চীনে আমাদের ঈদ

ঈদের দিন হেবেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ঈদের দিন হেবেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

একঘেঁয়ে জীবনের গতানুগতিক ধারাবাহিকতা কেটে উঠতেই যেন উৎসবের বড্ড প্রয়োজন। তাই তো বিভিন্ন সামাজিক উৎসব বা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে ধর্মীয় উৎসব। ধর্ম ভেদে মানুষ বিভিন্ন কায়দায় তাদের ধর্মীয় উৎসবাদি পালন করে। বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে আনন্দের কড়া নেড়ে প্রতিবছরই ঘুরেফিরে উৎসব আকারে আসে ঈদ। চীনে এবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় ৫ অক্টোবর।
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মুসলমানের কাছে খুবই আনন্দের। আমরা যারা প্রবাসে থাকি, তাদের দেহ থাকে প্রবাসে, আর মনটা দেশে। ছোটবেলা থেকেই ঈদ মানে ছিল নতুন জামাকাপড় পরা। যতটুকু সম্ভব ঘুরে বেড়ানো, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা বিশেষ পরিচিতদের বাড়িতে।

ঈদের দিন হেবেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ঈদের দিন হেবেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দগুলোও ছোট হয়ে আসে। আর প্রবাসজীবনের ঈদ মানে ভোরে ফজর নামাজের পরপরই ঈদের নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুম দেওয়া। ঈদের দিনটি প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো খুবই আনন্দের। কিন্তু প্রবাসে এটা খুব মিস করি!
এবার চীনে বাংলাদেশের একদিন আগে ঈদ হয়েছে । ঈদের দিনটা অন্যান্য দিন থেকে কিছুটা আলাদা। সেদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে রুমমেটদের ঘুম থেকে জাগালাম। এরপর সবাই মিলে রান্নার বাবস্থা করলাম। দেশি সেমাই ও লাচ্ছা দিয়ে শুরু করলাম। সেমাই ও লাচ্ছা গতবার দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলাম। আমি আবার ভালো রান্না পারি না। তাই আমি থাকি মসলা বাটা আর পেঁয়াজ, রসুন, আদা এইসব কাটাকুটির জন্য। সবশেষ আইটেম ছিল খিচুড়ি আর মাংস। যা হোক, রান্না শেষ হওয়ার পর সবাই নামাজের জন্য তৈরি হতে লাগল।
স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ সকাল ১০টায়। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাংলাদেশে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করতে করতে সবাই নামাজ পড়তে গেলাম। মসজিদ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭-৮ কিমি. দূরে। যেতে হয় বাস অথবা ট্যাক্সি করে। নামাজের খুতবা হয় চাইনিজ ভাষায়। আর এটা আমরা কিছুই বুঝি না। চুপচাপ বসে থাকতে হয়। নামাজ শেষে সবাই কোলাকুলি আর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করি। কিছুটা মজা করার চেষ্টাও আমরা করি। সেটা হলো ছবি তোলা। এভাবে যতটা সম্ভব ঈদটা আনন্দময় করে তোলা। কিছু সময়ের জন্য হলেও দেশের আনন্দের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করা।
নামাজ শেষে ছাত্রাবাসে এসে হালকা নাশতা করে বাসায় কথা বললাম। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। বিকেলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ফেংনান (আমাদের সিটির একটা সুন্দর জায়গা ) ঘুরতে যাব। তারপর সবাই মিলে গেলাম ফেংনানের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে। আর এভাবেই আমরা আমাদের প্রবাসজীবনের আরও একটা ঈদ পরিবার ছাড়া কাটিয়ে দিলাম।
মো. আরিফুল হক
হেবেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়
টাংশান, হেবেই, চীন