ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ফল ইতিবাচক: ইনোভিও

ইনোভিও ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ছবি: রয়টার্স
ইনোভিও ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারি সমস্যার জরুরি সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ। এর মধ্যে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ছোট আকারের একটি পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ার দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ছোট বায়োটেক কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালের গবেষকেরা।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষকেরা বলেছেন, তাঁদের ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় ৩৬ জনের মধ্যে ৩৪ জনের শরীরের ইতিবাচক প্রতিরোধী সক্ষমতা ‘ইমিউনোলজিক্যাল রেসপন্স রেটস’ পাওয়া গেছে।

করোনা মহামারি শুরুর দিকেই ভ্যাকসিন তৈরি করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসে ইনোভিও। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়ে মূল্যমান হিসাবে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার যুক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ইনোভিও তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষার ইতিবাচক ফল জানালেও ভ্যাকসিনটি কার্যকর কি না, এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে কত রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা জানানো হয়নি। করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে কি না, এ তথ্য সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট স্ট্যাট নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইনোভিও নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডিকে গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়টি একটি গবেষণার দিকে ইঙ্গিত করে, যাতে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তির রক্তে শনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় না।

ন্যাশভিলের ভ্যান্ডারবিল্ট ভ্যাকসিন রিসার্চ প্রোগ্রামের বৈজ্ঞানিক পরিচালক ক্যাথরিন এডওয়ার্ডস বলেন, ইনোভিওর ভ্যাকসিন পরবর্তী পরীক্ষার জন্য নিরাপদ মনে হচ্ছে। তবে রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকারিতার আরও বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া গেলে এটি উপকারী কি না, তা বলা মুশকিল।

করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে ভ্যাকসিন তৈরির পরিকল্পনার কথা জানালে ইনোভিওর শেয়ারের দাম ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। তখনো কোনো ক্লিনিক্যাল তথ্য প্রকাশ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ বছরে প্রতিষ্ঠানটির মূল্য ছিল ৩০ কোটি ডলার, যা এখন বেড়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল ভ্যাকসিনের ফল ঘোষণার পরপর তাদের শেয়ারের দাম ১৩ শতাংশ কমে গেছে।

করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরির ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছে। এসব ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তথ্য বিস্তারিত জানানো হয় না। গত মাসেই ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ভ্যাকসিনের বিস্তারিত ফল প্রকাশ না করে সমালোচনার মুখে পড়ে।

গত ১৮ মে মডার্না তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফাউসি মডার্নার ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ফলাফল ‘খুব আশাব্যঞ্জক’ বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি স্ট্যাট নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে তাদের তথ্য প্রকাশ করেছে, তা তাঁর পছন্দ হয়নি।

ফাউসি গত সোমবার স্ট্যাট নিউজ প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডির দৃষ্টিকোণ থেকে সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য খুব আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে। তবে তারা পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না করে যেভাবে আগেভাগে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে, সেটি আমার পছন্দ হয়নি।’

মডার্নার সমালোচনা করে ফাউসি বলেন, সংস্থাটি ইতিবাচক তথ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল এবং আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা না করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

ভ্যাকসিনের ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে মডার্না অবশ্য কত রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, তা প্রকাশ করেছিল। মডার্না ও ইনোভিও অবশ্য মেডিকেল সাময়িকীতে তাদের পিয়ার-রিভিউড তথ্য প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইনোভিওর ভ্যাকসিন মূলত সিনথেটিক ডিএনএ ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমে দেওয়া হয়, যাতে সুরক্ষিত অ্যান্টিবডির জন্য বিশেষ কোড থাকে। এ প্রযুক্তি ফিলাডেলফিয়ার উইস্টার ইনস্টিটিউটের ডেভিড ওয়েনার পরীক্ষাগারে উন্নয়ন করা হয়। মডার্নার মতো ইনোভিও পদ্ধতিতে কোনো ভাইরাস যুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। এতে দ্রুত ও কম খরচে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায়।

ইনোভিও জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রকদের অনুমতির পর তারা এবারের গ্রীষ্মে আরও বড় আকারে ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছে।