ফরিদদের তৈরি রোবট ঘরে-বাইরে কাজ করতে পারে

নিজেদের তৈরি রোবা রোবটের সঙ্গে বাঁ থেকে মো. ফরিদ হোসেন, মো. রনি হোসেন এবং ইকবাল মাহমুদ।সংগৃহীত

বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে দেওয়া, ছুরি দিয়ে সবজি কাটা—ঘরের এসব কাজ একা একাই করতে পারে ‘রোবা’ নামের এক রোবট। মানুষের মতো দেখতে (হিউম্যানয়েড) এ রোবট তৈরি করেছেন রাজধানীর গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফরিদ হোসেন। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী মো. রনি হোসেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ের ছাত্র ইকবাল মাহমুদ।

আরও পড়ুন
বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢালছে রোবা
সংগৃহীত

এ রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি মানুষের চেহারা শনাক্ত করতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। রোবা রোবট বোর্ডে মার্কার হাতে নিয়ে ইংরেজি ও বাংলা বর্ণমালা লিখতে পারে। চলার পথে বাধা এলে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম এ রোবট গাণিতিক হিসাব-নিকাশেও বেশ দক্ষ।
রোবা রোবটের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হচ্ছে, এটি চালাতে ব্যবহারকারী তাঁর চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করে নিতে পারবেন। মো. ফরিদ বলেন, ‘রোবা বানাতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। তখন আমি ও আমার দুই বন্ধু ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র।’

আরও পড়ুন
রডও কাটতে পারে রোবা
সংগৃহীত

রোবার গঠন

রোবার পুরো শরীর তৈরি করা হয়েছে ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রিন্টারে। ফলে দেখতেও বেশ সুন্দর। স্বচ্ছন্দে হাত নাড়ানোর জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে হাই টর্ক সার্ভো মোটর। দুটি হাতেই চারটি করে আঙুল থাকায় হাতের সাহায্যে যেকোনো বস্তু ভালোভাবে ধরা যায়। আশপাশের ছবি ধারণ করে নিরাপদে চলাচলের জন্য রোবটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে থ্রিডি ক্যামেরা এবং বাধা শনাক্ত করার সেন্সর।

যেসব কাজ করতে পারে রোবা

স্পিকার ও মাইক্রোফোন থাকায় আশপাশের মানুষের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে রোবা। প্রশ্ন বুঝে উত্তরও দিতে পারে। এ জন্য রোবার তথ্যভান্ডারে প্রচুর তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। সামনে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় চোখ বা মাথা নড়াচড়া করে ২১ ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে রোবটটি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে রোবা। ত্রিমাত্রিক ক্যামেরা থাকায় জায়গার অবস্থান বলে দিলে তা খুঁজে বের করতে পারে এটি। রোবাকে পানি আনতে বললে রান্নাঘর বা খাবার টেবিল খুঁজে পানি নিয়ে আসে।
অতিথি এলে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে পারে রোবটটি। পাশাপাশি করমর্দন বা সালাম দিয়ে নিজ থেকেই পরিচিত হয়। গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনও করতে পারে এটি।

আরও পড়ুন

নির্মাতাদের কথা

রোবার নির্মাতাদের দলনেতা মো. ফরিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রোবটের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তখন থেকে নিজে রোবট তৈরির স্বপ্ন দেখি। এরপর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই। ২০১৬ সালে চতুর্থ সেমিস্টারে উঠে প্রথম মানুষের আদলে রোবট তৈরি করি, যার নাম ছিল ব্যাংরো।’ এরপর ২০১৮ সালে টিভেট, ২০১৯ সালে ডিগ্রো ওয়্যারহাউস রোবট এবং ২০২০ সালে সুরুচি কুকিং রোবট তৈরি করেন ফরিদ হোসেন। সম্প্রতি তৈরি করেছেন রোবা।
ফরিদ হোসেন বলেন, ‘প্রথম থেকেই দৈনন্দিন কাজ করতে সক্ষম রোবট তৈরির চেষ্টা করেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরি করা, যা বিশ্বমানের রোবটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বাচ্চারা যেভাবে শেখে, ঠিক একইভাবে রোবাও একটু একটু করে শিখতে পারে। রোবা তৈরিতে প্রায় ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। রোবট তৈরির জন্য সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কাছ থেকে ২০২০ সালে আমরা ২০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। ২০১৮ সাল থেকে আইডিইবি আইওটি এবং রোবোটিক্স রিসার্চ ল্যাব সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ’
চার ফুট উচ্চতার এ রোবট বাসাবাড়ির টুকটাক কাজে তো ব্যবহার করা যাবেই, পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, হোটেল কিংবা হাসপাতালেও এটি ব্যবহার করা যাবে। বিশেষ করে অভ্যর্থনাকক্ষে গ্রাহকদের নানা রকম তথ্য জানাতে পারবে।

আরও পড়ুন