'এখন নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ করতে পারি'

সাগ্নিক একাই এসেছে ডে কেয়ারে। তাকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত। ছবি: মাকসুদা আজীজ
সাগ্নিক একাই এসেছে ডে কেয়ারে। তাকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত। ছবি: মাকসুদা আজীজ

সাগ্নিকের বয়স মাত্র চার বছর। একাই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটির (ডে কেয়ার) এ–মাথা থেকে ও–মাথা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার পেছনে দৌড়াচ্ছেন ডে কেয়ারের শিক্ষক ও অন্যরা। সাগ্নিকের বন্ধুরা কেউ আসেনি, তাতেও খুব একটা মন খারাপ হয়নি। ডে কেয়ারে ফিরতে পেরেই সে খুশি। প্রতিদিন এমন একটি–দুটি শিশুকে নিয়েই চলছে রাজধানীর মতিঝিলের ২১টি বেসরকারি ব্যাংকের সমন্বয়ে তৈরি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি।

এই ভবনের নিচের তলায়ই সরকারি ব্যাংকের কর্মীদের শিশুদের জন্য রয়েছে আরও একটি দিবাযত্ন কেন্দ্র। করোনার কারণে এখনো বন্ধ আছে সেটি। করোনাকালে ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন প্রত্যেক কর্মীকে কাজে আসতে হয় না। পালাক্রমে কাজ করেন কর্মীরা। তবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের জন্য সমন্বিত এ দিবাযত্ন কেন্দ্র খোলা রাখা হয় প্রতিদিনই; একজন শিশু এলে একজন শিশুর জন্যই।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে অন্য সব স্কুল ও দিবাযত্ন কেন্দ্র বন্ধ করে হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় এই দিবাযত্ন কেন্দ্রটিও। গত ২৮ মে সাধারণ ছুটি বাতিল করা হলে অফিসে ফিরতে হয় আরব বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত বিরাটের মা সুমনা রায়কে। সুমনার মতো আরও অনেককেই কাজে ফিরতে হয়, সমস্যা হয়ে যায়, করোনায় কীভাবে বাচ্চাদের আবার ফিরিয়ে আনা হবে দিবাযত্ন কেন্দ্রে।

 বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতি, যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরামর্শ করে গত ৩০ মে থেকে আবার চালু করা হয় দিবাযত্ন কেন্দ্রটি।

গত বুধবার দিবাযত্ন কেন্দ্রেই কথা হয় এর কেন্দ্রটির সমন্বয়ক রাকিবা খানের সঙ্গে। বললেন, ‘শুরুতে আমরাও এটাই ভাবছিলাম, কীভাবে বাচ্চাদের সুরক্ষা দেব, যেখানে বাচ্চারা তো বটেই, আমরা যাঁরা যত্ন নিই, তাঁরাও বিভিন্ন এলাকা থেকে, গণপরিবহন ব্যবহার করে আসি। তাই শুরুতেই আমরা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করি। এখনো অনেক বেশি বাচ্চা আসছে না। দু-একজন করে যারা আসে, তারাও নিয়মিত আসে না। ফলে এখন পর্যন্ত তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’

সামনে কেন্দ্রে আসা বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়বে, সে জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাকিবা ও তাঁর দল। নতুন স্বাভাবিকে শিশুদের অভ্যস্ত করতে বেশ বেগ পেতে হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। বিশেষ করে তাঁরা যখন একে অপরকে ছুঁয়ে দেয়, খেলাধুলা করে, একসঙ্গে খায় বা পাশাপাশি ঘুমায়।

বুধবার সাগ্নিকের মা সুমনা এসেছিলেন দুপুরের বিরতির ফাঁকে ছেলেকে একটু দেখতে। দিবাযত্ন কেন্দ্র আবার শুরু হওয়ায় তাঁর সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বললেন, ‘সাত মাস বয়স থেকে সাগ্নিক এখানে থাকে। ওকে এখানে রেখে কাজ করে আমি খুবই নিশ্চিন্ত বোধ করি। সাধারণ ছুটি বাতিলের পর যখন কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ আসে, আমি প্রথমই খোঁজ নিই দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু হবে নাকি। চালু হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি, এখন নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ করতে পারি।’