সুদানে রক্তক্ষয়ী হামলা–সহিংসতায় জড়িত আরএসএফপ্রধান কে এই হেমেদতি
সুদানে সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। সুদানের সেনা–সমর্থিত সরকার এ হামলার জন্য সরকারবিরোধী আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করেছে। এমন পটভূমিতে আরএসএফ কারা, আরএসএফপ্রধান কে, তা নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশ হলো।
মোহামেদ হামদান দাগালো, ‘হেমেদতি’ নামেই পরিচিত। সুদানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। তাঁর আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এখন দেশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরএসএফ গত মাসে এল-ফাশের শহর দখল করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। কারণ, এটি ছিল সুদানের সেনাবাহিনী ও তাঁদের স্থানীয় মিত্রদের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরে থাকা শেষ ঘাঁটি।
হেমেদতির জন্ম ১৯৭৪, মতান্তরে ১৯৭৫ সালে। গ্রামের মানুষের মতো তাঁরও জন্মের সঠিক তারিখ ও স্থান নিবন্ধন করা হয়নি। তিনি সাধারণ এক পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর পরিবার মহারিয়া শাখার রিজেইগাত সম্প্রদায়ের, যারা ঐতিহ্যগতভাবে চাদ ও দারফুরে উট পালন করে জীবিকা নির্বাহ করত।
হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।
হেমেদতির চাচা জুমা দাগালোর নেতৃত্বে তাঁর সম্প্রদায় ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধানে দারফুরে আসে। পরে সেখানে বসবাসের অনুমতি পায়। কৈশোরেই পড়াশোনা ছেড়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া ও মিসরে উটের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন হেমেদতি।
সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের অবহেলার কারণে দারফুর এক দরিদ্র ও আইনের শাসনবিহীন এলাকায় পরিণত হয়। এ কারণে সে সময় দারফুর সুদানের ‘বন্য পশ্চিম’ এলাকা হিসেবে পরিচিতি পায়।
এর মধ্যে জানজাবিদ নামে পরিচিত আরব মিলিশিয়ারা ফুর সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে আক্রমণ করেন। এতে জুমা দাগালোর নেতৃত্বে একটি বাহিনীও যোগ দেয়।
সহিংসতার এ চক্র ২০০৩ সালে সরকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর বিদ্রোহে রূপ নেয়। এ সময় ফুর যোদ্ধাদের সঙ্গে মাসালিত, জাগাওয়া ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ, সুদানের উচ্চবর্ণের আরবরা তাঁদের অবহেলা করছেন।
বিদ্রোহ দমনে বশির জানজাবিদকে আরও বড় করেন। যাতে তারা তাঁর বিদ্রোহ দমন অভিযানে নেতৃত্ব দিতে পারে। পরে তারা গ্রামে গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত আলোচনায় আসে। হেমেদতির ইউনিটও এ দলে ছিল।
আফ্রিকান ইউনিয়ন শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বাহিনী ২০০৪ সালের নভেম্বরে আদওয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে সেটি ধ্বংস করে দেয়। এতে অন্তত ১২৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে ৩৬টি শিশুও ছিল। এ গণহত্যার জন্য জানজাবিদ দায়ী—যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্তে এ তথ্য উঠে আসে।
দারফুরে সংঘাতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা হয়। আদালত বশিরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। বশির গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। হেমেদতি তখন তুলনামূলকভাবে জানজাবিদের বেশ নিচের সারির কমান্ডার ছিলেন। তাই তিনি আইসিসির তদন্তের আওতায় আসেননি।
২০০৪ সালের সহিংসতার পরের বছরগুলোতে হেমেদতি অত্যন্ত কৌশলে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। একপর্যায়ে তিনি শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান, এক করপোরেট সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পান।
সংঘর্ষের বছরগুলোতে হেমেদতি অত্যন্ত কৌশলে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। একপর্যায়ে তিনি শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান, এক করপোরেট সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পান।
এই পরিচিতি হেমেদতির জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। তিনি তাঁর যোদ্ধাদের বকেয়া বেতন, পদোন্নতি ও নিজের ভাইয়ের জন্য একটি রাজনৈতিক পদ দাবি করে বশির সরকারের বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে বিদ্রোহ করেন। বশির তাঁর প্রায় সব দাবি মেনে নেন। পরে হেমেদতি আবার বশিরের মূল বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হন।
