তরুণদের ভাবনায় নিরাপদ সড়ক

বিজয়ীদের সঙ্গে আয়োজক ও অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
বিজয়ীদের সঙ্গে আয়োজক ও অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামল, নাওয়িদ কবির তখন নটর ডেম কলেজের ছাত্র। নিজের অবস্থান থেকে সে সময় নিজের মতো করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে শুধু আন্দোলন নয়, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা কিছু পরিবর্তন আনতে হবে—এই ভাবনাও তখন থেকেই মাথায় ছিল। ভাবনা বাস্তবায়নের পথে কিছুটা হলেও এগিয়েছেন বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র।

বাংলাদেশের সড়কগুলো কীভাবে নিরাপদ হতে পারে, সে বিষয়ে একটি ভিডিও নির্মাণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় রানার্সআপের পুরস্কার পেয়েছে নাওয়িদ ও তাঁর দল। তিনি বলছিলেন, ‘কী পুরস্কার পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমার ভাবনাটা সরকারের উচ্চপদস্থ মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি, এটাই বড় প্রাপ্তি।’ নাওয়িদের সঙ্গে মাথা নেড়ে সায় জানালেন তাঁর দলের আরও দুই সদস্য—আবরার মাহমুদ চৌধুরী ও মো. ফাহাদ ওয়াফিক।

গত বছর সেপ্টেম্বরে এই প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমা পড়ে ৩০টি ভিডিও। বিষয় একটাই—কীভাবে আমাদের সড়ক নিরাপদ করা যায়। যাচাই–বাছাইয়ের পর পাঁচটি ভিডিও উঠে আসে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী দলগুলোর হাতে। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী মো. মারফু-উম আবিদ, ফারহানা হক ও মো. ফাহিমুর রহমানের দল। দ্বিতীয় পুরস্কার পাওয়া দলের সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী—মো. ফাহমিদ-উল-আলম, ফারনাজ ফাওয়াদ হাসান ও রেশাদ করিম। তৃতীয় হয়েছে বুয়েটের মো. তৌফিকুজ্জামান। প্রথম রানার্সআপ দলটিও বুয়েটের। সদস্যরা হলেন প্রত্যয় রয়, সৃষ্টি রয় চৌধুরী ও ফাহিম ফয়সাল। বিচারকদের মধ্যে ছিলেন স্থপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের পরিচালন ব্যবস্থাপক ডানডান চেন, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাকসান্দ ও টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটিকে আরও চমকপ্রদ করেছে কার্টুন পিপলের আঁকা ‘লাইভ কার্টুন’।

প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। তবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান) মার্সি টেমবন আশ্বাস দিলেন, এখন থেকে প্রতিবছরই এই প্রতিযোগিতা হবে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো পরিসর হবে আরও বড়। তিনি বলেন, ‘নেলসন মেন্ডেলা বলেছিলেন, আজকের তরুণ, আগামী দিনের নেতা। তাই সড়কের সমস্যার সমাধানে আমরা তরুণদের দ্বারস্থ হয়েছি। এ ব্যাপারে তরুণদের আগ্রহ এবং আইডিয়া আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।’

মুগ্ধতার কথা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফারও। তিনি বলেন, ‘তরুণদের এই ভাবনাগুলোই প্রমাণ করে, সড়ক নিরাপত্তার সংকট সমাধান করা সম্ভব। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ কাজ করে যাবে।’ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

পুরস্কার হিসেবে পাওয়া আইফোন, নাকি সিভিতে এই পুরস্কারের সংযুক্তি—কোনটা বড় প্রাপ্তি? জানতে চেয়েছিলাম প্রথম স্থান অর্জনকারী দলের সদস্যদের কাছে। বুয়েটের তিন শিক্ষার্থী হেসে জানালেন, দুটির কোনোটিই নয়। দলের সদস্যদের হয়ে ফারহানা হক বললেন, ‘আমরা তিনজনই বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। ভবিষ্যতে পরিবহন ব্যবস্থাকে মূল বিষয় (মেজর) হিসেবে বেছে নিতে চাই। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য এই যে দীর্ঘ সময় নিয়ে আমরা গবেষণা করলাম, ভিডিও তৈরি করলাম, এই অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় বলে মনে করি।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পোর কথাও নিশ্চয়ই ফারহানাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সব অংশগ্রহণকারীকেই সাধুবাদ জানিয়ে ফারহানাদের প্রস্তাবিত ভাবনাটির কথা আলাদা করে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা যে দূষিত বায়ুতে নিশ্বাস নিচ্ছি, এর বড় কারণ হলো যানজট। প্রথম হওয়া দলটি গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, এটা খুবই ভালো। গণপরিবহন উন্নত হলে নিশ্চয়ই যানজট কমবে।’