যুক্তরাজ্যে ব্যবসার ঝুঁকি নিয়েই ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা প্রশ্নে অনড় হোয়াটসঅ্যাপ
যুক্তরাজ্য সরকারের দাবি মেনে বার্তা আদান-প্রদানে ‘এন্ড-টু-এন্ড এনস্ক্রিপশন’–এ কোনো ধরনের আপস করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান–প্রদান ও ইন্টারনেটে ফোনকল করার জনপ্রিয় অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। এর ফলে যুক্তরাজ্যে অ্যাপটির ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে হওয়া নতুন অনলাইন সেফটি বিলে বার্তা আদান-প্রদানে নিরাপত্তা কমানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা সরকারি কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে এমন দাবি হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইল ক্যাথকার্ট মানতে নারাজ। এর আগে আরেক অ্যাপ সিগন্যালও যুক্তরাজ্যের এমন দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপও সেই পথে হাঁটল।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ক্যাথকার্টকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইন সেফটি বিলের আওতায় এনক্রিপটেড বার্তার গোপনীয়তায় আপস করতে বলা হলে, দেশটিতে হোয়াটসঅ্যাপ সেবা বন্ধ থাকবে।’
ক্যাথকার্ট বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা চায়। ব্যবহারকারীদের ৯৮ শতাংশ যুক্তরাজ্যের বাইরের। তাঁরা আমাদের কাছে নিরাপত্তা কমানোর কথা বলেন না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি ইরানে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উদার গণতন্ত্রে আমরা কখনো তা করতে দেখিনি।’
সিগন্যালের পথেই হাঁটল হোয়াটসঅ্যাপ
কয়েক সপ্তাহ আগে সিগন্যালও বলেছে, যুক্তরাজ্যের ওই নিরাপত্তা বিলের আওতায় যদি ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা কর্তৃপক্ষ দেখতে চায়, তবে দেশটিতে এই পরিষেবা বন্ধ করা হতে পারে। সিগন্যালের প্রেসিডেন্ট মেরেডিথ হুইটেকার এক টুইটার বার্তায় উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাজ্যের মানুষ যাতে সিগন্যাল ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য করণীয় সব করবে প্রতিষ্ঠানটি।
মেরেডিথের এই টুইটের রিটুইট করে ক্যাথকার্ট একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্যের সৃষ্ট উদাহরণ হয়তো অন্য দেশও অনুসরণ করবে, এমন শঙ্কা জানিয়ে ক্যাথকার্ট বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা কমাতে চাই না আমরা। কখনোই আমরা তা করিনি। বিশ্বের কোনো কোনো অংশে আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছি। যখন একটি উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলে অবৈধ বিষয়বস্তুর কারণে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত যোগাযোগ নজরদারি করা হবে, তা কি ঠিক? এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও যোগাযোগে নজরদারিতে উৎসাহিত করবে, যাদের অবৈধ বিষয়বস্তুর ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে।
কী বলা হয়েছে অনলাইন সেফটি বিলে
যুক্তরাজ্যের যোগাযোগনিয়ন্ত্রক সংস্থা যোগাযোগ অফিস বা অফকম দেশটির অনলাইন সেফটি বিল অনুমোদন করেছে। এই বিলে ব্যক্তিগত এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ এবং অন্য পরিষেবাগুলোকে শিশু নির্যাতনের আধেয় (কনটেন্ট) শনাক্ত এবং মুছে ফেলতে অনুমোদিত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছে। যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, এনক্রিপশন পদ্ধতিতে পাঠানো মেসেজ স্বয়ং প্রতিষ্ঠানগুলোই দেখতে পারে না। আর এটিই শিশু নির্যাতন সমস্যা মোকাবিলায় বাধা হয়ে আছে।
যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলেছে, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের প্ল্যাটফর্ম যেন শিশু নিপীড়নকারীদের বড় ক্ষেত্র না হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। দেশটির সরকার এটাও বলছে, গোপনীয়তা ও শিশু সুরক্ষা—একসঙ্গে রক্ষা করা সম্ভব। যদিও সিগন্যালের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা পর্যবেক্ষণ অপরাধ। এ ছাড়া যোগাযোগে গোপনীয়তা এবং পর্যবেক্ষণ একসঙ্গে হয় না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া