশিপও পেয়েছেন পান নিলয় দাশ। এর অংশ হিসেবে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমায় পাঁচ সপ্তাহের প্রফেশনাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেন তিনি।

বাইনো

মাইক্রোটেক ইন্টার‍্যাকটিভের ‘বাইনো’ অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির অ্যাপ। ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেটেড উদাহরণের মাধ্যমে বাচ্চারা এতে বর্ণমালা শিখতে পারবে। শিশুরা যাতে আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে, এ জন্য অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসনুন কিবরীয়া। বলছিলেন, ‘দিন দিন প্রযুক্তিপণ্যের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়ছে। তাই এমন অ্যাপ বানানো।’ পুরো প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন প্রযুক্তির আওতায় আনতে চান তাঁরা। অ্যাপটি যে শুধু শিশুদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়। এতে নানান বিষয় যুক্ত করার কাজ চলছে। ফলে এই অ্যাপ ব্যবহার করে পদার্থ, জীববিজ্ঞান, রসায়নের মতো বিষয়সহ নানা বিষয়ে অনুশীলন করা যাবে। এই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাপটি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-২০১৭-এ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে এই অ্যাপ। স্ল্যাশে লক্ষ্য কী জানতে চাইলে মাসনুন কিবরীয়া বলেন, যদি মূল পর্বে যেতে পারি তাহলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করব। পাশাপাশি অর্থ জোগাড় করার লক্ষ্য তো থাকবেই। সবশেষে বলছিলেন, শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করাই মূল লক্ষ্য। গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি নামানোর ঠিকানা: https://goo.gl/kR1RsT

জলপাই ইলেকট্রনিকস

স্নিফার নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেছে জলপাই ইলেকট্রনিকস। এটি গ্যাস লিকেজজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক করে। কীভাবে কাজ করে যন্ত্রটি? প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল কবির বললেন, এর মধ্যে একটি শক্তিশালী সেন্সর রয়েছে। যা সার্বক্ষণিক গ্যাসের গন্ধ শুঁকতে থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্যাসের উপস্থিতি টের পেলেই সংকেত দিয়ে থাকে।

তিনি জানান, মূলত রান্নাঘরে ব্যবহারের কথা বিবেচনা করেই বানানো হয়েছে যন্ত্রটি। তাই এটি রান্নাঘরে ব্যবহার করলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। যন্ত্রটি সংযুক্ত করতে হবে রান্নাঘরের চুলার বিপরীতে থাকা দেয়ালে অথবা পাশের দেয়ালে। আর তা অবশ্যই মেঝে থেকে ছয়-সাত ফুট ওপরে। স্নিফার বর্তমানে বাজারে রয়েছে। এমন উদ্যোগের জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছে জলপাই ইলেকট্রনিকস। www.jolpi.io এই ওয়েবসাইটে জানা যাবে যন্ত্রটির ব্যাপারে।