টেসলাসহ অন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কেন

বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছেরয়টার্স

টেসলা, ভক্সওয়াগন, ফোর্ডসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি তৈরির জন্য সাধারণত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের খনি থেকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু খনি থেকে খনিজ পদার্থ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও সেগুলো উপেক্ষা করে খনিজ সংগ্রহ করছে বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাজ্যের বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার (বিএইচআরআরসি) বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০১০ সাল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারি ও নবায়নযোগ্য শক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ সংগ্রহের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৬৩১টি অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে সংস্থাটি।

বিএইচআরআরসির বিশ্লেষক ক্যারোলিন আভান জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পে বক্সাইট, কোবাল্ট, তামা, লিথিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল ও জিংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব খনিজ পদার্থ আহরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তেমন আলোচনা হয় না। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশনের (সবুজ পরিবহন) প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে এই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাঁচামালের উত্সস্থলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানবাধিকারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। খনির কার্যক্রমে মানবাধিকার উপেক্ষা করা হচ্ছে। একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য সাধারণ গ্যাসের গাড়ির তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি খনিজ পদার্থ প্রয়োজন হয়। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যমতে, ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারিতে ব্যবহৃত খনিজের চাহিদা ১০ গুণ বাড়তে পারে। যত চাহিদা বাড়বে, ততই মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়বে। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ও শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টিও উপেক্ষা করা হচ্ছে। শুধু মানবাধিকার নয়, এসব খনির কারণে সুপেয় পানির উৎস ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

আরও পড়ুন

২০১০ সাল থেকে খনিজ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না মিনমেটালস ও সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লেনকোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের পরও ২০১৭ সালে গ্লেনকোর ও ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কনটেমপোরারি অ্যাম্পেরেক্স টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি করেছে ভক্সওয়াগন। শুধু তা-ই নয়, ২০২৩ সালে ভক্সওয়াগনের ব্যাটারি বিভাগ ব্রাজিল থেকে নিকেল ও তামা কেনার জন্য গ্লেনকোর সঙ্গে চুক্তি করেছে।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত গ্লেনকোর খনি থেকে নিকেল ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর খনি থেকে কোবাল্ট কিনছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টেসলা। ২০২২ সালে কঙ্গোর কোবাল্ট খনিতে শ্রমিকদের সুপেয় পানির সুবিধা ছিল না। খনিটিতে সামান্য খাবার বা বেতন ছাড়াই অনিরাপদ কাজে শ্রমিকেরা বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোবাল্ট সংগ্রহের সময় শ্রমিকের মৃত্যুর হার বেশি। শুধু পরিবেশগত ঝুঁকি নয়, এসব সহযোগী সংস্থা মানবিক বিপর্যয় করছে বলে ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণশিল্পে নানাবিধ সংকট তৈরি হতে পারে।

সূত্র: দ্য ভার্জ

আরও পড়ুন