পুরোনো সংগঠন আল কায়েদাকে বাদ দিয়ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতি আনুগত্য পোষণ করা হবে কিনা—তা নিয়ে সোমালিয়ার আল-শাবাব জঙ্গিদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। আইএস যখন ইরাক ও সিরিয়ায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তখনই আল-শাবাবের জঙ্গিদের মধ্যে এ বিভক্তির সূত্রপাত হয়।
শাবাবের এ বিভক্তি এমন সময় এল যখন আইএস হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ-বিদেশের জঙ্গিদের প্রথম পছন্দ। যদিও আল-কায়েদা সম্প্রতি ইয়েমেনে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল-শাবাবের এক কমান্ডার এএফপিকে বলেন, ‘সব মুসলিমকে তাঁদের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কাজেই শাবাব যদি আইএসে যোগ দেয় তাতে বিস্ময়ের কী আছে? শত্রুদের ওপর কঠোর আঘাত হানতে আইএসের সঙ্গে অংশ নিতে পারলে শাবাব আরও খুশি হবে।’
সামরিকভাবে চাপে থাকার মধ্যেই আল শাবাব আইএসের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা স্বীকার করল। তবে চাপে থাকলেও সংগঠনটির এখনো গেরিলা ও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর সামর্থ্য রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে তারা সোমালিয়া ও কেনিয়ার বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। চলতি মাসে শাবাব কেনিয়ার সীমান্তবর্তী গারিসার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৪৮ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তাদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ও অস্ত্রধারীরা মোগাদিসুতে একটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ এবং গারো শহরে জাতিসংঘের একটি মিনিবাসে হামলা চালায়।
আনুগত্যের প্রশ্নে আল-শাবাবের এই দোদুল্যমানতাকে অনেকেই তাদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। সোমালিয়ার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘শাবাব এখন বেপরোয়া। সোমালিয়ায় তারা অনেক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এখন তহবিল ও নৈতিক সমর্থন পাওয়ার জন্য তারা সম্ভবত ইরাক ও সিরিয়ার তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছে।’
তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। অনেকেই বলছেন, শাবাব এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা বিষয়টি বিবেচনা করছে। সোমালিয়ার প্রধানমন্ত্রী ওমর আবদিরাশিদ আলী শারমারকে বলেন, ‘শাবাবের মূল নেতারা আল-কায়েদা থেকে সরে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবেন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক করছেন। আইএস ও আল-কায়েদা উভয়ই শাবাবকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শারমারকে বলেন, ইয়েমেনে সম্প্রতি আল-কায়েদা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা শাবাবকে সাহস ও শক্তি জোগাতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখন সংকটপূর্ণ সময়, কেননা ইয়েমেনের সংঘাত খুব সহজেই সোমালিয়ায় চলে আসতে পারে। এর মাধ্যমে এডেন উপদ্বীপ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যাওয়ার করিডোরে পরিণত হতে পারে।’
আইএস এবং আল-কায়েদা, কোন সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা হবে—তা নিয়ে আল-শাবাবের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে দক্ষিণ সোমালিয়ার শাবাবের ঘাঁটিগুলোর সূত্রও নিশ্চিত করেছে। হাসান নূর নামের এক সূত্র জানায়, ‘শাবাবের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে আমরা শুনেছি। তবে তাঁরা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। শাবাবের অনেকেই এখনো আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে চান।’
বিশ্লেষকেরা বলেন, শাবাবের নেতা আহমেদ ওমর আবু উবাইদাহ নামে পরিচিত আহমেদ দিরিয়ে নিজে আল-কায়েদার অনুগত। এর আরেক নেতা প্রভাবশালী সাবেক গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মাহাদ কারাতে আবার আইএসের প্রতি আনুগত্য রাখার পক্ষে। অনেকের ধারণা, আল-কায়েদাকে বাদ দিয়ে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলে শাবাব আর্থিক সুবিধা পাবে।
পশ্চিমা এক নিরাপত্তা সূত্রের অভিমত, ‘শাবাব আইএসের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের অর্থ-সম্পদ বাড়বে, যা এই মুহূর্তে আল-কায়েদা তাদের দিতে পারছে না।’
প্যারিসের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ও সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ রোল্যান্ড মার্শাল বলেন, ‘কোনো সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে তার শক্তির কিছুটা উত্তরাধিকারী হওয়া যায়।’ তবে শাবাব এবং আল-কায়েদার সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের হওয়ায় আনুগত্য পরিবর্তন করাটা হবে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। একইসঙ্গে কঠিন সিদ্ধান্ত।