মায়ের গয়না বিক্রির টাকায় ল্যাপটপ কিনে শুরু ফ্রিল্যান্সিং, এখন মাইদুলের আয় মাসে ৩ লাখ টাকা
মাইদুল ইসলামের শুরুটা সহজ ছিল না। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে দরকারি সফটওয়্যার শিখতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন দুবার। কাজ করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে হয়েছিল মায়ের গয়না বিক্রির টাকায়। কিন্তু থেমে না থেকে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। এখন তিনি একজন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার। লালমনিরহাট থেকে অনলাইনে কাজ করে মাইদুলের আয় এখন প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকার বেশি।
২০১৮ সাল বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত রাজধানীর আম্দা ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পুরকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন মাইদুল। এরপর ১৯ হাজার টাকা বেতনে ঢাকায় একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০২০ সালে তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা থাকলেও ক্যানসারের চিকিৎসায় সবই হারাতে হয়। আত্মীয়স্বজনের কাছ হাত পাতলেও তেমন কোনো সাহায্য মেলেনি। শেষ পর্যন্ত নজরুল ইসলাম ২০২০ সালে মারা যান। মাকে একা রেখে ঢাকায় ফিরে আসার উপায়ও ছিল না মাইদুলের। ফলে একসময় চাকরি হারাতে হয় তাঁকে।
বাড়িতে বসেই কিছু একটা করতে হবে—এই চিন্তা থেকে তথ্যপ্রযুক্তির কোর্স করার সিদ্ধান্ত নেন মাইদুল। নিজের মোবাইল ফোন বিক্রি করে দেন। ২০২১ সালে দুটি অনলাইন কোর্সে ভর্তিও হন। তবে এই দুটি কোর্সেই কিছু শিখতে পারেননি মকবুল। এরপরে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্কিলআপারের খোঁজ পান মাইদুল। গুগল অ্যাডস, ওয়েব অ্যানালিটিকস—এই দুই কোর্স করতে চান তিনি। স্কিলআপারে এ দুটি কোর্স করতে খরচ হয় ৯৯০ টাকা। মাইদুলের আর্থিক অবস্থার কথা শুনে স্কিলআপারের প্রতিষ্ঠাতা শামীম হুসাইন ৪৫০ টাকায় কোর্স দুটি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই কথা জানালেন মাইদুল।
কোর্স সম্পন্ন করলেন মাইদুল। কিন্তু কাজ করবেন কিসে। একটা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার তো প্রয়োজন। এদিকে কেনার টাকা তো নেই মাইদুলের। মা মরিয়ম বেগমের সঙ্গে কথা বলেন মাইদুল। মা এগিয়ে এলেন সমস্যার সমাধানে। নিজের হাতের সোনার চুড়ি বিক্রি করলেন। চুড়ি বিক্রির টাকা আর খেতের ভুট্টা বিক্রির টাকা তুলে দিলেন ছেলের হাতে। সেই ২৮ হাজার টাকা দিয়ে মাইদুল একটা পুরোনো ল্যাপটপ কেনেন। এটি দিয়েই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করেন মাইদুল।
২০২১ সালেই গুগল অ্যাডস এবং ওয়েব অ্যানালিটিকসের কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমে ৬০ ডলারের একটা কাজ পান মাইদুল। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। মাত্র দুই বছরের পেশাজীবনে মাইদুলের মাসিক আয় এখন গড়ে ৩ লাখ টাকা। লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় নিজেদের বসভিটায় নতুন বাড়ি বানিয়েছেন। গাড়িও কিনেছেন সম্প্রতি। মাইদুলের সঙ্গে এখন আরও পাঁচজন কাজ করেন।
যে গয়নার টাকায় ল্যাপটপ কিনে নিজের ভাগ্য বদলেছেন মাইদুল, সেই গয়না পরে কিনে দিয়েছেন মাকে। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় মাইদুল ২০২১ সালে বিয়ে করেছেন। মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখন ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হতে চাই। এ জন্য একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যতটুকু পারি, এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছাও রয়েছে।’