ফিক্সড ব্রডব্যান্ডশিল্পে বৈষম্য

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটপ্রতীকী ছবি

স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সবার কণ্ঠকে এক করে তুলেছিল, সরকারও নত হয়েছিল সেই সম্মিলিত চাপে। অথচ আজ ২০২৫ সালের বাংলাদেশে আমরা ফিক্সড ব্রডব্যান্ডশিল্পের উদ্যোক্তারা এখনো বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এক টেবিলে বসাতে পারিনি। আমাদের বাস্তবতা, আমাদের বৈষম্য, যেন কেউ শুনতে চায় না।

আজ এই খাতের কিছু দগদগে বৈষম্য তুলে ধরছি, শুধু এই আশায়, কোনো একদিন হয়তো এই খাতের প্রতিও দৃষ্টি যাবে নীতিনির্ধারকদের।

দাম নির্ধারণে দ্বৈতনীতি

সেলুলার (মোবাইল) অপারেটরদের ট্যারিফে বিটিআরসি নির্ধারণ করেছে ‘ফ্লোর’ ও ‘সিলিং প্রাইস’। এর ফলে তারা একদিকে বিনিয়োগ সুরক্ষার নিশ্চয়তা পায়, অন্যদিকে প্রান্তিক জনগণও ন্যায্য মূল্যে সেবা পায়। অথচ ফিক্সড ব্রডব্যান্ড অপারেটরদের ক্ষেত্রে শুধু সিলিং প্রাইস নির্ধারিত, ফ্লোর প্রাইস নেই। ফলে একে অপরের সঙ্গে দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে কোম্পানিগুলো আস্তে আস্তে মুখ থুবড়ে পড়ছে। দেশের আনুমানিক ২ হাজার ২০০ ফিক্সড ব্রডব্যান্ড অপারেটরের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

ব্যান্ডউইডথের দামে বৈষম্য

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার প্রায় ৭ দশমিক ৮ টিবিপিএস (টেরাবিট পার সেকেন্ড)। মোবাইল কোম্পানিগুলো ১১ দশমিক ৫ কোটি গ্রাহকের জন্য ২ দশমিক ৩ টিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে। অপর দিকে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড অপারেটররা ১ দশমিক ৪ কোটি গ্রাহকের জন্য ব্যবহার করে ৫ দশমিক ৫ টিবিপিএস! তবু ফিক্সড অপারেটরদের এমবিপিএস প্রতি ২৬৫ টাকায় ব্যান্ডউইডথ কিনতে বাধ্য করা হয়, যেখানে টেলিকম অপারেটররা ইচ্ছেমতো দামে কিনতে পারে।

রেভিনিউ শেয়ারে অসমতা

ফিক্সড ও মোবাইল—উভয় খাতই আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে থাকে। তবে এখানেও বৈষম্য রয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর রেভিনিউ শেয়ারে কোনো ভ্যাট প্রযোজ্য হয় না, অথচ অন্য অপারেটরদের এই রেভিনিউ শেয়ারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এ কেমন বৈষম্য?

অ্যাকটিভ শেয়ারিংয়ের অনুমতি না থাকা

ফিক্সড ব্রডব্যান্ড অপারেটরদের এখনো অ্যাকটিভ শেয়ারিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে শহরজুড়ে তারের জঞ্জাল (ওভারহেড কেব্‌ল) বাড়ছে, মানহীন সেবা বাড়ছে আর বিনিয়োগের চাপ অপারেটরদের দমিয়ে ফেলছে। অথচ অ্যাকটিভ শেয়ারিং চালু হলেই কাঙ্ক্ষিত গুণগত সেবা দেওয়া সহজ হতো এবং নগর দৃশ্য অনেকটাই পরিচ্ছন্ন থাকত।

মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম: সভাপতি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।