ভবিষ্যৎ মহামারি ঠেকাতে প্রস্তুতির এখনই সময় 

করোনা মহামারি সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ভাইরাস–আতঙ্কে ঘর বন্ধ করে বসে থাকেন সারা বিশ্বের মানুষ। থমকে যায় গোটা বিশ্ব। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির এই সময়ে যা ছিল মানুষের কাছে অভাবনীয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীকে যেন আর পড়তে না হয়, সে জন্য দরকার মহামারি প্রতিরোধের আগাম প্রস্তুতি। সে প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর অনলাইনে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার। 

করোনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে নমুনা
ফাইল ছবি

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়, একটি নতুন জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে চীনে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এখন কোভিড-১৯ নামে সবার কাছে পরিচিত এ রোগ চীনের ভেতরেই থাকছে বলে সে সময় মনে হয়েছিল। ওই বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ নাগাদ চীনে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ জন। আর চীনের বাইরে এ রোগ ধরা পড়েছিল মাত্র ৪০ জনের। সে সময় বাকি বিশ্ব এ–সংক্রান্ত খবরগুলো দেখছিল, কিন্তু সামনে কী আসছে, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের জনস হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির পরিচালক ও চিকিৎসক টম ইঙ্গেলসবি অবশ্য চীনে ‍উদ্বেগজনক লক্ষণ ধরতে পেরেছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা বড় সংখ্যায় অসুস্থ হচ্ছিলেন; তরুণ, স্বাস্থ্যবান লোকজন মারা যাচ্ছিলেন, বড় বড় অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো শহরের চেয়ে বড় শহর বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন কর্মকর্তারা। ইঙ্গেলসবি জানতেন, বিশ্বের কোথাও এ মাত্রায় রোগ ছড়িয়ে পড়লে তা সবার জন্যই হুমকি তৈরি করতে পারে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বাড়ানোসহ মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতি বাড়াতে তাগাদা দিতে শুরু করলেন।

কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি বিশেষজ্ঞ জেনিফার নুজোও সামনের ভয়াবহতা সম্পর্কে ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলেন। সামনের মাসগুলোতে বিশ্বজুড়ে যেভাবে মৃত্যুহার ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছিল, তাতে ক্রমেই তাঁর হতাশা বাড়ছিল। কারণ, রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সাধারণ যে প্রস্তুতি থাকার দরকার হয়, তা ছিল না বলে এভাবে মানুষের প্রাণ ঝরছিল।

আরও পড়ুন
করোনা মহামারিরোধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার চলছে এখনো
রয়টার্স ফাইল ছবি

এপ্রিলে জেনিফার নুজো যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথে নবপ্রতিষ্ঠিত প্যানডেমিক সেন্টারের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। এরপর তিনি কাজ শুরু করেন ভবিষ্যতে আর কখনো বিশ্ব যেন এ রকম অরক্ষিত না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ মহামারি ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে সরকার ও অন্যান্য সংস্থাকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের কাজ হবে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন করা, যাতে তাঁরা পরবর্তী মহামারি দেখা দিলে দ্রুত তার বিস্তার রোধ এবং প্রভাব সীমিত রাখতে পারেন।

সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ চিকিৎসাগত কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে কোনো রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠপর্যায়ে তা শনাক্তের সক্ষমতা, এ তথ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রস্তুতি, পরীক্ষিত কর্মপরিকল্পনা, সবার টিকা পাওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু কিছু দেশের জন্যই নয়, পরবর্তী মহামারি দেখা দিলে তা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা পুরো বিশ্বেরই থাকতে হবে।

সম্মুখসারিতে সতর্কতা

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবীসহ নানা ধরনের জীবাণু সংক্রমণে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। মহামারি ঘটাতে পারে, এমন একটি জীবাণু শনাক্ত করার কাজটি শুরু হয় অসুস্থ ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। ঠিক কোন জীবাণুটি রোগীর উপসর্গের জন্য দায়ী, তা শনাক্ত করতে হয়।

কারও মধ্যে অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়। রোগীর ব্যাপারে প্রাথমিক করণীয় এখানেই নির্ধারিত হয়। এ কারণে হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ‘পাহারাদারির ব্যবস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল কনসোর্টিয়াম অন ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ এডুকেশনের পরিচালক সিসিলিয়া সোরেনসেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি বিভাগের সিদ্ধান্তই পরবর্তী সময়ে কী ঘটছে, তার মঞ্চ তৈরি করে দেয়।’

ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর কোন তথ্য সংগ্রহ করা হবে, সে সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে জরুরি বিভাগের মেডিসিনের চিকিৎসকেরাই নিয়ে থাকেন। তাই মহামারি সম্পর্কে সজাগ বিশ্বে জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের রোগীর রোগনির্ণয় পরীক্ষার বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়ার ওপর জোর দেন সোরেনসেন। তাঁর মতে, কোনো অঞ্চলে যেসব উপসর্গ সচরাচর দেখা যায় না, সেগুলো কারও মধ্যে দেখা গেলে সে বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের রোগ বিষয়ে উচ্চমাত্রায় সন্দিগ্ধ হতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে মহামারির রূপ নিতে পারে, এমন রোগের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন রোগ সম্পর্কে তাঁরা সচেতন থাকলে রোগীকে কী পরীক্ষা করাতে হবে, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে বাস্তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সম্মুখসারির এই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এখনো এসব মূল্যবান তথ্য ঠিকমতো সরবরাহ করা হয় না বলে জানান সোরেনসেন।

ভারতে করোনায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়
ফাইল ছবি

হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থার ওপর চিকিৎসকদের সঠিকভাবে সংক্রমণ শনাক্তের সক্ষমতা নির্ভর করে। হাসপাতালগুলোতে মূলত সাধারণ রোগব্যাধির পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে। তাই অস্বাভাবিক কোনো রোগনির্ণয়ের সুযোগ মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের প্রায়ই হয় না। ঠিক যেমনটা হয়েছিল করোনা মহামারির শুরুর দিনগুলোতে। এ অবস্থায় বিশেষ ল্যাবরেটরির সঙ্গে হাসপাতালগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ সোরেনসেনের। এতে হাসপাতালগুলো তার সক্ষমতার বাইরের রোগ এই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে পারবে।

ঢাকার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিসর সীমিত হয়ে থাকে। ফলে চিকিৎসকেরা অনেক সময় রোগের কারণ শনাক্ত করতে পারেন না। এতে রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে। একই সঙ্গে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি অনাবিষ্কৃত থেকে যায়। কেননা, পরীক্ষা ছাড়া রোগের পেছনে থাকা জীবাণু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

এসব ক্ষেত্রে জিন বিশ্লেষণ একটি সহায়ক উপায় হতে পারে। সেঁজুতি সাহার দলটি স্থানীয় পর্যায়ে দেখা দেওয়া মেনিনজাইটিস রোগের জীবাণু শনাক্তে জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। এ রোগের কারণ সবার অজানা ছিল। পরে আক্রান্ত শিশুদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেন গবেষকেরা। তাঁরা কিছু ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত করেন। মশাবাহিত এ ভাইরাস যে মেনিনজাইটিস সৃষ্টি করে, তা তাঁরাই প্রথম আবিষ্কার করেন। এভাবে সেঁজুতি সাহার দলটি এ জীবাণু নির্ণয়ের উপায় বের করে। এখন স্থানীয় হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ল্যাব ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দ্রুত শনাক্তে এ কৌশল ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। অন্যরাও সেঁজুতি সাহার পদ্ধতিটি অনুসরণের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে মহামারি সৃষ্টির সক্ষমতাসম্পন্ন জীবাণুর ওপর বৃহত্তর পরিসরে নজরদারির অংশ হিসেবে কীভাবে জিনগত তথ্য ব্যবহার করা যায়, তা গত মার্চে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ও মানবিক সহায়তা দেওয়া সংস্থার সমর্থনপুষ্ট আফ্রিকা প্যাথোজেন জিনোমিকস ইনিশিয়েটিভ মহাদেশজুড়ে রোগের ওপর নজরদারিতে জিনোম সিকোয়েন্সিং ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে।

তথ্যবিনিময় ও সমন্বয়

ভবিষ্যৎ মহামারি প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হলো, কোনো হাসপাতাল বা অঞ্চলে নতুন কোনো রোগসম্পর্কিত সঠিক তথ্যপ্রাপ্তি। পরবর্তী পদক্ষেপ হলো, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর সংগ্রহ করা এবং পরীক্ষাগারের তথ্য বিনিময় করা এবং সেগুলো এক জায়গায় করে সমন্বয় করা। এতে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সংস্থাসমূহ ও সরকারি কর্মকর্তারা রোগসম্পর্কিত বৃহত্তর চিত্র পাবেন।