এরপর অন্যান্য জানজাবিদ ইউনিট বিদ্রোহ শুরু করলে হেমেদতি সরকারি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ও ইউনিটগুলোকে পরাজিত করেন। একপর্যায়ে দারফুরের জেবেল আমিরে সবচেয়ে বড় সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ নেন। দ্রুতই তাঁর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘আল-গুনেইদ’ সুদানের বৃহত্তম সোনা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
২০১৩ সালে হেমেদতি আনুষ্ঠানিকভাবে সুদানের নতুন আধা সামরিক গ্রুপ আরএসএফের প্রধান নিযুক্ত হন, যা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বশিরের অধীন কাজ করত। জানজাবিদ বাহিনীকে আরএসএফের সঙ্গে একীভূত করে নতুন পোশাক, যানবাহন, অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী থেকেও কর্মকর্তাদের এতে যুক্ত করে দেওয়া হয় সহায়তা।
আরএসএফ দারফুরের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ জয়লাভ করে। তবে দক্ষিণ সুদানের নুবা পর্বতমালায় বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হয়। এরপর তারা লিবিয়ার সঙ্গে সীমান্তে পুলিশের সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
মানব পাচার রোধের নামে চাঁদাবাজি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে আরএসএফ। আফ্রিকা থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের আড়ালে হেমেদতির কমান্ডাররা মানব পাচারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
২০১৫ সালে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সুদানকে সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানালে হেমেদতি সুযোগটি কাজে লাগান।
হেমেদতি সৌদি আরব ও ইউএইর সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাদা চুক্তি করে আরএসএফ সদস্যদের ভাড়াটে সেনা হিসেবে পাঠাতে শুরু করেন। বিশেষ করে আবুধাবির সঙ্গে এ সম্পর্ক তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
নিবন্ধনের সময় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ডলার (৪ হাজার ৫০০ পাউন্ড) নগদ পাওয়ার আশায় তরুণ সুদানি পুরুষেরা এবং ক্রমেই প্রতিবেশী দেশগুলোর তরুণেরাও আরএসএফের নিয়োগকেন্দ্রগুলোতে ছুটে যেতেন।
এখানেই শেষ নয়, মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে হেমেদতি ইউরোপেও নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন। রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী গোষ্ঠী ভাগনারের সঙ্গেও গড়ে তোলেন অংশীদারত্ব। প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিনিময়ে সোনা প্রদানসহ নানা বাণিজ্যিক চুক্তিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ভাগনারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে হেমেদতি মস্কো সফর করেছিলেন। রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে হামলা চালায়, তিনি সেদিন মস্কোতে অবস্থান করছিলেন। সুদানে সাম্প্রতিককালে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর ভাগনারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
২০১৯ সালে বশির সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। হেমেদতির ইউনিটগুলোকে রাজধানী খার্তুমে মোতায়েনের নির্দেশ দেন বশির। ভেবেছিলেন, আরএসএফ দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য এক শক্তিশালী পক্ষ হয়ে উঠবে। এমনকি হেমেদতিকে ‘আমার রক্ষক’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। ওই বছরের এপ্রিলে গণতন্ত্রের দাবিতে সেনা সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ। বশির বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। এ সময় শীর্ষ জেনারেলদের বৈঠকে হেমেদতিসহ অন্যরা বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিছুদিনের জন্য হেমেদতিকে সুদানের ভবিষ্যতের নতুন মুখ হিসেবে প্রশংসা করা হয়। তারুণ্যদীপ্ত, মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ হেমেদতি বিভিন্ন সামাজিক দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে বৈঠক করেন। এভাবে নিজেকে দেশের দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীনদের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করান তিনি। চেষ্টা করেন রাজনৈতিক রং বদলানোরও। তবে এটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
