ইরানে রেস্তোরাঁয় হিজাব ছাড়া খেতে গিয়ে তরুণী গ্রেপ্তার

মাহসা আমিনি
ছবি: টুইটার

ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যেই হিজাব না পরে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ায় এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার ওই নারীর পরিবার এ তথ্য জানিয়েছে।

রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া দনিয়া রাদ নামের ওই নারীর হিজাব ছাড়া ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

ছবিতে দেখা যায়, দনিয়া তেহরানের একটি রেস্তোরাঁয় হিজাব ছাড়াই আরেক নারীর সঙ্গে বসে নাশতা খাচ্ছিলেন। তাঁদের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ইরানের পোশাক আইনের কঠোর বাধ্যবাধকতা না মেনে ওই ছবি তোলায় তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।

ইরানে বিক্ষোভের সূচনা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। ওই দিন কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির (২২) মৃত্যুর পর। ‘যথাযথ নিয়ম মেনে’ হিজাব না পরার অভিযোগে তাঁকে আটক করেছিল তেহরানের ‘নীতি পুলিশ’। অনেকের অভিযোগ, পুলিশের অত্যাচারে মাসার মৃত্যু হয়।

দনিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বোন দিনা টুইট করেন, ‘বৃহস্পতিবার ছবিটি প্রকাশ হওয়ার পর নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যা দনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চায়। তাঁদের কথামতো গতকাল শুক্রবার নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত হলে দনিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক ঘণ্টা তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর দনিয়া অল্প কিছুক্ষণের জন্য কল করে জানায় তাঁকে এভিন কারাগারে ২০৯ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তেহরানের কারাগারের কুখ্যাত শাখা এটি। এটি দেশটির গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে থাকে।’

দিনা বলেন, ‘আমাদের পরিবার দনিয়ার সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

মাসার মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মাসার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার কথা বলেছেন। একসঙ্গে এই মৃত্যু নিয়ে যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের নিন্দা জানান তিনি।

আরও পড়ুন

ইরানের বাইরের ফারসি গণমাধ্যমগুলোতে কয়েক দিন ধরে দেশটিতে নাগরিকদের আইন না মানার নানা বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নারীরা হিজাব ছাড়াই বাজারে, ক্যাফেতে যাচ্ছেন। টুইটারে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রচারক ও সাংবাদিক অমিড মেমারিয়ান বলেন, ‘অনেকে হিজাব ছাড়া নাশতা খেতে যাচ্ছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইরানে হিজাব নীতি কতটা কঠোর, তা বোঝা যায়।’

আরও পড়ুন

এদিকে দেশটিতে জনপ্রিয় গীতিকার ও কবি মোনা বোরজোয়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তিনি নিজে একটি কবিতার ভিডিও পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, আমাদের মাতৃভূমি তোমাদের হাত থেকে নিয়ে নেব।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মাসা আমিনির মৃত্যুর পর যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা দমন করতে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, বিক্ষোভকারীসহ ২০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় সাবেক ফুটবলার হোসেন মানাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন সংগীতশিল্পী শেরভিন হাজিপুর। বিক্ষোভকারীদের টুইট নিয়ে তাঁর তৈরি গান ইনস্টাগ্রামে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন