বিদ্রোহী নেতাদের ধরতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি

খাবারের আশায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ইথিওপিয়ার শরণার্থীরা। গত শনিবার সুদান সীমান্তে।
ছবি: রয়টার্স

ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল তাইগ্রের রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বিদ্রোহী নেতাদের ধরতে সেখানে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী এই অভিযান শুরু করেছে বলে আজ রোববার জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, তাইগ্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখান থেকে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার রাজধানী আসমারায় রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া শহরটিতে ‘ছয়টি বিস্ফোরণের’ ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার কূটনীতিকেরা এ তথ্য জানিয়েছেন। আসমারায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টার দিকে বিস্ফোরণগুলো ঘটে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ তাইগ্রের ক্ষমতাসীন দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জয় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে।

এদিকে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকেরা বলেছেন, আসমারার বিমানবন্দর ও সামরিক স্থপনাগুলো লক্ষ্য করে শনিবার রাতে বেশ কয়েকটি রকেট হামলা চালানো হয়।

গত নভেম্বর থেকে তাইগ্রেতে সামরিক অভিযান শুরু করে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকে আসমারায় এ নিয়ে তিনবার রকেট হামলার ঘটনা ঘটল। তবে আগের হামলার মতো এবারের হামলায়ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। দুই সপ্তাহ আগে প্রথম যে হামলাটি হয়েছিল, শুধু সেটি ছাড়া আর কোনো হামলার দায় স্বীকার করেনি টিপিএলএফ। টিপিএলএফ অভিযোগ করে আসছে, তাইগ্রেতে অভিযান চালাতে ইথিওপিয়াকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়া। যদিও সামরিক সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইথিওপিয়া।

২০১৮ সালে আবি আহমেদ ইথিওপিয়ার ক্ষমতায় আসার পর আফ্রিকার দেশটির রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করে। প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে তাঁরই হাত ধরে। ফলে ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মাথায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আবি।

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। গত বছর নরওয়ের অসলোতে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আবি প্রশংসিত হলেও নিজ দেশের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল তাইগ্রেতে শান্তি ফেরাতে তেমন পদক্ষেপ নেননি তিনি। উল্টো ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের নামে তাইগ্রেয়ানদের কোণঠাসা করে ফেলেন তিনি। এই ঘটনা টিপিএলএফের সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ উসকে দেয়। শুরু হয় টিপিএলএফের বাহিনীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত।

শনিবার রাতে নোবেলজয়ী আবি ঘোষণা দেন, সেনাবাহিনী তাইগ্রে অভিযান ‘শেষ’ করেছে। এর আগে তাইগ্রের রাজধানী মেকেলে দখলে নেওয়ার কথা জানায় দেশটির সেনাবাহিনী।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আবি আহমেদ জানিয়েছেন, টিপিএলএফ নেতাদের গ্রেপ্তার করতে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী তল্লাশি শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, মেকেলে দখলে নেওয়ার মাধ্যমে তিন সপ্তাহের লড়াই ‘শেষের পর্যায়ে’ রয়েছে।

তবে রয়টার্সকে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিপিএলএফ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অস্বীকার করেছে। এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। দুই পক্ষের সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পাশের দেশ সুদান সীমান্তে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েক হাজার মানুষ।

ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন ইথিওপিয়ার শত শত নাগরিক। সুদানের একটি শরণার্থী শিবিরে।
ছবি: এএফপি