অমিক্রন মোকাবিলায় নতুন টিকা নিয়ে তোড়জোড়
বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে বিদ্যমান টিকাগুলো অমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
এ পরিস্থিতিতে নতুন টিকা তৈরির পথে হাঁটছে টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠাগুলো। ইতিমধ্যে মডার্না, ফাইজার, জনসন, বায়োএনটেক নতুন ধরনের বিরুদ্ধে টিকা তৈরির কথা বলেছে। প্রয়োজনে নতুন টিকা তৈরির কথা বলেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও।
তবে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন প্রতিরোধ নিয়ে কিছুটা দুঃসংবাদ শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক মডার্নার প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ব্যানসেল। যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিদ্যমান করোনার টিকাগুলো অমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারছেন না। বর্তমান টিকাগুলোর কার্যকারিতা বিষয়ে তথ্য পেতে আরও দুই সপ্তাহ লাগবে। এদিকে নতুন টিকা তৈরি করতেও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।
তবে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির (ইএমএ) নির্বাহী পরিচালক এমার কুক ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বলেছেন, করোনার নতুন ধরনটি ছড়িয়ে পড়লেও বিদ্যমান করোনার টিকা সুরক্ষা দিয়ে যাবে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রিয়া আমন বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইউরোপের ১০টি দেশে ৪২ জনের অমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে আরও ৬ জন সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, যাঁদের অমিক্রন শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগের মৃদু লক্ষণ রয়েছে। কারও কারও কোনো লক্ষণ নেই। কম বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন ধরন অমিক্রন ঠেকাতে বিদ্যমান টিকা কাজ করবে না, এমন কোনো প্রমাণ নেই। প্রয়োজন পড়লে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে দ্রুত নতুন টিকা তৈরি করতে প্রস্তুত গবেষকেরা।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার বলছে, করোনা টিকার নতুন সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে তারা। গত সোমবার ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালবার্ট বোরলা সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, অমিক্রন মোকাবিলায় প্রচলিত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে যদি দেখা যায়, নতুন ধরনটির বিরুদ্ধে টিকা তুলনামূলক কম সুরক্ষা দেয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, নতুন টিকা তৈরির দরকার রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি করোনা চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ওষুধ এনেছে ফাইজার। বোরলা বলেন, এই ওষুধ অমিক্রনসহ করোনার অন্য ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসায় কাজ করবে বলে ‘খুবই আত্মবিশ্বাসী’ তিনি।
অমিক্রন মোকাবিলায় টিকা নিয়ে কাজ করছে জনসন অ্যান্ড জনসন ও মডার্নাও। সোমবারেই জনসন জানায়, নতুন ধরনটির জন্য টিকা আনতে প্রয়োজনমতো সামনে এগোবে তারা। এর আগে শুক্রবার মডার্না অমিক্রন মোকাবিলায় বুস্টার ডোজ বানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল।
সম্প্রতি আফ্রিকা অঞ্চলে শনাক্ত হয় অমিক্রন। ধারণা করা হচ্ছে, ডেলটাসহ করোনার আগের সব ধরনের চেয়ে এটি অনেক বেশি সংক্রামক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আশঙ্কা, নতুন এ ধরন বিশ্বের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি দেশে করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৪০টির বেশি দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গতকাল প্রথমবারের মতো জাপান ও অস্ট্রেলিয়া অমিক্রন শনাক্ত রোগী পাওয়ার কথা জানায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকদের বক্তব্য
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮১ শতাংশের বসবাস গাওতেং প্রদেশে। এখানেই চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ডা. উনবেন পিল্লায়। সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন তিনি। উনবেন বলেন, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই উপসর্গ মৃদু। জ্বর জ্বর অনুভূতি, শুকনা কাশি, জ্বর, রাতে ঘাম ও গায়ে প্রচণ্ড ব্যথার মতো উপসর্গ রয়েছে। তিনি মনে করেন, বেশির ভাগ রোগীর চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের টিকা নেওয়া আছে, তাঁদের অবস্থা টিকা না নেওয়া মানুষের তুলনায় ভালো থাকতে দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যাঁরা অমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২০ ও ৩০-এর কোঠায়। এ বয়সী মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ সময় কোভিড উপসর্গ মৃদু হয় বলে দাবি করে থাকেন চিকিৎসকেরা।
বৈশ্বিক চুক্তিতে জোর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কষ্টার্জিত অর্জনগুলো ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তিনি বলেছেন, করোনার অমিক্রন ধরন বুঝিয়ে দিয়েছে, মহামারিসংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক চুক্তি কতটা জরুরি। সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যদেশগুলোর তিন দিনের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনে তেদরোস এসব কথা বলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর অন্য দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।
‘আতঙ্কিত’ হতে মানা করলেন বাইডেন
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, করোনার অমিক্রন ধরন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ‘আতঙ্কিত’ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আপাতত দেশটিতে লকডাউন কিংবা চলাচলে বিধিনিষেধ বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।