বিশ্বের ১৯৬টি দেশ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধানে সই করেছে। এ প্রবিধানে অস্বাভাবিক রোগের প্রাদুর্ভাবের তথ্য বাকি বিশ্বের সঙ্গে বিনিময়ের অঙ্গীকার রয়েছে। তবে অনেক দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ তথ্য সমন্বয় করতেই হিমশিম খায়। যেমনটি কোভিড–১৯ মহামারির শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে। অনেক অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতাল থেকে রোগটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করলেও সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাতে বাধ্য ছিলেন না। এতে কোনো দেশে রোগসম্পর্কিত সামগ্রিক চিত্র তৈরির প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। সে কারণে পরে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড–১৯–বিষয়ক তথ্য পাওয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে হয়েছিল।

পরবর্তী মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের তথ্য তৃণমূল থেকে পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির পরিচালক টম ইঙ্গেলসবি। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা শনাক্তের পর নিকটতম স্বাস্থ্য কার্যালয়ে জানিয়ে দেবেন। এটিকে গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সন্দেহ হলে তাঁরা আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তথ্য জেলা, আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে পাঠাবে।

তথ্য বিনিময় ও সমন্বয় বিশ্বব্যাপী উন্নত হচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা রকফেলার ফাউন্ডেশন ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন ওয়েলকাম জীবাণু শনাক্তে একটি স্বাধীন আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ করছে। এর লক্ষ্য জীবাণুর বিস্তার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা।

আরও পড়ুন

আবার বিশ্বের যেখানেই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটুক না কেন, তা ট্র্যাক করতে যুক্তরাজ্য সরকার ডব্লিউএইচওসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ‘গ্লোবাল প্যানডেমিক রাডার’ নামের একটি নজরদারি নেটওয়ার্ক চালু করেছে।

সর্বোত্তম প্রস্তুতি

সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় পর্যায়েই রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। তবে বিশ্বের কোথাও যদি কোনো রোগ একটি গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে মহামারির হুমকি তৈরি করে, তাহলে সব জায়গার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

জেনিফার নুজো মনে করেন, সংক্রামক রোগ দেখা দিলে তা কীভাবে সামাল দিতে হবে, সে বিষয়ে আগেভাগে অনুশীলন করাটা মহামারি প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক অগ্নি বা ভূমিকম্প মহড়ার মতো। এতে প্রস্তুতির একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়।

নুজো বলেন, হাসপাতাল ও সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো শুধু মহামারির জন্য পরিকল্পনা করে বসে থাকবে না, তাদের নিয়মিতভাবে পরিকল্পনাগুলো অনুশীলন করা উচিত, যাতে প্রাদুর্ভাব এলে পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

উদাহরণ হিসেবে তাইওয়ানের কথা বলা যায়। মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার গণটিকার মাধ্যমে তাইওয়ান প্রতিবছর টিকাদানের মহড়া করে। এ ধরনের মহড়ার মাধ্যমে মহামারির মতো পরিস্থিতিতে কোথায় টিকা নিতে হবে, তার সঙ্গে পরিচিত হয় মানুষ। আবার এ মহড়ায় জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সহায়তার বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে।

কোথাও একটি রোগ ছড়িয়ে পড়লে যাতে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেই সক্ষমতা বিশ্বের সর্বত্র তৈরি করাটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পেডিয়াট্রিক সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ ডেসারি লাবিউডের মতে, এ সক্ষমতা আসে জ্ঞান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা, টিকা, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগের মধ্য দিয়ে। দরকার হয় প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ও সামাজিক পুঁজি। এ সক্ষমতাগুলো ছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় দ্রুত চাপে পড়তে পারেন। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

সক্ষমতা বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো টিকা। জীবাণু বিস্তার লাভের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন শুরু করতে হবে এবং সবাই যাতে টিকা পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ইঙ্গেলসবি বলেন, একটি নিরাপদ-কার্যকর টিকা তৈরির পর চাহিদা অনুযায়ী তা উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে পদ্ধতি থাকতে হবে। বিশ্বের একটি বা দুটি দেশে অধিকাংশ টিকা থাকবে, অন্যত্র থাকবে না, পরিস্থিতি তেমন হওয়া উচিত নয়।

ইঙ্গেলসবির মতে, সংক্রামক রোগের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য প্রতিটি জায়গায় স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তা সে আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি সংস্থা ও দপ্তর, অঞ্চল বা স্থানীয় হাসপাতাল—সব পর্যায়ে এটা হতে হবে।

সংক্ষেপিত অনুবাদ:  সাইফুল সামিন