আলজেরিয়ায় দাবানলে ৬৫ ব্যক্তির মৃত্যু, পুড়ছে গ্রিস–ইতালি

দাবানলে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ি। ১১ আগস্ট, আলজেরিয়ার তিজি ওউজৌ শহরে।
ছবি: এএফপি।

আলজেরিয়ায় দাবানলে অন্তত ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আলজেরিয়া সরকার বলছে, আগুন লাগানো হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। তীব্র দাবদাহ ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে তা দাবানলে রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে টানা নয়দিন ধরে গ্রিসের বিস্তৃর্ণ এলাকা দাবানলের আগুনে পুড়ছে। তুরস্ক, ইতালিসহ ভূমধ্যসাগরের উভয় পাশের দেশগুলোয় দশকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। জ্বলছে দাবানলের আগুন।

আলজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ১৮টি প্রদেশের ৭০টির বেশি স্থানে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে কাবিলি অঞ্চলের বেজাইয়ে ও তিজি ওউজৌ জেলায়। রাজধানী আলজিয়ার্সের পূর্বে অবস্থিত এ অঞ্চলে আগুন সবকিছু গ্রাস করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দেখা যায়, কাবিলির পাহাড়ি বন পুড়ে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়েছে। অঞ্চলটির তিজি ওউজৌ এলাকার ১০টি স্থানে আগুন জ্বলছে। দাবানলে দেশটিতে অন্তত ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৮ সেনাসদস্য রয়েছেন। তাঁরা আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

নিহতদের স্মরণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেবিউন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘বেজাইয়ে ও তিজি ওউজৌ এলাকার ১০০ জনের মতো বাসিন্দাকে সফলভাবে উদ্ধার করার পর ২৮ জন সেনা শহীদ হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে।’

উদ্দেশ্যমূলকভাবে লাগানো আগুন থেকে দাবানল ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামেল বেলদজৌদ। তিজি ওউজৌ এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, একই সময়ে ৫০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা অবিশ্বাস্য। আগুন লাগানোর পেছনে অপরাধীদের হাত রয়েছে।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগুন লাগানোর অভিযোগে দেশটির মেদেয়া ও আন্নাবা জেলা থেকে সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বেতার।

আরও পড়ুন

এদিকের ভূমধ্যসাগরের অপর পাশের দেশ ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ও গরম বাতাসে দাবানল ছড়িয়েছে হাজারের বেশি একর এলাকায়।

গত ১২ ঘণ্টায় সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়া এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন হাজারের বেশি অভিযান চালিয়েছে অগ্নিনির্বাপন কর্মীরা। এ কাজে মোতায়েন করা হয়েছে সাতটি উড়োজাহাজ। দাবানলে ইতালিতে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

টানা নয়দিন ধরে দাবানলের আগুনে পুড়ছে গ্রিস। বুধবার ঐতিহাসিক অলিম্পিয়ার অন্তত ২০টি গ্রাম থেকে স্থানীয়দের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুন পৌছে গেছে রাজধানী এথেন্সের উপকণ্ঠে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দেশটির প্রায় ৫৮০ জন কর্মী। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অনেক দেশ।

আরও পড়ুন

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোটাকিস দাবানল মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ হিসেবে যা করা সম্ভব, তার অনেক কিছুই হয়তো আমরা করেছি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’

শুধু আলজেরিয়া, গ্রিস, ইতালি নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত দাবানলের আগুনে পুড়ছে। দাবানল মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সাইপ্রাসও। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে দাবানলের পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন