এ বছর কী করবেন কিম

গত বছরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উত্তর কোরিয়া গত বছর যেন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ায় রেকর্ড করেছে। এখন পর্যন্ত দেশটি যত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, তার এক–চতুর্থাংশই ছুড়েছে ২০২২ সালে। শুধু তাই নয়, গত বছরই দেশটির নেতা কিম জং-উন উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

২০১৭ সালের পর থেকে উত্তর কোরিয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছিল গত বছর। উত্তেজনা আর হুমকি-ধমকিতে তো গত বছর পার হলো। নতুন বছরে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে। এ নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

কিমের ঘোষণা

গত বছর উত্তর কোরিয়ায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার জন্য পরিকল্পিত স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় দেশটি।

আরও পড়ুন
কিম জং–উন
রয়টার্স ফাইল ছবি

গত বছরের শেষদিকে উত্তর কোরিয়া সফলভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। হুয়াসং ১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের যেকোনো জায়গায় আঘাত করতে সক্ষম।

পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছেন উন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রের দেশ হিসেবে ঘোষণা দেন। উন বলেন, শুধু যুদ্ধ প্রতিরোধে এসব পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। তবে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এসব ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণাত্মকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।

কিমের নতুন ছক

বছরের শেষদিকে এসে নতুন পরিকল্পনাও গুছিয়ে ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। ২০২৩ সালে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য কিম ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যদের জড়ো করেন। কিম ও তাঁর দলের সদস্যরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি বাড়ানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

কিম সাফ বলে দিয়েছেন, ছোট, কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হবে। কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পাণ্ডা বলেন, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন।

কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে হলে উত্তর কোরিয়াকে প্রথমেই এমন পরমাণু বোমা বানাতে হবে, যেটি সহজেই ছোট ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার করা যায়। পিয়ংইয়ং যে সত্যিই এমনটা করতে পারে, তা বিশ্বকে বোঝাতে হবে। গোয়েন্দা সম্প্রদায় গত বছরের বেশির ভাগ সময় এ ধরনের অস্ত্র পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করেছে। এ বছর এ রকম পরীক্ষা হতে পারে।

নতুন বছরে কিম জং–উন আরও কিছু অস্ত্র তৈরির তালিকা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গুপ্তচর স্যাটেলাইট। কিম বলেন, এই বসন্তে এটি কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হবে। আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার উপযোগী জ্বালানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিক্ষেপের জন্য এটিকে উপযোগী করা হবে।

কিম জং–উনের এসব কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য থেকে ধারণা করা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ বছর পিয়ংইয়ং আগ্রাসী আক্রমণ চালিয়ে যাবে। পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার পরিমার্জন ও বিস্তৃত করবে। আর এই ধারণার যে সত্যতা আছে, তা বোঝা যায় নতুন বছর শুরুর তিন ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পিয়ংইয়ং প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

তবে অঙ্কিত পাণ্ডা এমনও বলেন, এ বছর বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রশিক্ষণ মহড়া হিসেবে ছোড়া হতে পারে। উত্তর কোরিয়া এখন যুদ্ধে-সংঘাতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত।

পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে

২০১৯ সালে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শেষ ধাপের আলোচনা ভেস্তে যায়। ২০ বছর ধরে মার্কিন সরকারে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার বিশ্লেষক রাচেল মিনইয়ং লি বলেন, গত এক বছরে চীন ও রাশিয়ার কাছাকাছি এসেছে উত্তর কোরিয়া। এ বছর উত্তর কোরিয়া পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বদল ঘটাতে পারে। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া যদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় মনে না করে তাহলে ভবিষ্যতে পরমাণু নিয়ে ঐকমত্যে বিষয়টি প্রভাব ফেলবে।

পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার উসকানির জবাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্রও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। গত বছরের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল উত্তর কোরিয়াকে কঠোরভাবে মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দেন।

সামরিকভাবে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলার কথা বলেন তিনি। ইওল উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেন। এর জবাবে উত্তর কোরিয়া আরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে ইটের বদলে ইট ছোড়া শুরু হয়। দুই দেশের সীমান্তের কাছে যুদ্ধবিমান ওড়ে।

উত্তর কোরিয়াকে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কোরিয়া রিস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাদ ও ক্যারোল বলছেন, এ বছর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছাবে। অস্ত্র ও গুলি বিনিময়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। হিসাবে যেকোনো একটি ভুলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। এ বছর এমনও হতে পারে উত্তর কোরিয়া চীনের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেবে।

উনের পর কে

কিম জং–উনের পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কে হবেন, সে প্রশ্নের উত্তরও মিলতে পারে এ বছর। গত বছর প্রথমবারের মতো উন তাঁর মেয়েকে জনসম্মুখে আনেন। সামরিক তিনটি ঘটনায় তাঁকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। ফলে কিম তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে মেয়েকে বেছে নিয়েছেন কি না, সে নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

উত্তর কোরিয়া নিয়ে যেকোনো কিছু আগাম বলা কঠিন। গত বছরের তুলনায় এ বছরও অপ্রত্যাশিত ও অস্থিতিশীল কিছু ঘটতে পারে এমন আভাসও রয়েছে।