দেশে প্রথম সফটওয়্যার মেলার আয়োজন

দেশের প্রথম সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।

একসঙ্গে ফিতা কেটে বিসিএস সফটওয়্যার এক্সপো ২০০০ উদ্বোধন। (ডান থেকে) শাহ এ এম এস কিবরিয়া, তোফায়েল আহমেদ, জামিলুর রেজা চৌধুরী ও আবদুল্লাহ এইচ কাফি‘আবর্ত: এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা’ বই থেকে নেওয়া

৩ আগস্ট ২০০০
দেশের প্রথম সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করল বিসিএস
দেশে প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। ‘বিসিএস সফটওয়্যার এক্সপো’ নামে এই মেলা ঢাকার শেরাটন হোটেলে (বর্তমানে ইন্টারকনটিনেন্টাল, ঢাকা) ২০০০ সালের ৩ থেকে ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এর আগে বিসিএসের আয়োজনে কম্পিউটার শো নামে কম্পিউটার যন্ত্রের প্রদর্শনী বা মেলা হলেও সফটওয়্যার নিয়ে মেলা এই প্রথম।
এই মেলার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির তখনকার সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফী প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএস অনেক আগে থেকেই কম্পিউটার মেলা করে আসছে, যা ছিল মূলত যন্ত্র বা হার্ডওয়্যারনির্ভর। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কমডেক্সসহ বিদেশের বেশ কিছু মেলা দেশে মনে হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটা পরিবর্তন আসছে। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের বিকাশ ঘটছে।

বিসিএস সফটওয়্যার এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন এস এম কামাল।
‘আবর্ত: এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা’ বই থেকে নেওয়া

১৯৯৮–৯৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে কম্পিউটারের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দেশে কম্পিউটারের প্রসার ঘটতে থাকে। শুল্ক ও করমুক্ত কম্পিউটারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সফটওয়্যার রপ্তানি করা। আবদুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম সবাই সফটওয়্যার বিষয়টি জানুক। তখন সবে বেসিস (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) গড়ে উঠছে বিসিএসের সদস্যরাই বেসিসের সদস্য। বিসিএসের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এস এম কামাল তখন বেসিসের সভাপতি। তাঁকে বললাম, কম্পিউটার দিয়ে কী কী কাজ হয়, তা তো সাধারণ মানুষ ও সরকারকে জানানো প্রয়োজন। বিসিএস থেকে এমন একটা মেলা করা যায়।’ এভাবেই বিসিএস প্রথম সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে।

এই মেলায় দেশের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছিল। বর্তমানে বেসিস নিয়মিতভাবে সফটএক্সপো নামে সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে থাকে।

টিআরএস–৮০ মডেল–১
কম্পিউটার হিস্ট্রি ডটওআরজি

৩ আগস্ট ১৯৭৭
রেডিও শ্যাকের প্রথম কম্পিউটার
যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা রেডিও শ্যাক তাদের প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটারের ঘোষণা দেয়। ‘টিআরএস–৮০ মডেল–১’ নামের এ কম্পিউটারর ছিল ৪ কিলোবাইট র‌্যাম, ক্যাসেট টেপে তথ্য রাখার ব্যবস্থা এবং বেসিক ইন্টারপ্রেটার।
সেই সময়ে কমোডোর পেট ও অ্যাপল টু–এর পাশাপাশি টিআরএস–৮০ ছিল ব্যাপক বিক্রিত কম্পিউটার। ব্যাপকহারে উৎপাদিত প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার ছিল এই টিআরএস–৮০।  এটি সাধারণ মানুষের কাছে এবং স্কুলে খুব জনপ্রিয় ছিল।

১৯৯৭ সালে তৈরি অ্যাপলের নিউটন মেসেজপ্যাড–২১০০ এবং ২০০৭ সালে তৈরি অ্যাপলের আইফোন (ডানে)
উইকিমিডিয়া

৩ আগস্ট ১৯৯৩
অ্যাপলের নিউটন পিডিএ এল
মুঠোফোন, স্মার্টফোন যুগের আগে জরুরি বার্তা লিখে রাখা, অ্যালার্ম দেওয়া, কোনো সভা বা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময়, জরুরি কাজগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল যন্ত্রের প্রচলন হয়। এগুলোকে বলা হতে পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টস (পিডিএ)। অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেড বাজারে আনে নিউটন নামে পিডিএ। অ্যাপলের নিউটন মেসেজপ্যাড ছিল হাতের লেখা শনাক্ত করার প্রথম পিডিএ। ১৯৯৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাপল আনুষ্ঠানিকভাবে নিউটন তৈরি করা বন্ধ করে দেয়।

নিউটন পিডিএর যন্ত্রাংশসহ মাদারবোর্ড
উইকিমিডিয়া

নিউটন চলত নিউটন ওএস নামের অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে। অ্যাপলের মেসেজপ্যাড ও দ্য ইমেট সিরিজের পিডিএগুলোও নিউটন ওএসে চলত। বেশির ভাগ নিউটন যন্ত্রে এআরএম ৬১০ আরআইএসসি প্রসেসর ব্যবহার করা হতো। আর হাতে লিখেও এসব পিডিএতে লেখালেখি করা যেত।
নিউটন বাজারে আসার সময় এটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য সবার নজর কাড়ে। তবে বেশি দাম, প্রথম দিকে হাতের লেখা শণাক্ত করায় ত্রুটি—এমন কিছু কারণে এর বিক্রি বেশি হয়নি। শেষ পর্যন্ত স্টিভ জবস নিউটনের বিপণন বন্ধ করে দেন।

সূত্র: আবর্ত: এনালগ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমরা—আবদুল্লাহ এইচ কাফি, কম্পিউটার হিস্ট্রি ডট ওআরজি, উইকিপিডিয়া