শামুক কি খুঁজে দেবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের হারিয়ে যাওয়া সেই বিমান

নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষের গায়ে গবেষকেরা বার্নাকলসের সন্ধান পেয়েছিলেন
রয়টার্স

অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেলে হাঁসের দেখা পান। বাড়ির আশপাশের পুকুরে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় নানা সাদা-কালো-বাদামি হাঁস। সেই হাঁসের খাবারের মধ্যে শামুকসদৃশ গুগলিজাতীয় প্রাণী অন্যতম। এসব প্রাণীকে সমুদ্রেও দেখা যায়, যারা বার্নাকলস নামেই সারা বিশ্বে পরিচিত। বিভিন্ন জাহাজের নিচের অংশে বা সামুদ্রিক নৌকার গায়ে খেয়াল করলেই পাথরের টুকরার মতো বার্নাকলস দেখা যায়। শামুকের মতো এসব প্রাণী দিয়েই হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ সন্ধানের চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।

ভারত মহাসাগরে ২০১৪ সালে নিখোঁজ হয় এমএইচ ৩৭০। সেই বিমানে ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন। নতুন পদ্ধতিতে হারানো বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যেখানে, বিজ্ঞানীরা সেখানে খোঁজার কাজ করছেন। বার্নাকলসের খোলসের রাসায়নিক অবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন এই পদ্ধতিতে। এজিইউ অ্যাডভান্সেস নামের বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে এই পদ্ধতি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্রেগরি হার্বাট এই ধারণা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি আফ্রিকার উপকূলে রিইউনিয়ন আইল্যান্ডে প্লেনের ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখেন। সেই নিখোঁজ বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষের গায়ে তিনি বার্নাকলসের সন্ধান পান। তিনি বলেন, ‘আমি বিমানের ডানার বিশেষ অংশে বার্নাকলসের সন্ধান পাই। আমি অনুসন্ধানকারীদের দ্রুত ই–মেইলে বিষয়টি অবহিত করি। জিওকেমিস্ট্রি কৌশল খাটিয়ে আমরা সেই বার্নাকলসের খোসার নানা দিক গবেষণার মাধ্যমে বিমানের ধ্বংসের স্থান খুঁজে বের করতে পারব।’

সাধারণভাবে বার্নাকলসের খোলসে প্রতিদিনই স্তরের ওপর স্তর তৈরি হয়। এটা অনেকটা গাছের কাণ্ডে থাকা গোলাকার দাগের মতো। সমুদ্রের তাপমাত্রার কারণে একেক সময় একেক স্তরের গঠন একেক রকম হয়। এসব স্তর থেকে সমুদ্রের তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পান গবেষকেরা। দুই দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা এই আস্তরণ থেকে তথ্য বের করার কৌশল বের করেছেন। গবেষকেরা পরীক্ষাগারে এমনই কিছু বার্নাকলসের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, পানির তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে একেক সময় একেক গড়নের আস্তরণ দেখা যায়। একইভাবে এমএইচ ৩৭০ বিমানের ডানার অংশের বার্নাকলস নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা। এমএইচ ৩৭০ যে অবস্থায় ধ্বংস হয়, তার অবস্থা ও সেই সময়কার সমুদ্রের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ওশানোগ্রাফিক মডেলের মাধ্যমে তাপমাত্রার গতি বোঝার কৌশল নিয়ে গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন তাঁরা।

গ্রেগরি হার্বাট বলেন, ‘আমরা বিমানের বড় ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাইনি, কিন্তু আমাদের গবেষণার মাধ্যমে আমরা ধ্বংসাবশেষ থেকে তাপমাত্রা অনুসন্ধান করে ধ্বংসস্থলের মডেল বের করার কৌশল প্রণয়ন করেছি। ধারণা করা হয়, বিমানটি ভারত মহাসাগরের সেভেনথ আর্ক নামের এলাকায় হারিয়ে গেছে। কয়েক হাজার মাইলজুড়ে বিস্তৃত এই এলাকায় বিমানের খোঁজ এখনো মেলেনি। সমুদ্রের তাপমাত্রা এই অঞ্চলে দ্রুত পরিবর্তিত হয়। যে কারণে গবেষকদের বিশ্বাস, নতুন পদ্ধতিতে বিমান যেখানে ধ্বংস হয়েছে, তার খোঁজ পাওয়া যাবে। বার্নাকলসের শেল বা খোসা পরীক্ষা করে সম্ভাব্য এলাকা সম্পর্কে আরও বেশি জানা যাবে।’

মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ ছিল একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। আকাশে ওড়ার প্রায় ৩৮ মিনিট পর সেটির সঙ্গে যোগাযোগ করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। সেই সময় বিমানটি দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে উড়ছিল। এর কয়েক সেকেন্ড পর বিমানটির সঙ্গে এটিসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর মালয়েশিয়া সেনাবাহিনীর রাডারে ধরা পড়ে বিমানটি। নিয়মিত চলাচলের পথ থেকে পশ্চিম দিকে সরে মালয় উপদ্বীপ ও আন্দামান সাগর অতিক্রম করছিল বিমানটি। এরপরই চিরতরে গায়েব হয়ে যায় ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। দক্ষিণ চীন সাগর ও আন্দামান সাগরে তল্লাশি করলেও বিমানের খোঁজ মেলেনি আর।

সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট