ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এরদোয়ানের, স্থানীয়দের ক্ষোভ

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কাহরামানমারাস শহর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দেশটির ইতিহাসে ভয়াবহ ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার দুই দিন পর আজ বুধবার ক্ষতিগস্ত এলাকায় যান তিনি। তবে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৫৭৪ জনের। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬৬২ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তুরস্কের আনতাকিয়া শহরের একটি হাসপাতালের বাইরে কয়েক ডজন লাশ দেখা গেছে। এসব লাশ কম্বল ও চাদড়ে মুড়িয়ে মাটিতে রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাগের মধ্যে ভরেও কিছু লাশ মাটিতে রাখা হয়েছে।

প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারপাতের মধ্যেই তুরস্ক ও সিরিয়ার দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষ টানা দুই রাত কাটিয়েছেন। অপর দিকে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের বের করে আনতে জোর তৎপরতা চলছে উদ্ধারকর্মীদের।

গত সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার। এর পর থেকে আরও কয়েকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অনেকেই গাড়িতে বসেই রাত পার করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপর কম্বল জড়িয়ে রাত কাটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন
কাহরামানমারাস শহরে ঘরবাড়ি হারিয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে সড়কেও দিনরাত পার করছেন অনেকেই
ছবি: রয়টার্স

বলতে গেলে একধরনের মানবেতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনরাত পার করছেন স্থানীয় লোকজন। প্রাণঘাতী ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেলেও পরবর্তী সময়ে টিকে থাকতে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এমনই একজন আনতাকিয়ার ষাটোর্ধ্ব মেলেক। তাঁর ভাষ্যমতে, ভূমিকম্পের পর থেকে কোনো উদ্ধারকারী দল তাঁর চোখে পড়েনি। এ জন্য রীতিমতো ক্ষোভ ঝরছিল তাঁর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘গাড়ির ট্রাক কোথায়, কোথায় তাঁবু? এর আগে যেকোনো দুর্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করতে এলেও এবার এখন পর্যন্ত এ রকম কিছুই চোখে পড়েনি।’

দেশের এ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এরদোয়ান। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তার জন্য সেনাও পাঠিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

আগামী মে মাসে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগে এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এরদোয়ানের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। কারণ, দুই দশকের শাসনামলে এই ভূমিকম্প এরদোয়ানের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহ এই দুর্যোগ ঠিকমতো সামলে উঠতে না পারলে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে; যা এরদোয়ানের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। তবে বিশ্লেষকদের কারও কারও মতে, চিত্রটা উল্টোও হতে পারে। কারণ, সংকটের মুহূর্ত সামলে নিয়ে নিজের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করতে পারেন এরদোয়ান।

আরও পড়ুন