গৃহযুদ্ধ থেকে এবার ভোটের মাঠে, মিয়ানমারে জান্তার সামনে কী
মিয়ানমারে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন জান্তা বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং। গত সপ্তাহে সামরিক বাহিনীর একটি ঘাঁটি থেকে জনসাধারণকে ২৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সতর্ক করে এ–ও বলেন, মানুষ যেন এমন প্রার্থীদের বেছে নেয়, যাঁরা তাতমাদো বা মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
হ্লাইংয়ের এই বক্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায় যে গৃহযুদ্ধের ময়দানে জান্তা যা করতে পারেনি, নির্বাচনের মাধ্যমে তা করতে চায়। তা হলো নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত দলকে জয় পাইয়ে দেওয়া। আর এর মাধ্যমে সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে নিজেদের ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করা। একই সঙ্গে নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে বিদেশে যে অসন্তোষ রয়েছে, তা কিছুটা কমিয়ে আনা।
তবে বিশ্লেষক ও কূটনীতিকেরা বলছেন, গৃহযুদ্ধ আরও ভয়াবহ হতে থাকা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জান্তা যে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে, তা একপ্রকার দুঃসাধ্য। আর যেখানে বিদেশিরাই এই নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করছেন এবং বাঁকা চোখে দেখছেন, সেখানে জয়ের পর ওই দেশগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মিয়ানমারে ভোট হবে দুই ধাপে। ২৮ ডিসেম্বর ও ১১ জানুয়ারি। এই দুই দিনে দেশটির ৩৩০টি শহর এলাকার মধ্যে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আছে—এমন ২২০ এলাকায় ভোট হবে। গবেষণা সংস্থা ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক রিচার্ড হর্সে বলেন, ‘পরোক্ষ সামরিক শাসন সশস্ত্র বিদ্রোহ বা নাগরিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কোনো সমাধান আনবে না, বরং মিয়ানমার সংকটের মধ্যেই ডুবে থাকবে।’
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পায় মিয়ানমার। তখন থেকেই দেশটিতে বেশির ভাগ সময় শাসন করেছেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের তালিকায় নাম লেখান মিন অং হ্লাইং। সে সময় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মিয়ানমারে নোবেলজয়ী অং সান সু চির গণতান্ত্রিক সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ২০১৫ ও ২০২০ সালে নির্বাচনে জয় পেয়েছিল। দলটিকে ভেঙে দিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না তারা। জান্তাবিরোধী অন্য দলগুলোও অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচন করছে ছয়টি দল। এর মধ্যে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) জেতার সম্ভাবনা বেশি।
ইউএসডিপি জিতলে মিন অং হ্লাইং শক্তিশালী অবস্থানে থেকে যাবেন, এটা বলাই যায়। তবে অতীতে কিছু ভিন্ন উদাহরণ রয়েছে। যেমন ২০১০ সালের নির্বাচনের পর সাবেক জেনারেল থেইন সেইনকে বেসামরিক সরকারের প্রধান হিসেবে বসিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তবে তিনি কিন্তু উল্টো উদারপন্থী নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এর জেরেই ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন গণতান্ত্রিক সু চি।
এটাও ঠিক যে সেই সময়ের চেয়ে বর্তমান চিত্র একেবারে ভিন্ন। গৃহযুদ্ধে মিয়ানমারের ঐক্য এক ছিন্নভিন্ন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট এশিয়া পিস ইনস্টিটিউটের গবেষক ইয়ে মিও হেইন বলেন, সামরিক বাহিনীর আয়োজিত এই নির্বাচনের জেরে দেশে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে টেকসই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হবে না।