জাতিসংঘের লোগো
ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বেশি কিছু করা উচিত। কারণ, এসব অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে। আর সামরিক জান্তা দমনাভিযান ও সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসীর তকমা দিয়ে দেশ শাসন করছে।    

গত বছরের শুরু থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। ওই বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এরপর গণতন্ত্রপন্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন দমনে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে জান্তা। এ ছাড়া দেশটির অর্থনীতির অবস্থাও এখন খুবই নাজুক।

আরও পড়ুন

মিয়ানমারে গণহত্যা, অভিযোগের সমর্থনে তথ্য দিয়েছে মেটা

মিয়ানমারের জান্তা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। অবশ্য জান্তার দাবি, দেশের ক্ষতি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ‘সন্ত্রাসীদের’ দমনে তারা এ অভিযান চালাচ্ছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আরও একঘরে করার আহ্বান জানিয়েছে। কার্যালয় আরও বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা অর্থবহ ও টেকসই উপায়ে দেশ শাসনে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে চলা ব্যাপক সংকট মোকাবিলায় জান্তা ব্যর্থ।  

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়। একই সঙ্গে নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে যাতে সামরিক বাহিনী প্রবেশাধিকার না পায়, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন

‘সন্ত্রাসীদের’ অস্ত্র দিয়ে মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করছে পশ্চিমারা

কার্যালয় এ–ও বলেছে, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে এবং সামরিক জান্তাদের অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করার জন্য সাধ্যের মধ্যে সবটকু ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। সম্ভাব্য যেকোনো হামলা ঠেকানো বা কমানোর জন্য তাত্ক্ষণিক সমন্বিত পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক জান্তার বাণিজ্য চলছেই। এ ছাড়া একাধিক দেশ জান্তার কাছে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।  

রাজধানী নেপিডোতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে জলকামান ছুড়ছে পুলিশ
রয়টার্সের ফাইল ছবি

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে যুদ্ধবিমান ও সাঁজোয়া যান সরবরাহ করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া চীন সরবরাহ করেছে যুদ্ধবিমান ও পণ্য সরবরাহ করতে পারে এমন উড়োজাহাজ। সার্বিয়া দিয়েছে রকেট ও কামানের গোলা আর ভারত দিয়েছে রিমোট এয়ার ডিফেন্স স্টেশন।  

বিবিসির সাংবাদিকের কারাদণ্ড

এদিকে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসির দাতব্য শাখা বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের হয়ে কাজ করা মিয়ানমারের একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিককে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমার। হেত হেত খিন নামের ওই সাংবাদিক স্থানীয় দর্শকদের জন্য বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। ২০২১ সালের আগস্টে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অনেক সাংবাদিক ও অধিকারসচেতন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং অনেককে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের অনুষ্ঠান শাখার পরিচালক বলেন, এসব ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।