ইসরায়েলি ঔদ্ধত্যে এখনো পরাধীন ফিলিস্তিন

মেনাচিম ক্লিন ইসরায়েলের বার ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। ২০০০ সালে তিনি ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের (পিএলও) সঙ্গে আলোচনাকালে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি জেনেভা ইনিশিয়েটিভেরও নেতা। তাঁর নতুন বই আরাফাত অ্যান্ড আব্বাস: পোর্ট্রেট অব লিডারশিপ ইন আ স্টেট পোস্টপন্ড। ইসরায়েলের বেপরোয়া নীতির কারণে কীভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‍+৯৭২ সাময়িকীতে লিখেছেন তিনি।

ইসরায়েলের বোমা হামলার পর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গাজার একটি এলাকা। গতকাল ইসরায়েল–গাজা সীমান্তেছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ ও হামাস ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে একটি চুক্তি করেছিল। চুক্তিটা ছিল এমন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে এবং হামাস ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের (পিএলও) সঙ্গে এক হয়ে যাবে। অসলো চুক্তির সঙ্গে সংগতি রেখেই ওই নির্বাচন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এই নির্বাচনের পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে।

ওই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক আইনকে সমুন্নত রাখা, ১৯৬৭ সালের সীমান্ত ধরে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পিএলওকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম এগিয়ে যাওয়া এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজা শাসনের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই চুক্তিপত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইউরোপীয় সরকারগুলোর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আশা ছিল, তাঁরা হামাসের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সমর্থন দেবেন এবং পূর্ব জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের দখল করা অঞ্চলে ভোট আয়োজনে সহযোগিতা করতে ইসরায়েলকে চাপ দেবেন।

ওই সময় আব্বাস ভেবেছিলেন, এই চুক্তিপত্রে হামাসের স্বাক্ষর তাঁর জন্য বিরাট এক জয়। চুক্তিপত্রে যুক্ত করা হয়েছিল, হামাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবে না। আর এটাই তাঁকে আগামী নির্বাচনে সহজে জয় এনে দেবে।

ফাতাহ–হামাস এই চুক্তি একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে হয়নি। চার বছর আগে হামাস তাদের ‘সাধারণ মূলনীতি’ প্রকাশ করেছিল। তাদের সংশোধিত এই সাংগঠনিক নথিপত্রে লক্ষণীয়ভাবে দেখা যায়, তাঁরা ১৯৮৭ সালের সেই মৌলবাদী নীতি থেকে অনেকটা সরে এসেছে। অসলো চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা প্রথাগত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছিল।

এমনকি ২০১৪ সালে দোহায় কাতারের আমিরের উপস্থিতিতে ও মধ্যস্থতায় খালেদ মেশালের নেতৃত্বে হামাস এবং আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহর নেতারা বৈঠক করেছিলেন। তাঁদের বৈঠকের আলোচ্যসূচি কাতার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছিল। ওই বৈঠকে হামাস নেতারা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘ফাতাহ যদি ১৯৬৭ সালের সীমানার সঙ্গে সংগতি রেখে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে একটা সমাধানে আসতে পারে, তাতে আমরা হস্তক্ষেপ করব না।’

আরও পড়ুন

যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, তাই হলো। ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আপত্তি দিয়ে বসল। তারা ফিলিস্তিনের দখল করা ও নিজেদের অংশ করে নেওয়া ভূখণ্ডকে তাদের সার্বভৌমত্ব বলে দাবি করল। এরপরও হামাস যেকোনোভাবে হোক, নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে ছিল। ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধও তারা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি বাতিল করতে আব্বাসকে প্রচণ্ড চাপ দেয়।

নির্বাচন স্থগিত করার ব্যাপারে আব্বাসের সিদ্ধান্তে কিছু রাজনৈতিক কারণ ছিল। একইভাবে হামাসও একই কারণে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছিল। ফিলিস্তিনের জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ মাহমুদ আব্বাসের শাসনের অবসান চায়। ফলে হামাস আরেকটি নির্বাচনে জেতার অবস্থায় ছিল।

অধিকন্তু ওই জনমত জরিপে দেখা গেছে, মারওয়ান বারগুতি ইসরায়েলি কারাগারে থেকেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলে তিনিই জয়ী হবেন। নির্বাচন যদি বাতিল না হতো এবং গণতান্ত্রিকভাবে কোনো জনপ্রিয় নেতা ক্ষমতায় আসতেন, তাহলে আমরা ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখতে পারতাম।

শেষ পর্যন্ত গভীর চাপের মুখে আব্বাস নতি স্বীকার করলেন। কিছুদিন পর ‘ইন্তিফাদা’ শুরু হলো। এর সঙ্গে হামাস ‘সোর্ড অব জেরুজালেম’ আর ইসরায়েল ‘অপারেশন গার্ডিয়ান অব দ্য ওয়ালস’ শুরু করল। নিউইয়র্ক টাইমসওয়াশিংটন পোস্ট–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হামাসের সামরিক শাখা আল–আকসা ব্রিগেড ওই সময় থেকে গত ৭ অক্টোবরের অভিযান ‘আল–আকসা ফ্লাড’–এর পরিকল্পনা শুরু করেছিল।

‘সেরা সময় ভেবেছিল ইসরায়েল’

গত অক্টোবরে হামাসের হামলা এবং পাঁচ দশক আগে ইয়োম কিপুর যুদ্ধের আগে ইসরায়েলে হামলার মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখছেন অনেকে। ২০২৩ এবং ১৯৭৩ সালের এসব হামলার আগে শত্রুপক্ষের সামরিক তৎপরতার প্রতি যথেষ্ট নজর দেননি ইসরায়েলের গোয়েন্দারা।

১৯৭৩ সালে হামলার আগে ইসরায়েলের কাছে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন জর্ডানের তৎকালীন বাদশাহ হুসেইন। আর হামাসের সাম্প্রতিক হামলার আগে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল মিসর। দুই সময়েই ইসরায়েল একটি ভুল ধারণা নিয়ে বসে ছিল যে তাদের সামরিক বাহিনী শত্রুদের ইতিমধ্যে সফলভাবে নির্মূল করেছে।

প্রতিটি হামলার পর বড় বদল এসেছিল। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পরও মিসর ও সিরিয়া যেটুকু অর্জন করেছিল, তা ‘আরবদের সম্মান ফিরিয়ে এনেছিল’। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধে ইসরায়েলের কাছে হারানো কিছু ভূখণ্ড আবার আরবদের দখলে এসেছিল ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে। একইভাবে গত অক্টোবরে হামাস যে তীব্র হামলা চালিয়েছে, এমনভাবে ফিলিস্তিনি অন্য কোনো সংগঠনই ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারেনি। ইসরায়েল কখনো এই সত্যটা মুছে ফেলতে পারবে না।

আরও পড়ুন

১৯৭৩ সালের মতো গত ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের ব্যর্থতার মূলে রয়েছে রাজনীতি। ১৯৭৩ সালের হামলার দুই বছর আগে ১৯৭১ সালে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ইসরায়েলকে একটি আংশিক সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েল সুয়েজ খাল থেকে মিতলা প্রণালি ও উম হাশিবা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দেবে। আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে সুয়েজ খাল অবমুক্ত হবে।

ওই প্রস্তাবটির সঙ্গে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ডায়ানের পরিকল্পনার মিল ছিল। সাদাত এ অঞ্চলে কূটনৈতিক অচলাবস্থা স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী গোলডা মেয়ার সাদাতের ওপর আস্থা রাখেননি। মেয়ারের ভাষ্য ছিল, আনোয়ার সাদাত ও তাঁর পূর্বসূরি জামাল আবদেল নাসেরের মধ্যে কোনো তফাত নেই। দুজনই ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাইতেন।

১৯৭৩ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ইসরায়েলের ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি নাগরিক নিহত হন। আটক করা হয় দেশটির ৩০০ সেনাকে। পরে ১৯৭৪ সালে মিসরের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে যায় ইসরায়েল। ওই চুক্তির অনেক শর্তের সঙ্গে ১৯৭১ সালের আনোয়ার সাদাতের প্রস্তাবের বড় মিল ছিল।

১৯৭১ সালে আনোয়ার সাদাতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মেইর মনে করতেন, ইসরায়েলের অবস্থা ‘এর চেয়ে কখনো ভালো ছিল না’। ২০২১ সালে একই গোঁয়ার্তুমি দেখিয়েছিল ইসরায়েল। সে বছর ফিলিস্তিনে নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল দেশটি। হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে মাহমুদ আব্বাসকে চাপও দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের মতো ২০২১ সালেও তারা ভেবেছিল, ইসরায়েল এখন সেরা সময় পার করছে।

ইসরায়েলের ‘তিন নীতি’

২০০৬ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে তিনটি নীতি নিয়েছে ইসরায়েল। এগুলোতে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। প্রথমত; বাইরে থেকেই গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীরের সঙ্গে গাজা যাতে সামাজিক, আইনি ও রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে, তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে হামাস ও ফাতাহর (পশ্চিম তীরের শাসক দল) মধ্যে বিরোধ যেন টিকে থাকে, তা নিশ্চিত করা। এ কারণে বিদেশে অর্থসহায়তা পাওয়ার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে হামাসকে বশে রাখার চেষ্টা করে আসছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে হামাসের ক্ষমতা যাতে একচ্ছত্র হয়ে না ওঠে, সে জন্য কিছু সময় পরপর গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে এবং হামাসকে নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য করেছে।

