মাদাগাস্কারে ‘জেন–জি’দের বিক্ষোভে যোগ দিল সেনাদের একাংশ

শনিবার মাদাগাস্কারের সিএপিএসএটি সেনাদলের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। ১১ অক্টোবর, ২০২৫ছবি: এএফপি

মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর একটি অংশ কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে রাজধানী আন্তানানারিভোতে জমায়েত হওয়া হাজার হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমাগত জোরালো হয়ে ওঠার মধ্যে গতকাল শনিবার এমন ঘটনা ঘটল।

বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। গতকাল তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীরা প্রথমবারের মতো মাদাগাস্কারের রাজধানী শহরের মে থার্টিন চত্বরে প্রবেশ করেন। চলমান এ বিক্ষোভে এ পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি এটি। সম্প্রতি কেনিয়া ও নেপালে হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অনুপ্রেরণায় ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এমন বিক্ষোভ হচ্ছে। কেনিয়া ও নেপালের ওই বিক্ষোভ জেন–জি বিক্ষোভ হিসেবে পরিচিত।

গতকাল মাদাগাস্কারের পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর কিছুসংখ্যক সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভকারীরা তখন সেনাসদস্যদের স্বাগত জানান এবং উল্লাস প্রকাশ করেন।

সোয়ানিয়েরানা অঞ্চলের একটি ঘাঁটির সেনাসদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছেন। সেখানে তাঁরা বলেন, ‘সেনা, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ—চলুন, এক হয়ে কাজ করি। বেতনের বিনিময়ে আমাদের বন্ধু, ভাইবোনদের গুলি করার আদেশ আমরা মেনে নেব না।’

এর আগে আন্তানানারিভো শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সেনা ব্যারাকে সেনাসদস্যদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। ওই সময় মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট সিএপিএসএটির সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভকারীদের করা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আবেদন জানান, যা বিরল ঘটনা। কারণ, ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার উত্থানের ক্ষেত্রে এই সিএপিএসএটি ইউনিটের মুখ্য ভূমিকা ছিল।

সোয়ানিয়েরানা অঞ্চলের একটি ঘাঁটির সেনাসদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেখানে তাঁরা বলেন, ‘সেনা, আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ—চলুন, এক হয়ে কাজ করি। বেতনের বিনিময়ে আমাদের বন্ধু, ভাইবোনদের গুলি করার আদেশ আমরা মেনে নেব না।’

আরও পড়ুন

বিমানবন্দরে নিযুক্ত সেনাদের উদ্দেশে তাঁরা বলেছেন, কোনো উড়োজাহাজকে উড়তে না দিতে। অন্য সেনাঘাঁটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘আপনাদের বন্ধুদের ওপর গুলি করার আদেশ মানবেন না।’

ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘ফটকগুলো বন্ধ করে দিন এবং আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন। আপনাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মানবেন না। যারা আপনাদের সহযোদ্ধাদের ওপর গুলি করার আদেশ দিচ্ছে তাদের দিকে আপনারা অস্ত্র তাক করুন। কারণ, যদি আমরা মারা যাই, তারা আমাদের পরিবারের দেখভাল করবে না।’

সেনাদের ভিডিও বার্তায় বলা হয়, ‘ফটকগুলো বন্ধ করে দিন এবং আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করুন। আপনাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মানবেন না। যারা আপনাদের সহযোদ্ধাদের ওপর গুলি করার আদেশ দিচ্ছে তাদের দিকে আপনারা অস্ত্র তাক করুন। কারণ, যদি আমরা মারা যাই, তারা আমাদের পরিবারের দেখভাল করবে না।’

গতকাল ঠিক কতজন সেনাসদস্য বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নতুন নিয়োগ পাওয়া সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী দেরামাসিনজাকা মানানৎসোয়া রাকোতোআরিভেলো সেনাসদস্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে রাকোতোআরিভেলো বলেন, ‘যেসব ভাই আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন, আমরা তাঁদের আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

রাকোতোআরিভেলো আরও বলেন, মালাগাসির সেনাবাহিনী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা বজায় রেখেছে এবং জাতির শেষ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করলে কয়েকজন আহত হন।

আরও পড়ুন