দেশেই সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান যাচাইয়ের সুযোগ

এসকিউটিসিতে সফটওয়্যারের মান যাচাই করছেন কর্মীরা
ছবি: খালেদ সরকার

বাজারে পণ্য কেনার সময় আমরা অনেকেই বিএসটিআইয়ের (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) সিল বা সনদ আছে কি না, তা দেখে থাকি। কারণ, বাজারজাতের আগে পণ্যগুলোর মান যাচাই করে এ সনদ দিয়ে থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য পণ্যের মতো ভালো মানের কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডিজিটালজগতে ভালো মানের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার না করলে অনেক বড় ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশেও সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে, যা সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন (এসকিউটিসি) সেন্টার নামে পরিচিত।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) তিন বছর মেয়াদি এক প্রকল্পের আওতায় এসকিউটিসি সেন্টার চালু করেছে। এতে খরচ হয়েছে ২৫ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক সফটওয়্যার, অ্যাপ ও গেমের মান যাচাই করেছে কেন্দ্রটি। প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি–যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যারের মান পরীক্ষা করা হয়েছে তিন শতাধিক। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত কেন্দ্রটি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, সংস্থা, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ ৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে মান যাচাইয়ের এই সেবা দিয়েছে।

এসকিউটিসিতে যেসব সেবা পাওয়া যায়

এসকিউটিসিতে মূলত সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ ও গেমের মান পরীক্ষা করে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের কাজের পদ্ধতি, অটোমেশন, দুর্বলতা, মূল্যায়ন, পারদর্শিতা, সমন্বয়, উপযোগিতা, কর্মক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে এই কেন্দ্র। ফলে কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনার আগে সেগুলোর মান যাচাই করতে পারে।

এসকিউটিসি সেন্টারের ব্যবস্থাপক (টেস্টিং) সাইফুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সেন্টারকে বলা যায় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের বিএসটিআই। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আইনের আওতায় এ সেন্টার গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএসটিআইও সম্মতি দিয়েছিল যে আমরা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান যাচাই করতে পারব।’

মান যাচাইয়ের সক্ষমতা

এসকিউটিসি সেন্টারটি টিএমএমআইয়ের (টেস্ট ম্যাচিউরিটি মডেল ইন্টিগ্রেশন) লেভেল ৫ সনদপ্রাপ্ত। টিএমএমআই হচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থার সফটওয়্যার ও পরীক্ষাপদ্ধতি উন্নতির ক্ষেত্রে গুণগত মান যাচাইয়ে সহায়তা করে থাকে। মান যাচাইয়ের জন্য এসকিউটিসি সেন্টারে ১০ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল রয়েছে।

আইসিটি বিভাগ এ কেন্দ্রের জন্য একটি খসড়া নীতিমালাও করেছে। ‘সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান পরীক্ষাকরণ ও সার্টিফিকেশন নীতিমালা ২০২০’ নামে খসড়ায় বলা হয়েছে, সফটওয়্যারের গুণগত মান ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই বিসিসি আন্তর্জাতিক মানের এসকিউটিসি স্থাপন করেছে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কেনা সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ, গেম, কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের মান পরীক্ষা করা যাবে।

খসড়া নীতিমালার আওতায় সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেনা, উন্নয়ন বা ব্যবহার করা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান এ সেন্টার থেকে পরীক্ষা করিয়ে সনদ নিতে হয়। তবে জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেলায় এই মান যাচাইয়ের বিষয়টি ঐচ্ছিক।

এ বিষয়ে এসকিউটিসির ব্যবস্থাপক আরও জানান, এ বছরের শেষেই নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান সেবা নিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যারের মান যাচাই করে নিতে পারবে। এ ছাড়া রপ্তানির আগেই দেশে তৈরি সফটওয়্যারের গুণগত মান যাচাই করতে সহায়তা করবে এসকিউটিসি।

 

কাজের পদ্ধতি

সফটওয়্যারের মান যাচাইয়ের জন্য তিন থেকে সাত দিন সময় নেয় এসকিউটিসি। কোনো প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মান যাচাই করে সমস্যা পেলে প্রথমে তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর সমস্যার সমাধান করে পুনরায় জমা দিলে আবারও সফটওয়্যার ও যন্ত্রাংশের মান যাচাই করে সনদ দেয় কেন্দ্রটি।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগও এ কেন্দ্রের সেবা নিয়েছে। বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ছায়েদুজ্জামান এসকিউটিসির সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি জানান, গত বছর তাঁরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়নসংক্রান্ত একটি সফটওয়্যারের মান যাচাই করেছেন এসকিউটিসি থেকে। সেন্টারের মতামত অনুযায়ী তাঁরা সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরবর্তীকালে বেশ কিছু ত্রুটি সংশোধনও করে নিয়েছেন।

খরচ কেমন

এত দিন এসকিউটিসি সেন্টারে বিনা মূল্যে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ ও গেমের মান পরীক্ষা করানো যেত। তবে নতুন অর্থবছর থেকে মান যাচাইয়ের জন্য কাজের ধরনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে।