স্টিভ জবস, জাকারবার্গের মতো হতে চাইলে প্রতিদিন ২০ মিনিট হাঁটুন

হাঁটা মস্তিষ্কের জন্য ভালো অভ্যাস। রয়টার্স স্টিভ জবস, জাকারবার্গের মতো হতে চাইলে প্রতিদিন ২০ মিনিট হাঁটুন

পড়ার টেবিলে মন বসে না, কিংবা অফিসে কাজ করতে বসলেই মন অন্য কিছু করতে চায়—এমন ঘোড়ারোগ অনেকেরই আছে। মস্তিষ্কের জোর বাড়ানোর মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা যায়। দ্রুত মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে হাঁটা নিয়ে অনেক গবেষণার কথা জানা যায়। অনেকেই জানেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ হাঁটতে হাঁটতে সভা চালাতে ভালোবাসেন। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসেরও একই অভ্যাস ছিল।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জাকারবার্গ ও জবসের হেঁটে হেঁটে সভা করা খুবই কার্যকর একটি অভ্যাস। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখছেন, মাত্র ২০ মিনিট হাঁটলে মানবমস্তিষ্ক নতুন তথ্য গ্রহণ করতে উজ্জীবিত হয়। নতুন তথ্য তখন সংরক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করে। ২০ মিনিটের মতো হেঁটে এলে আপনার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০ মিনিটের হাঁটার অভ্যাসে দুশ্চিন্তা কমে, আচরণে প্রফুল্লতা আসে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর সব ধরনের ব্যায়ামের প্রভাব আছে। যদিও মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সামান্য হাঁটার ইতিবাচক প্রভাব অনেক। বিজ্ঞানীরা মানবমস্তিষ্কের হাঁটা অবস্থা ও চুপচাপ বসে থাকা অবস্থার ছবি বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছেন। অ্যারিস্টটল, ভার্জিনিয়া উলফ ও নিকোলা টেসলাও হাঁটার চর্চায় বিশ্বাসী ছিলেন। এই অভ্যাসে মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ (গ্রে ম্যাটার) বাড়াতে পারে। মস্তিষ্কের ভারসাম্য ও সমন্বয়ে অবদান রাখে যেসব এলাকা, সেসবের আকার বাড়াতে পারে। এই পরিবর্তনে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যগত প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ইতিহাসজুড়ে দেখা যায়, শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদেরা বলা যায় উত্সাহী ধরনের পথচারী ছিলেন। স্টিভ জবস ও মার্ক জাকারবার্গসহ অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হেঁটে হেঁটে সভা করার সমর্থক। হাঁটলে মানসিক বাধা সরে যায়। ভিন্ন চিন্তা তৈরি হয়। নতুন ধারণা মাথায় আসে। আধুনিক চিকিৎসার জনক হিপোক্রেটিসের ভাষ্য ছিল, হাঁটা মানুষের সেরা ওষুধ। হাঁটলে শুধু মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো হয় না, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও হাড় শক্তিশালী হয়। হজম ও রক্তে শর্করার বিস্তৃতি ঘটে।

২০০৯ সালের একটি গবেষণার সময় মস্তিষ্কের স্ক্যান করে বিশ্লেষণের পর এ তথ্য জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। চুপচাপ বসে থাকা মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় ট্রেডমিলে ২০ মিনিট হেঁটে আসা মানুষদের মস্তিষ্কের চিত্র আলাদা হয়। ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম (ইইজি) করে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষা দেখায়, কিছুটা হাঁটার পরে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ উন্নত হয়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন উদ্দীপকে নতুন প্রভাব দেখা যায়। এই আলোড়ন পরের ৩০ মিনিট ধরে স্থায়ী থাকে। অন্যদিকে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা যায়, হেঁটে আসার পরে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ওপর প্রভাব দেখা যায়। বসে থাকার পরিবর্তে হাঁটার সময় সৃজনশীলতা বাড়ে।

২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র ১১ মিনিটের জন্য দ্রুত হাঁটার অভ্যাস রীতিমতো দ্রুত মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় এক–চতুর্থাংশ কমিয়ে দিতে পারে। ৩ কোটি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৭৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস থাকলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ২৩ শতাংশ কমে যায়।

আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ২০২২ সালে আরেকটি গবেষণায় হাঁটার ইতিবাচক দিক নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা দেখেছেন, খাবারের পরে অল্প হাঁটলে রক্তে শর্করাকে কমতে পারে ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে পারে।

বিজ্ঞানীরা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত বলে মনে করেন। সকালে দুই মিনিটের হাঁটাচলা, দুপুরের খাবারের সময় সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ও নিচে আসা, রাতে বাড়ি ফেরার সময় হাঁটা—সবকিছু বেশ ইতিবাচকভাবে দেখেন বিজ্ঞানী। ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তো স্টিভ জবস বা মার্ক জাকারবার্গ হতে চাইলে আজ থেকে প্রতিদিন ২০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস শুরু করুন।
সূত্র: ডেইলি মেইল