যশোরে তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে

সেমিকোলনের কর্মীরাসংগৃহীত

যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বসে আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি করছে সেমিকোলন-আইটি সলিউশনস। সফটওয়্যার তৈরির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজও করছে চার উদ্যোক্তার গড়া প্রতিষ্ঠানটি।

শুরুর কথা

২০১৯ সালের আগস্টে যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ১২ তলায় ১ হাজার ৩০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে কাজ শুরু করে সেমিকোলন-আইটি সলিউশনস। কাজের চাহিদা বাড়তে থাকায় এক বছরের মধ্যেই কার্যালয়ের আকার বেড়ে হয় ৩ হাজার ৬০ বর্গফুট। প্রতিষ্ঠানটি মূলত কাস্টমাইজড (ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী) সফটওয়্যার তৈরি করে। পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজও করে থাকে। দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তুলতে প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন

সাফল্য

যাত্রা শুরুর মাত্র তিন বছরের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে সফটওয়্যার রপ্তানি করেছে সেমিকোলন। দেশেও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহৃত হচ্ছে সেমিকোলনের তৈরি সফটওয়্যার। এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), মেট্রোরেল লাইন-৫, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) জন্য সফটওয়্যার তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেমিকোলনের তৈরি ‘মাটির ব্যাংক’ নামের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার এরই মধ্যে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একতা সোসাইটি ও মণিরামপুর উপজেলার সৃজন বহুমুখী সমবায় সমিতি ব্যবহার করছে।

আরও পড়ুন

উদ্যোক্তাদের কথা

পারভেজ মাহমুদ, খন্দকার রাশেদ মেনন, মিলন হোসেন ও বিপ্রদাস রয় প্রতিষ্ঠা করেন সেমিকোলন-আইটি সলিউশনস। প্রতিষ্ঠানের নাম সেমিকোলন কেন? জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা (ফিন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটিং পরিচালক) পারভেজ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেমিকোলন হচ্ছে প্রোগ্রামিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কোড। যেহেতু আমরা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করি, তাই এই নাম নির্বাচন করা হয়েছে। আইটি পার্কে কাজ শুরুর পর কার্যালয়ের আকার বড় হওয়ার পাশাপাশি কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে।

বর্তমানে সেমিকোলনে ২৫ জন কর্মী রয়েছেন, যার মধ্যে ১২ জন নারী। গত তিন বছরে ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা হয়েছে ৩৬ হাজার ডলার। ফলে যাত্রা শুরুর তিন বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে সেমিকোলনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, এটি তিন বছর বয়সী প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা বিএডিসির খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার তৈরি করে দিয়েছি। এই সফটওয়্যারের কারণে বাজেটবহির্ভূত খরচ এন্ট্রি করা যাবে না, ফলে বাজেটের সুষম ব্যবহারের পাশাপাশি সময় কম লাগাসহ পরিশ্রম কম হবে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের জন্য সার্টিফিকেট মামলা ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারও তৈরি করেছি। সফটওয়্যারটি কাজে লাগিয়ে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় মামলা ব্যবস্থাপনা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব।’
২০২০ ও ২০২২ সালে হায়দরাবাদ ও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া সফট’ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় সরকারি উদ্যোগে অংশ নিয়েছিল সেমিকোলন আইটি।

আরও পড়ুন

পারভেজ মাহমুদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘ঢাকার বাইরে জেলা শহরে আমরা যে ধরনের কাজ করি, সে কাজের উপযোগী কর্মী পাওয়া কঠিন। আর তাই আমরা নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলছি। এরই মধ্যে সেমিকোলন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাঁদের বেশির ভাগই ঢাকা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। কয়েকজন সেমিকোলনেও কাজ করছেন। সম্প্রতি আমরা স্কুল ও কলেজের ১০ শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি।’

আরও পড়ুন

ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ

পারভেজ মাহমুদ বলেন, ‘সরকার আমাদের সুন্দর, অত্যাধুনিক, পরিবেশবান্ধব ভবনে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে কাজের পরিবেশও চমৎকার। কিন্তু একটা সমস্যা বেশ প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে, তা হলো বিদ্যুৎ বিল। এখন প্রতি ইউনিটের জন্য ১৩ টাকা দিতে হয় আমাদের। উদ্যোক্তাদেরও কৃষকদের মতো বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত। প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা করা হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।’