দ্বিতীয়ত; ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব–সংঘাত নিরসনের চেষ্টা না করে উল্টো জিইয়ে রাখার চেষ্টাই করেছে ইসরায়েল। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন বাড়ানোর পাশাপাশি জর্ডান নদী ও ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে ইসরায়েল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আর ফাতাহ পরিচালিত ফিলিস্তিন সরকারকে বানিয়েছে তাদের আধা ঠিকাদার, যারা ইসরায়েলের পক্ষেই ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

তৃতীয়ত; আরব দেশগুলোর সঙ্গে সংঘাত–বিরোধ কীভাবে কমানো যায়, সে লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। আর এটা করা হয়েছে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির মাধ্যমে। এতে করে ফিলিস্তিনিরা আরও একঘরে ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে হওয়া এমন একটি চুক্তি ছিল ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এ চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। এসব আরব দেশ যে ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য ইসরায়েলের মর্জির ওপর ছেড়ে দিয়েছে, এই চুক্তি তারই ঘোষণা।

সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ইসরায়েলের এসব নীতি যখন সাফল্যের চূড়ার মুখে দেখছিল এবং গাজার চারপাশ ঘিরে অত্যাধুনিক দেয়াল নির্মাণ করার কাজও প্রায় শেষ, ঠিক তখনই গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে করে ইসরায়েলের এসব নীতি সাফল্যের চূড়ার মুখ দেখার বদলে হঠাৎ ধসে পড়ে।

ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলের এসব নীতি যে নেতানিয়াহু একাই করেছেন, বিষয়টি তেমনও নয়। সম্প্রতি আলোর মুখ দেখার বদলে নতুন জটিলতা তৈরি হওয়ার আগে ২০০৬ সাল থেকে ইসরায়েলের রাজনীতি ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর নীতিনির্ধারকেরা এসব নীতি বাস্তবায়নে ‘অক্লান্ত’ পরিশ্রম করে আসছেন। এতে দেশটির সব রাজনীতিকের ‘শ্রম’ যেমন ছিল, তেমনি ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেল ও গোয়েন্দাপ্রধানদেরও।

হামাসের হামলার কারণে তাঁদের এ ‘স্বপ্ন’ যে বড় এক ব্যর্থতার মুখে পড়েছে, সেটা অনেকেই এখনো ‘হজম’ করতে পারছেন না। বরং তাঁরা এখন আগের এসব নীতিতে ফিরে যেতে চাইছেন এবং পশ্চিম তীরের ফাতাহর মতো গাজায়ও ইসরায়েলের হয়ে কাজ করবে, এমন ‘ঠিকাদার’ খুঁজছেন। এটা হতে পারে গাজার কোনো সংগঠন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ অথবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা।

কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা আইনত এই দায়িত্ব না দিলে ইসরায়েলের চাওয়া অনুযায়ী এই পদ্ধতি কাজে আসবে না। অন্যথায়, এমন কোনো সংস্থা বা সংগঠন যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের মনে এ ধারণা তৈরি হবে যে নিষ্ঠুর দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত হয়ে গেছে।

অন্য কথায় বলতে গেলে, ফিলিস্তিন নিয়ে নতুন একটি বাস্তবতা তৈরির জন্য ২০২১ সালে যে রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল, আমাদের অবশ্যই সেখানে ফিরে যেতে হবে। নির্বাচন হওয়া মানেই শুধু ফল পাওয়া নয়, এটা একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থান ও নীতি বদলের মঞ্চও। যুদ্ধবিরতি ছাড়াও বড় এক পালাবদলের জন্য ফিলিস্তিনে নির্বাচন প্রয়োজন, যাতে করে ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলে যাওয়া সব ভূখণ্ড নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন

ইতিহাসেও এমন নজির আছে। ১৯৭৩–৭৪ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ইসরায়েলকে মিসরের সঙ্গে নতুন করে সামরিক সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত রেখেছিলেন। ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে দুই দফায় সামরিক চুক্তির তত্ত্বাবধানও করেছিলেন কিসিঞ্জার।

এসব চুক্তি ১৯৭৭ সালে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের জেরুজালেম সফর এবং ১৯৭৮–৭৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি সমঝোতার পথ তৈরি করে দেয়।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাত নিরসনের সক্ষমতা ও সদিচ্ছা রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কি বর্তমানের যুক্তরাষ্ট্রে আছে?