বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে আজ তিনি চিকিৎসক

জান্নাতুল ফেরদৌস।  ছবি: সংগৃহীত
জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক অসচ্ছলতার পাশাপাশি বড় মেয়ে হওয়ায় অষ্টম শ্রেণি থেকে বাল্যবিবাহ ঠেকাতে হয়েছে। প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারেননি। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের হাজিগাঁও এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস (ঝর্ণা) আজ চিকিৎসক।

জান্নাতুল ফেরদৌসের পরীক্ষার ফল বরাবরই ভালো ছিল। ২০১৭ সালে সরকারি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান।

চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জান্নাতুল। বাবা ফরিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মা হাছিনা বেগম গৃহিণী। চার মেয়ে নিয়ে এ দম্পতির দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না।

জান্নাতুল বললেন, ‘আমি যে ঘরে পড়তাম, তার পাশের ঘরেই আমার বিয়ের আলোচনা চলত, সবই আমার কানে আসত। মানসিক চাপের মধ্যে থাকতাম সব সময়।’ বিয়ে ঠেকানোর জন্য অনেকটা জেদ করেই অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেলেন জান্নাতুল। তারপরও বিয়ের কানাঘুষা চলতেই থাকে। পাড়াপড়শিরা বলতে থাকেন, মেয়েদের কেন বিয়ে দিচ্ছেন না? পড়াশোনা করে কী হবে? মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পেয়ে জান্নাতুল খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন। শহরের কলেজে ভর্তি, চিকিৎসক হতে চাওয়ার বিষয়গুলো শুনে জান্নাতুলের বাবা বলতেন, এসব বড়লোকদের বিষয়। জান্নাতুল শহরের কলেজে পড়তে না পারলেও উচ্চমাধ্যমিকেও জিপিএ–৫ পেলেন।

জান্নাতুল বললেন, ‘বাবাকে অনেক শহরের একটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। ২০১০-১১ সেশনে সরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু পাস করতে পারলাম না। আবার সেই চিন্তা, এবার তো বিয়ে দিয়ে দেবে।’

জান্নাতুল বললেন, ‘তবে বাবা তখন বললেন, তুমি তো সব একবারেই করেছ। এইবার না হয় আরেকবার সুযোগ নাও। আমার যুদ্ধ শুরু হলো। তারপর যেদিন এমবিবিএস পাস করলাম, তখন মনে হলো, এখন আর বিয়ে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের।

জান্নাতুল ফেরদৌসের বাবা ফরিদুল ইসলাম বললেন, ‘নিজের কোনো জায়গা জমি ছিল না। রোজগারও তেমন ছিল না। চারটা মেয়ে। তাই চিন্তায় থাকতাম। তবে মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব এলে বিয়ে করবে না বলে ফিরিয়ে দিত। আজ সেই মেয়ে ডাক্তার।’

জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি সহায়তা পেয়েছেন বলেই এত দূর আসতে পেরেছেন। জান্নাতুল তাঁর মায়ের কথা বলতেও ভুললেন না। পরিবারে কঠোর পরিশ্রম করেও তিনি তাঁর সন্তানদের পড়াতে বসাতেন। তিনি হাল ছেড়ে দিলে হয়তো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব হতো না।