সারা বিশ্বে গড়ে প্রতিবছর ১৫০টি জ্যান্ত বাঘ বা এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জব্দ করা হয়। এ হিসাব ২৩ বছরের গড়। নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। অব্যাহত সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিলুপ্তির মুখে থাকা এই প্রাণী কী ধরনের চাপের মুখে আছে, প্রতিবেদনে সেই চিত্রই উঠে এসেছে। খবর আল-জাজিরার।
আজ বুধবার বন্য প্রাণীর বাণিজ্য নজরদারি সংগঠন ‘ট্রাফিক’–এর এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ৩ হাজার ৩৭৭টি বাঘের সমপরিমাণ মৃত ও জীবিত বাঘ এবং বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জব্দ করা হয়েছে।
এসব জব্দের ঘটনা ঘটেছে ৫০টি দেশ ও ভূখণ্ডে। তবে জব্দের বড় অংশটিই ঘটেছে ১৩টি দেশে, যেখানে এখনো এই বন্য প্রাণী পাওয়া যায়।
বিশ্বে টিকে থাকা বুনো বাঘের অর্ধেকই রয়েছে ভারতে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি জব্দের ঘটনা ঘটেছে। সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘ জব্দের ঘটনাও ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে। চীনে ২১২টি (মোট সংখ্যার ১০ শতাংশ) এবং ইন্দোনেশিয়ায় ২০৭টি (মোট সংখ্যার ৯ শতাংশ) জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
অবৈধ এই বাণিজ্যের ধরন বিবেচনায় নিয়ে বন্য প্রাণী বাণিজ্য নজরদারি সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, এই সংখ্যা চোরাচালানের যে মাত্রা নির্দেশ করে, তাতে কিন্তু এই অপরাধের সত্যিকারের মাত্রা প্রতিফলিত হয় বলে মনে হয় না।
প্রতিবেদনটির সহলেখক ও ট্রাফিকের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক কানিথা কৃষ্ণস্বামী বলেন, ‘এই তথ্যপ্রমাণে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, অবৈধ শিকার ও অবৈধ ব্যবসা বাঘের জন্য কোনো সাময়িক হুমকি নয়। যদি আমরা আমাদের জীবদ্দশায় বাঘের বিলুপ্তি দেখতে না চাই, তাহলে দ্রুত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ট্রাফিক বলছে, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে যে পরিমাণ জব্দের ঘটনা ঘটেছে, সেটা ইঙ্গিত দেয় যে শিকারিরা বিশ্বের অবশিষ্ট বুনো বাঘের পেছনে ‘নিরলস সাধনায়’ নিয়োজিত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও রাশিয়ায় প্রাণী জব্দের ঘটনা ‘লক্ষণীয়ভাবে’ বেড়েছে। বিপন্ন সুমাত্রান বাঘের বাস ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই ১৮টি বাঘ জব্দ করা হয়েছে, যা আগের বছরের পুরো সময়ে জব্দ হওয়া বাঘের সমান (১৬টি)।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘অবৈধ শিকার ও অবৈধ বাণিজ্য বাঘের টিকে থাকার প্রতি বিপজ্জনক হুমকি হিসেবে রয়েছে। কয়েক দশকের প্রচেষ্টা, বিনিয়োগ ও অঙ্গীকারও বুনো বাঘের সংখ্যার ওপর চাপ কমাতে পারেনি।’
সুন্দরবনের বাঘ বিশ্বে অনন্য
বাঘের সংখ্যা ১৯০০ সালে অন্তত ১ লাখের মতো ছিল বলে মনে করা হয়। শিকার ও বাঘের আবাস ধ্বংসের কারণে এই প্রাণী শুধু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের পাশাপাশি রাশিয়ার একেবারে পূর্বাঞ্চলে সীমিত হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, চাহিদার কারণে অবৈধ বাঘশিকারিরা অবৈধ বাণিজ্যে জড়ান। বেশির ভাগ চাহিদাই চীন ও এশিয়ার অন্য অংশে। এসব দেশের লোকজন মনে করেন, বাঘের নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খেলে বহু রোগ সেরে যায়, শারীরিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।