সমুদ্রসৈকত রক্ষায় ঝিনুকের বাঁধ

ঝিনুকফিজিস ডট অর্গ

সব সমস্যার সমাধানই নাকি রয়েছে প্রকৃতিতে। সেই নীতিবাক্যের নতুন প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে বেলজিয়ামে। এত দিন বেলজিয়ামের ঝিনুক সুস্বাদু খাবার হিসেবে চাষ করা হলেও ছয় বছর আগে দেশটির দুটি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান লা প্যান সমুদ্রসৈকত রক্ষার জন্য ঝিনুকচাষিদের সঙ্গে যুক্ত হয়।

কয়েক বছর ধরে বেলজিয়ামের উত্তর সাগর উপকূল রক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে ঝিনুক ব্যবহার করছে তারা। বালুকাময় উপকূলরেখায় সমুদ্রের স্রোত আঘাত করে। সেই আঘাতে সমুদ্রসৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝিনুকের মাধ্যমে পানির নিচে একটি প্রাকৃতিক বাঁধ তৈরি করছেন গবেষকেরা, যার মাধ্যমে সমুদ্রের স্রোতের দিক পরিবর্তন হচ্ছে। জীববিজ্ঞানীরা ঝিনুকের মাধ্যমে সমুদ্রসৈকত রক্ষার এ কৌশল নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। শুরুতে কয়েক কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত রক্ষায় কাজ করলেও বর্তমানে প্রায় ৪০ কিলোমিটার বা ২৪ মাইল লম্বা উপকূল বরাবর প্রাচীর তৈরির জন্য কাজ করছেন গবেষকেরা।

ঝিনুকের মাধ্যমে উপকূল বরাবর প্রাচীর তৈরির এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে কোস্টবাস্টার্স। কর্মসূচির আওতায় বেলজিয়ামের উত্তর সাগরের অগভীর উপকূল বরাবর ঝিনুকের একটি বেষ্টনী তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে ছড়িয়ে থাকা ঝিনুকগুলো বিস্তার পাবে। ফলে শক্তিশালী স্রোত এই প্রাকৃতিক বেষ্টনীতে বাধাগ্রস্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। আর তাই সমুদ্রের তলদেশে ঝিনুক বেষ্টনী নতুন প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম তৈরি করে সমুদ্রসৈকতকে দীর্ঘ মেয়াদে রক্ষা করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিভিন্ন কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য উপকূলীয় দুর্যোগের মাত্রা বাড়ছে। এতে উপকূলীয় প্রাণ-প্রতিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। শুধু তা–ই নয়, উপকূলীয় অঞ্চলের কম উচ্চতার অবকাঠামোগুলো জোয়ারের পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিরক্ষার কাঠামো তৈরি করে সমুদ্রসৈকত রক্ষা করা হয়। তবে এসব পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের খরচও হয় বেশি।

আবার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে এসব স্থায়ী কাঠামো সহজে পরিবর্তন করা যায় না। বায়োজেনিক রিফ বা ঝিনুক-শৈবালের মতো বেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে প্রাকৃতিক সমাধান ভালো বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এসব প্রাকৃতিক বাঁধ শুধু বালু বা পলি আটকানোর ক্ষমতা রাখে না, একই সঙ্গে স্রোতের হাইড্রোডাইনামিক শক্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে। একই সঙ্গে এই প্রাকৃতিক বাঁধের ওপর নির্ভর করে সমুদ্রের অগভীর অঞ্চলে প্রাণের সঞ্চার ঘটে।

আরও পড়ুন

বেলজিয়ামের আইএলভিও ইনস্টিটিউটের গবেষক আলেক্সিয়া সেমেরারো বলেন, ‘ঝিনুকের চারপাশে অনেক ধরনের জীবন্ত প্রাণীর আবাসস্থল গড়ে ওঠে। সেই বিষয়কে আমরা প্রথমে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি। ঝিনুকের বাঁধ সমুদ্রের বালু ও পলিকে স্থিতিশীল করে। এতে সমুদ্রসৈকতের ক্ষয় কম হয়, একই সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ আবাসস্থল তৈরি হয়।’

আরও পড়ুন

বেলজিয়ামের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ডিইএমইর গবেষক টমাস স্টারকক্স বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নানা দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। তীব্র সামুদ্রিক ঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। প্রাকৃতিকভাবে এসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। ঝিনুক আমাদের নতুন পথ দেখাচ্ছে। ডিইএমই বাঁধ তৈরির কারিগরি বিষয়টি দেখছে। আর বিজ্ঞানীরা পানির নিচে ঝিনুকের তৈরি জৈবিক সুরক্ষা বাঁধ তৈরির জন্য কাজ শুরু করেছেন। এই কৌশল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক ঝড় আর ঢেউয়ের হাত থেকে সমুদ্রসৈকতকে রক্ষা করবে দারুণভাবে। আমরা এ অঞ্চলের প্রাণ-প্রতিবেশ আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। এ অঞ্চলে সামুদ্রিক ঝড়ের আক্রমণ বেশি। এই ঝিনুকের বাঁধ সেই ঝড়ের আঘাত থেকে উপকূলকে রক্ষা করবে।’

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