ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর মারা গেছেন

গর্ডন মুর (৩ জানুয়ারি ১৯২৯-২৪ মার্চ ২০২৩)
ছবি: ইন্টেল

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির অন্যতম দিকপাল ও সমাজসেবী গর্ডন মুর গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে ৯৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ১৯৫০-এর দশকে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চালু করেন ইন্টেল করপোরেশন। ইন্টেল এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাইক্রোপ্রসেসর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।

কম্পিউটারের তথ্য প্রক্রিয়া করার (প্রসেসিং) ক্ষমতা প্রতিবছরে দ্বিগুণ হবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেন গর্ডন মুর, যা ‘মুরের সূত্র (মুর’স ল)’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে এ ভবিষ্যদ্বাণী কম্পিউটারের প্রসেসর শিল্পের ভিত্তি হয়ে ওঠে এবং কম্পিউটার বিপ্লবের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) হোম কম্পিউটার, অটোমোবাইলের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ও বহনযোগ্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ সরঞ্জামের নেতৃত্ব দেবে। কম্পিউটার বিপ্লব শুরুর দুই দশক আগে মুর একটি গবেষণা নিবন্ধে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন গর্ডন মুর। আইসি উদ্ভাবনের ফলে প্রতিবছর মাইক্রোচিপে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়। গবেষণা নিবন্ধটিতে তিনি তাঁর এ পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন। তাঁর এ ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তী সময়ে মুরের সূত্র নামে পরিচিতি লাভ করে।

মুরের ওই নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর আরও কর্মক্ষম মেমোরি চিপ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি এগুলোর ব্যয়ও কমে আসে। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরিতে যুক্ত হন মুর। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে ট্রানজিস্টর ও আইসি উৎপাদন করত। এ প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারিত কার্যক্রম আজকের সিলিকন ভ্যালির ভিত্তি তৈরি করেছিল।

১৯৬৮ সালে মুর ও রবার্ট নয়েস ফেয়ারচাইল্ড ছেড়ে ইন্টেল প্রতিষ্ঠাতা করেন। বিশ্বের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে গর্ডন মুরের কাজের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এ ছাড়াও পার্সোনাল কম্পিউটার ও অ্যাপল এবং ফেসবুক ও গুগলের আবির্ভাবেও তাঁর কাজের অবদান অনস্বীকার্য।

২০০৮ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গর্ডন মুর বলেন, ‘আমি যা কিছু করার চেষ্টা করেছি, তার মূল বার্তা এটাই যে চিপ নিয়ে আমরা যত বেশি কাজ করব, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম ততই কমবে।’ ইন্টেল করপোরেশন গর্ডন মুরের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি টুইট বার্তা লিখেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা একজন স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারালাম’।
প্রযুক্তিগত কাজের পাশাপাশি সমাজসেবায়ও যুক্ত ছিলেন মুর। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছ থেকে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি ‘মেডেল অব ফ্রিডম’ গ্রহণ করেন গর্ডন মুর।

সূত্র: বিবিসি