পৃথিবীর ওজন কেন মাপা যায় না

পৃথিবীছবি: রয়টার্স

সবকিছুরই তো ওজন থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় সবকিছুরই ভর থাকে। পৃথিবীর ওজন বা ভর অনুমান করতে শত শত বছর লেগে গেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত ওজনের সঠিক মাপ নিয়ে এখনো একমত নন। একবাক্যে বলা যায় পৃথিবীর ওজন ১৩ কোয়াড্রিলিয়ন, মিসরের গিজায় খাফ্রেসের পিরামিডের মোট ওজনের সমান হতে পারে। ১ সংখ্যার পরে ১৫টি শূন্য বসলে তাকে কোয়াড্রিলিয়ন বলে। আমাদের পৃথিবী কঠিন সব শিলা আর খনিজে সমৃদ্ধ। একইভাবে লাখ লাখ প্রজাতির প্রাণকে ধারণ করে চলেছে। অসংখ্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কাঠামোতে আচ্ছাদিত। সব মিলিয়ে আসলে ওজন কত, তা নিয়ে অনেক দ্বিধা আছে। এই প্রশ্নের কোনো একক উত্তর নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। পৃথিবীতে আসলে একক ওজন বা স্থির ওজন বলাটা কঠিন। সমতলে ওজন একরকম, পাহাড়ের ওপরে ওজন আরেক রকম। পৃথিবীর ওজন নির্ভর করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ওপর। পৃথিবীর ওজন ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি = ১ ট্রিলিয়ন) টন হতে পারে আবার কমও হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা অনেক শতাব্দী ধরে পর্যবেক্ষণ করে পৃথিবীর ভর বের করেছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা—নাসার হিসাবে পৃথিবীর ভর হল ৫.৯৭২২×১০২৪ কিলোগ্রাম, বা প্রায় ১৩.১ সেপ্টিলিয়ন পাউন্ড, যা প্রায় ১৩ কোয়াড্রিলিয়ন মিসরের খাফ্রেস পিরামিডের সমান। ৪৮০ কোটি কিলোগ্রামের সমান। আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা মহাকাশের ধুলাবালু ও গ্যাসের কারণেও পৃথিবীর ভর সামান্য ওঠানামা করে। যদিও এমন ক্ষুদ্র পরিবর্তন কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীকে প্রভাবিত করছে না। যদিও বিশ্বজুড়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা এখনো দশমিকের ওপর একমত নন এবং সেই বিশাল মোটে পৌঁছানো সহজ কাজ ছিল না। যেহেতু পৃথিবীকে একটি স্কেলে রাখা অসম্ভব, তাই বিজ্ঞানীদের অন্যান্য পরিমাপযোগ্য বস্তু ব্যবহার করে এর ভর ত্রিভুজ করতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানী স্টেফান শ্লামিংগার বলেন, প্রাথমিকভাবে আইজ্যাক নিউটনের সর্বজনীন মহাকর্ষের সূত্রের ওপর নির্ভর করে ভর পরিমাপ করা হয়। যেসব বস্তুর ভর রয়েছে তার একটি মহাকর্ষীয় বল রয়েছে। যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে সর্বদা কিছু বল থাকবে। নিউটনের সর্বজনীন মহাকর্ষ সূত্রে বলা হয় দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী মহাকর্ষীয় বল বস্তুর নিজ নিজ ভরকে গুণ করে বস্তুর কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্বের বর্গ দ্বারা ভাগ করে নির্ধারণ করা যায়। এই সংখ্যাটিকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক দ্বারা গুণ করলে অভিকর্ষের অন্তর্নিহিত শক্তির মান পাওয়া যায়। এই সমীকরণটি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিকভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠের একটি বস্তুতে গ্রহের মহাকর্ষ বল পরিমাপ করে পৃথিবীর ভর পরিমাপ করতে পারেন। প্রথম দিকে তখন কেউ মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান জানত না।

আরও পড়ুন

১৭৯৭ সালে পদার্থবিদ হেনরি ক্যাভেন্ডিশ একটি পরীক্ষা করেন। টর্শন ব্যালেন্স নামক একটি বস্তু ব্যবহার করেন তিনি। যন্ত্রটি দুটি ঘূর্ণমান রড দিয়ে তৈরি, যার সঙ্গে সিসার গোলক সংযুক্ত থাকে। বিজ্ঞানী, ক্যাভেন্ডিশ রডের কোণ পরিমাপ করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিমাণ খুঁজে পান। তার কাজটি খুব মৌলিক ছিল। সেই সময়ে একটি বড় প্রভাব তৈরি করেছিল।

বিজ্ঞানী শ্লামিংগার আরও বলেন, গোলকের মধ্যে ভর ও দূরত্ব জেনে ক্যাভেন্ডিশ মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান গণনা করেন। ডেটাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিলের কমিটি বর্তমানে এই মান ঠিক করে দিয়েছে। ক্যাভেন্ডিশের আসল সংখ্যা ছিল ৬.৭৪, যা এখন কিছুটা কমে ৬.৬৭৪৩ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তখন থেকে এই মান ব্যবহার করেছেন পরিচিত ভরের সঙ্গে অন্যান্য বস্তু ব্যবহার করে পৃথিবীর ভর গণনা করেন। ক্যাভেন্ডিশের পরীক্ষার পর থেকে দুই শতাব্দীর বেশি সময় পার হয়ে গেছে। সেই টর্শন ব্যালেন্স পদ্ধতি আজও ব্যবহৃত হয়। আপাত এই ওজন নিয়েই আমাদের হিসাব করতে হচ্ছে। পৃথিবীর ওজন এককভাবে বলার গবেষণা বা সূত্র এখনো বের হয়নি।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স