কানিজের নারীবান্ধব বাস

বাসটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। ছবি: সংগৃহীত
বাসটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। ছবি: সংগৃহীত

গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানিসহ নানান হয়রানির ঘটনা ঘটেই চলছে। গত বছর বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য, গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব।

বাসটিতে নারী ও শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠা-নামার জন্য আলাদা দরজা আছে। সংরক্ষিত ১৫টি সিট ঠিক রেখে বাসের মোট আসনসংখ্যা ৫২ থেকে ৪৭টি করা হয়েছে। ফলে হুইলচেয়ার প্রবেশের জন্য র‍্যাম্প ও ভাঁজ করে রাখা যায়—এ ধরনের সিটের ব্যবস্থা করা গেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর আরামদায়ক আসনের সঙ্গে সিট বেল্ট আছে। নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য পর্দাঘেরা সিট, রাতে পর্যাপ্ত আলোর জন্য স্ট্রিপ লাইট ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় মোবাইল ফোন চার্জিং পয়েন্ট আছে। পুরো বাসেই নারী ও শিশুদের জন্য দেওয়া আছে নানান তথ্য।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি বাসকেই এই নতুন সাজে সজ্জিত করেছেন স্থপতি কানিজ ফাতিমা। তাঁর দেশজ নামক ব্যবসা উদ্যোগে কেয়ার বা চিলড্রেনস অ্যামিউজিং রাইড এনভায়রনমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্নার্ড ভ্যান লির ফাউন্ডেশনের অনুদানে বাসটির সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে গত আগস্ট মাসে। নতুন সজ্জিত বাসটি উদ্বোধন ও রাস্তায় নামার অপেক্ষায় আছে। আর বাসটিতে নারী–পুরুষ সবাই একসঙ্গেই যাতায়াত করতে পারবেন।

কানিজ ফাতিমা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএমের সাইট প্ল্যানার হিসেবে কর্মরত। তাঁর স্বামী রুবাইয়াত উর রহমানও একজন স্থপতি। স্বামীর পাশাপাশি নারী ও শিশুবান্ধব বাসটি বাস্তবায়নে আরেক স্থপতি অধরা প্রতীতিও সার্বিক সহায়তা করেন।

সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে কানিজ জানালেন, বিআরটিসির পুরোনো বাসকে নারী ও শিশুবান্ধব করতে বাড়তি খুব বেশি খরচ করতে হয়নি। ২০১৬ সালে দেশজ নামে একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেন কানিজ।

কানিজ বললেন, বাসে এক শিশুর হয়রানির পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছিল। শিশুটি মায়ের সঙ্গে বাসে ওঠে এবং সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এক লোক শিশুকে কোলে বসান। আর এই সুযোগেই শিশুটিকে তিনি যৌন হয়রানি করছিলেন। ঘটনাগুলো তো প্রতিনিয়তই ঘটছে।

নিজের নকশা করা বাসে কানিজ ফাতেমা।  ছবি: সংগৃহীত
নিজের নকশা করা বাসে কানিজ ফাতেমা। ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের শেষ দিকে বার্নার্ড ভ্যান লির ফাউন্ডেশনের আরবান ৯৫ চ্যালেঞ্জ নামে এক প্রতিযোগিতার কথা জানতে পারেন কানিজ। প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল—৯৫ সেন্টিমিটারে শিশুদের চোখের লেভেলে একটি শহর কেমন? কীভাবে শহরকে শিশুবান্ধব করা যায়? দৈনন্দিন যাতায়াতের সমস্যা, সেই সমস্যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা নিয়েই কাজ শুরু করেন কানিজ।

কানিজ বললেন, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অনেকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, বিরূপ অভিজ্ঞতার জন্য অনেকে বাসে চলাফেরাই বাদ দিয়েছেন। সিএনজি বা অন্য বাহন বেছে নিচ্ছেন অনেকে বা বাইরে যাওয়াই কমিয়ে দিচ্ছেন। কানিজ বুঝতে পারেন, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা যানবাহন দৈনন্দিনের এ সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। বিআরটিসির তখনকার চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া প্রকল্পটি গ্রহণ করেন।

কানিজ জানালেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজের বিভিন্ন স্তরে জাকিউল ইসলাম, তারিক বিন ইউসুফ, রিয়াজ আহমেদ জাবেরসহ অনেকেই যুক্ত হন। আর পরিবারের সমর্থন ছিল শতভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিআরটিসি, অ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ার্সের সহায়তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

কানিজ বললেন, ‘বিআরটিসির একটি পুরোনো বাস নিয়ে কাজ করেছি। এই প্রকল্প সফল হলে পরে নকশায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হবে।