সূর্যের শেষ পরিণতি যেমন হতে পারে
মানুষ বা অন্য সব প্রাণীর মতোই তারা বা নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু হয়। তবে নক্ষত্রের জন্ম ও মৃত্যু মহাবিশ্বে নতুন বস্তু গঠনে সহায়তা করে। আসলে নক্ষত্রের ভর ও অভ্যন্তরীণ উপাদানের আয়ুষ্কাল কমবেশির কারণে তারার জন্ম-মৃত্যুর মতো মহাজাগতিক ঘটনা দেখা যায়। কোনো নক্ষত্র হয়তো কোটি কোটি বছর স্থায়ী হয় আবার কিছু ক্ষণস্থায়ী হিসেবে আকাশে আবির্ভূত হয়।
সময়কাল যা–ই হোক না কেন, সব নক্ষত্র দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বেঁচে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভ্যন্তরীণ টান ও পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে তৈরি বহির্মুখী চাপের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হয় একেকটি নক্ষত্রকে। একটি নক্ষত্রের ঘন কেন্দ্রে পারমাণবিক ফিউশনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের মধ্যে হয়ে থাকে, যেখানে পারমাণবিক নিউক্লিয়াস সাধারণত তাদের ধনাত্মক চার্জ দ্বারা বিকর্ষিত হয়। এই সংঘর্ষের ফলে কেন্দ্র থেকে প্রচুর শক্তি নির্গত হয়। সেই শক্তি আশপাশের গ্যাসকে উত্তপ্ত করে। কেন্দ্রের তাপ ও বিকিরণের মাধ্যমে নক্ষত্র নিজের ওপরে মহাকর্ষীয় পতনকে প্রতিরোধ করে।
আমাদের সূর্যের মতো বা তার চেয়ে কম ভরের নক্ষত্র তুলনামূলকভাবে মৃদু রূপান্তরের মাধ্যমে শেষ পরিণতিতে পৌঁছে যাবে। এসব নক্ষত্রের কেন্দ্র থেকে হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে গেলে ফিউশন ধীর হয়ে যায় ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কেন্দ্রকে সংকুচিত করে ফেলবে। প্রায় ১০ কোটি কেলভিন তাপমাত্রা অতিক্রম করলে হিলিয়াম ফিউশন শুরু হয়। এই হিলিয়াম তাপের মাধ্যমে কার্বন ও অক্সিজেনে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্র বা কোরের ঠিক বাইরে থাকা হাইড্রোজেনের আশপাশের শেলও উত্তপ্ত হয়ে জ্বলন্ত নক্ষত্রের বাইরের স্তরের শক্তি ত্যাগ করে।
তখন নক্ষত্রের মধ্যে নাটকীয়ভাবে প্রসারণ দেখা যায়। নক্ষত্র তখন একটি লাল দৈত্যে পরিণত হয়। তখন নক্ষত্র স্ফীত আকার ধারণ করলেও পৃষ্ঠ বেশ ঠান্ডা থাকে। শেষ পর্যন্ত, নক্ষত্রের বাইরের স্তর ধীরে ধীরে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন একটি উজ্জ্বল নীহারিকা তৈরি হয়। মূল কেন্দ্রকে তখন একটি সাদা বামন হিসেবে দেখা যায়। বামন তারকা উত্তপ্ত, ঘন বস্তু হিসেবে অবস্থান করে। এমন মহাজাগতিক বস্তুর বেশির ভাগ কার্বন ও অক্সিজেন দিয়ে গঠিত হয়। আমাদের মিল্কিওয়ের মতো একটি ছায়াপথের প্রায় ৯৫ শতাংশ তারা শ্বেত বামন হিসেবে ধ্বংস হয়ে যায়।
সূর্যের শেষ গন্তব্যও এমন হবে। ধারণা করা হয়, প্রায় ৫০০ কোটি বছর পরে সূর্য একটি লাল দৈত্যে পরিণত হবে। তখন সূর্য বুধ, শুক্র গ্রহসহ পৃথিবীকে গ্রাস করবে। সূর্যের বাইরের স্তর সরে যাবে আর কেন্দ্রে একটি সাদা বামন তারা থেকে যাবে। ধীর ও বিবর্ণ অবশিষ্টাংশ হিসেবে আরও কোটি কোটি বছর ধরে মহাকাশে তাপ বিকিরণ করবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস