আদানির সংশ্লিষ্টতা থাকায় পুরস্কার নিলেন না ভারতীয় কবি

আদানি সাম্রাজ্যের কর্নধার গৌতম আদানি
ছবি: এএফপি

ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা থাকায় একটি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির তামিলনাড়ু রাজ্যর এক নারী কবি। তাঁর ভাষ্য, পুরস্কার নিলে তা হতো নীতিবিরোধী। গত বুধবার চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে ‘দেবী অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ নামের ওই পুরস্কার দেওয়া হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কবির নাম সুকির্থরানি। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী। সুকির্থরানিসহ মোট ১২ জনকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।

‘দেবী অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’—এর আয়োজন করেছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল আদানি গ্রুপ। অন্য পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিল ভেলর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং পোশাকের ব্র্যান্ড আহুজা সন্স।

সম্প্রতি আদানি গ্রুপের নানা অনিয়ম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবের বিষয়ে জালিয়াতি করেছে। তাদের ভাষ্য, আদানি গ্রুপ ভুল তথ্য দিয়ে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছে। এর মাধ্যমে তারা বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ২৪ জানুয়ারি থেকে গৌতম আদানির মালিকানাধীন সাতটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার মূলধন হারিয়েছে। এ ছাড়া ভারতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে গৌতম আদানি ও আদানি গ্রুপ।

আদানি গ্রুপ নিয়ে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে সুকির্থরানি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ চেন্নাইয়ের কাট্টুপল্লি বন্দরের উন্নয়ন করছে তার সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে।’

সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় সুকির্থরানিকে দেবী অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রথমে তিনি এই পুরস্কার নিতে রাজি হয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন এই পুরস্কারের মূল পৃষ্ঠপোষক আদানি গ্রুপ। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

আরও পড়ুন

সুকির্থরানি বলেন, ‘একজন লেখক হিসেবে আদানি গ্রুপের মূল পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত কোনো আয়োজনে যোগ দেওয়া আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমার নীতি, লেখালিখি ও দর্শন—যার ওপর ভিত্তি করে এত দূর এগিয়েছি তার পরিপন্থী।’  

তবে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় নির্বাচক দলকে ধন্যবাদ জানান এই কবি। তিনি বলেন, ‘আমাকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেছে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি দল। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি আমি সম্মান জানাই। আমাকে নির্বাচিত করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছি। সেখানে আমি বলেছি, যেহেতু অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক আদানি গ্রুপ, তাই আমি এই পুরস্কার নিতে পারব না।’

আরও পড়ুন

আদানি গ্রুপ নিয়ে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে সুকির্থরানি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ চেন্নাইয়ের কাট্টুপল্লি বন্দরের উন্নয়ন করছে, তার সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে নিচ্ছে। ফলে গ্রামের শ্রমিকেরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আমি পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছি।’  

১৯৭৩ সালে দরিদ্র একটি দলিত পরিবারের জন্ম সুকির্থরানির। তাঁর বাবা একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। লেখালেখির ক্ষেত্রে সাহসী ও স্পষ্টবাদী হওয়ার কারণে তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ভারতে জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন