ঢাউস যন্ত্রের বদলে আলট্রাসাউন্ড স্টিকার কি রোগ শনাক্ত করবে?

আলট্রাসাউন্ড স্টিকার শরীরের অঙ্গের আড়ষ্টতা শনাক্ত করতে পারবেছবি: এমআইটি

মানবশরীরের মধ্যে নানা রহস্য কিংবা রোগ শনাক্ত করতে আলট্রসাউন্ড যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। বিশাল কাঠামোর যন্ত্রের মাধ্যমে মানবদেহের ভেতরের নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের বদলে আলট্রাসাউন্ড স্টিকারের মাধ্যমে মানবদেহের রোগ শনাক্তের চেষ্টা করছেন একদল মার্কিন গবেষক।

দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অবস্থান ও অনুভূতি থেকে শুরু করে যকৃতের (লিভার) সমস্যা শনাক্ত করতে পারে, এমন স্টিকার তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) প্রকৌশলীরা একটি আঠালো স্টিকার বা প্যাচ নকশা করেছেন, যা শরীরের আলট্রাসাউন্ড চিত্র তৈরি করে। ডাকটিকিট আকারের যন্ত্রটি ত্বকে স্টিকারের মতো লেগে থাকে। ৪৮ ঘণ্টা ত্বকে লেগে থেকে দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর অবিচ্ছিন্ন আলট্রাসাউন্ড ছবি তৈরি করতে পারে।

স্টিকারটি যকৃৎ ও কিডনির সমস্যাসহ কঠিন টিউমারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। নানা ধরনের রোগের লক্ষণ বাছাই করার জন্য নকশা করা হয়েছে স্টিকারটি। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে স্টিকারের বৈজ্ঞানিক বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। স্টিকারটিতে বিশেষ ধরনের সেন্সর রয়েছে। এই সেন্সর ত্বকের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে শব্দতরঙ্গ পাঠাতে পারে। শব্দতরঙ্গ অভ্যন্তরীণ অঙ্গে শব্দ প্রতিফলিত হয়ে স্টিকারে ফিরে আসে। প্রতিফলিত তরঙ্গের প্যাটার্ন অঙ্গের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে।

এমআইটির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জুয়ানহে ঝাও বলেন, কোনো অঙ্গে রোগ থাকলে তা ভিন্ন আচরণ করে। অঙ্গের পেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে। পরিধেয় স্টিকারের সাহায্যে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অঙ্গের অনমনীয়তার বিষয়টি নিরীক্ষা করতে পারি। অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ভিন্ন আচরণ করলে প্রাথমিকভাবে কোনো রোগ থাকতে পারে। স্টিকারটি অবিচ্ছিন্নভাবে ৪৮ ঘণ্টা বিভিন্ন অঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। স্টিকারটি শরীরের সূক্ষ্ম পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। প্রাথমিক পরীক্ষায় স্টিকারটি একটি ইঁদুরের শরীরে লাগানো হয়। ইঁদুরের যকৃতের সমস্যা স্টিকার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে পারে।

এখন মানুষের ব্যবহারের জন্য স্টিকারের নকশার কাজ চলছে। স্টিকারটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ব্যবহার করা যেতে পারে। আইসিইউতে সেন্সর অবিচ্ছিন্নভাবে রোগী পর্যবেক্ষণ করতে পারে। যকৃৎ বা কিডনি প্রতিস্থাপনের পর স্টিকারটির মাধ্যমে রোগীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। আমাদের পেশির মতো শরীরের কোষ ও অন্যান্য অঙ্গ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে অঙ্গ বেশ শক্ত হয়ে যায়, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

বর্তমানে চিকিত্সকেরা আলট্রাসাউন্ড ইলাস্টোগ্রাফি ব্যবহার করে কিডনি ও যকৃতের মতো অঙ্গের কঠোরতা পরিমাপ করতে পারেন। আলট্রাসাউন্ড ইমেজিংয়ের মতো কৌশল ব্যবহার করে অঙ্গের অবস্থান জানার চেষ্টা করা হয়। গবেষণায় যুক্ত আরেক বিজ্ঞানী কিফা ঝৌ বলেন, প্রথাগত আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শরীরে হাতে ধরা একটি যন্ত্র বা প্রোব স্থাপন করা হয়। এই যন্ত্র বেখেয়ালে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্ত বা তথ্য মিস করতে পারে। পরিধানযোগ্য বিকল্প উপায় বের করতে স্টিকার নকশা করা হয়েছে। আলট্রাসাউন্ড এই স্টিকারের মাধ্যমে গভীর টিস্যু ও অঙ্গে চিত্রের তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক পরীক্ষায় ইঁদুরের মধ্যে কঠোরতা-সংবেদনশীল ধরনের এই স্টিকার নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। স্টিকার ৪৮ ঘণ্টা ধরে যকৃতের কঠোরতার ক্রমাগত পরিমাপ করতে সক্ষম। স্টিকারের সংগৃহীত তথ্য থেকে যকৃতের কার্যকারিতার বিষয়টি স্পষ্ট দেখা যায়। একটি সুস্থ যকৃৎ নরম সেদ্ধ ডিমের মতো নড়বড়ে। একটি রোগাক্রান্ত যকৃৎ শক্ত সেদ্ধ ডিমের মতো। স্টিকার থেকে জানা যাচ্ছে, কোন যকৃৎ কেমন। স্টিকারটি শরীরের গভীরের চিত্র ধারণ করতে পারে।

আইসিইউতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগীদের জন্য এই স্টিকার ব্যবহার করার সুযোগ আছে। স্টিকারটি রোগীর শরীরে যেকোনো জায়গায় আটকানো যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র নিয়ে যাওয়া কঠিন, সেখানে এই স্টিকার জীবন বাঁচাতে কাজে আসবে।

সূত্র: মেডিকেল এক্সপ্রেস