হেমেদতি ও ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সামরিক পরিষদের যুগ্ম প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত করতে থাকেন। প্রতিবাদে মানুষ বিক্ষোভে নামেন। আন্দোলন জোরাল হলে হেমেদতি আরএসএফ বাহিনীকে বিক্ষোভ দমনে নামান। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর বাহিনীর সদস্যরা শত শত মানুষকে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করেন এবং পুরুষদের শরীরে ইট বেঁধে নীল নদে ফেলে দেন। হেমেদতি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সুদানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র বিকাশে চার দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত চাপ দেয়। চাপের মুখে সুদানের জেনারেল ও বেসামরিক নেতারা আফ্রিকান মধ্যস্থতাকারীদের তৈরি করা একটি খসড়া নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে সম্মত হন। দুই বছর ধরে সুদানে সামরিক প্রভাবাধীন সার্বভৌম পরিষদ ও বেসামরিক মন্ত্রিসভার মধ্যে টালমাটাল সহাবস্থান চলে।
তবে মন্ত্রিসভা গঠিত একটি তদন্ত কমিটি সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা সংস্থা ও আরএসএফের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেনের ওপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ঠিক আগেই বুরহান ও হেমেদতি যৌথভাবে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করেন। দখল করেন শাসনক্ষমতা।
তবে এ জোট স্থায়ী হয়নি। অল্পদিনের মধ্যেই বুরহান আরএসএফকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানালে হেমেদতি তা নাকচ করেন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে আরএসএফ রাজধানী খার্তুমে সেনা সদর দপ্তর ঘিরে ফেলতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও জাতীয় প্রাসাদ দখলের চেষ্টায় অগ্রসর হয়। কিন্তু এ অভ্যুত্থান ব্যর্থ ও খার্তুম ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীগুলো খার্তুমের রাস্তায় রাস্তায় লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এ সহিংসতা দারফুরেও ছড়ায়। সেখানে আরএসএফ বাহিনী মাসালিত জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালায়। জাতিসংঘের হিসাবে, এ সংঘাতে অন্তত ১৫ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। আরএসএফ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরএসএফ কমান্ডাররা তাঁদের সদস্যদের করা নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন, যেন এসব অপরাধ তাঁদের জন্য গৌরবের বিষয়। আরএসএফ ও তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা সুদানের শহর, বাজার, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোতে লুটপাট শুরু করেন।
লুট করা পণ্য সুপরিচিত ‘দাগালো মার্কেটে’ বিক্রি হচ্ছে, যা চাদসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। লুটপাটের সঙ্গে যোদ্ধাদের সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেছে আরএসএফ।
চলতি গৃহযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রাসাদে গোলা ও বিমান হামলায় হেমেদতি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। কয়েক মাস পর প্রকাশ্যে এলেও তিনি যুদ্ধাপরাধ বা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কোনো অনুশোচনা দেখাননি; বরং যুদ্ধক্ষেত্রে জয়লাভের সংকল্প আরও দৃঢ় করেন।
আরএসএফের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। আছে উন্নতমানের ড্রোনও। এসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে বুরহানের ঘোষিত রাজধানী পোর্ট সুদানে হামলা চালানো হয়েছে। এল-ফাশের শহরে আরএসএফের হামলায় এসব অস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, আরএসএফের এসব অস্ত্রশস্ত্র চাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নির্মাণ করা এক বিমানঘাঁটি ও সরবরাহকেন্দ্র হয়ে এসেছে। তবে আরব আমিরাত আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার করেছে।
হেমেদতি একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে কিছু বেসামরিক গোষ্ঠী ও সশস্ত্র আন্দোলনকারী গোষ্ঠী রয়েছে। নিজেকে চেয়ারম্যান করে ‘গভর্নমেন্ট অব পিস অ্যান্ড ইউনিটি’ নামে একটি সমান্তরাল প্রশাসনও গঠন করেছেন তিনি। এল-ফাশের দখলের পর নীল নদের পশ্চিমে বসবাসযোগ্য প্রায় সব অঞ্চল এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।
সুদানের বিশ্লেষকদের ধারণা, হেমেদতির এখন দুটি সম্ভাব্য লক্ষ্য রয়েছে। তিনি হয়তো নিজেকে একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান কিংবা অখণ্ড সুদানের শাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
আরেকটি সম্ভাবনা হলো হেমদতি নিজেকে এমন এক শক্তিশালী ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখতে চান, যেখানে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, ভাড়াটে বাহিনী ও রাজনৈতিক দল—তিনটিই নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি। আর তাহলে, তিনি হয়তো প্রকাশ্যে না হলেও আড়াল থেকে সুদানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন।