রাজনীতিতে পা রেখেই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন

স্রেথা থাভিসিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হলেন স্রেথা থাভিসিন। থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়া স্রেথা থাভিসিন গত বছর নভেম্বরে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার দল ফিউ থাই পার্টির সদস্য পদ পেয়েছিলেন। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সামনে রেখে এপ্রিলে তাঁকে ফিউ থাই পার্টির তিন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর একজন হিসেবে মনোনীত করা হয়। এরপর আবাসন কোম্পানির দায়িত্ব ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে নাম লেখান স্রেথা থাভিসিন। এখন তিনিই হলেন থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী।

টানা তিন মাস রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্রেথা থাভিসিন নির্বাচিত হন। এখন তাঁর দল ফিউ থাই পার্টির নেতৃত্বেই থাইল্যান্ডে জোট সরকার গঠন করা হবে।

গত ১৪ মের নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছিল ফিউ থাই পার্টি। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল প্রগতিশীল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। নির্বাচনের পর এমএফপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করতে চেয়েছিল ফিউ থাই। তবে থাইল্যান্ডের সামরিক জান্তার নিয়োগ দেওয়া সিনেটরদের বাধার মুখে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এমএফপির তরুণ নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত।

এরপর এমএফপিকে বাদ দিয়ে ১১ দলের নতুন জোট গঠন করে ফিউ থাই। জোটে নেওয়া হয় সামরিক বাহিনী সমর্থিত কয়েকটি দলকে। তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সেনাপ্রধান ও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রাউথ চান–ওচার দলও। এই দলগুলোই কিন্তু একসময় ফিউ থাই নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।  

স্রেথা থাভিসিনের বয়স এখন ৬০ বছর। ১৯৬৩ সালে জন্ম তাঁর। স্নাতক করেছেন ব্যাংককের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লারেমন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে। ফুটবলভক্ত স্রেথার পেশাজীবন শুরু হয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রক্টর অ্যান্ড গাম্বলের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে। পরে তিনি ‘সানসিরি’ নামের পারিবারিক আবাসন ব্যবসায় যোগ দেন।  

সানসিরিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্রেথা। থাইল্যান্ডের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শেয়ারমূল্য প্রায় ৮৮ কোটি ডলার। নির্বাচনের আগে গত এপ্রিলে সানসিরি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

থাকসিন সিনাওয়াত্রার পরিবার ফিউ থাই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিল। তিনি একজন ধনকুবের। স্রেথা আগে থেকেই তাঁর বিশ্বাসভাজন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যেও স্রেথার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম ক্রুংথেপ তুরাকিজ একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, দেশটির ১০০ জন সিইওর ৬৬ শতাংশই স্রেথাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান।

রাজনীতিতে পা রাখার পর স্রেথা এপ্রিলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছিলেন, ‘আপনি যখন পিরামিডের চূড়ায় থাকবেন, তখন শুধু পাশের জিনিসই দেখতে পাবেন না, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখবেন, সেখানে মানুষের জীবন কীভাবে কাটছে। আমি যখন দেখেছিলাম, আমার মন খুবই খারাপ হয়েছিল। কারণ, আমি সমাজে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যের মতো মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখেছিলাম। থাইল্যান্ডের মতো সম্ভাবনাময় দেশে এমনটা হওয়া উচিত নয়।’

‘মানবাধিকারের পক্ষে’

নির্বাচনের আগে প্রচার–প্রচারণায় অর্থনৈতিক উন্নতি, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্রেথা থাভিসিন। এপ্রিলে ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে তিনি বলেছিলেন, তাঁর সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অগ্রাধিকার পাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান বন্ধ করা, সমকামীদের বিয়ের জন্য সমতা প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এমন নতুন একটি সংবিধানের খসড়া তৈরির মতো বিষয়গুলো।

নিবাচনী ইশতেহারে থাইল্যান্ডের মানুষকে ফিউ পার্টির হয়ে একটি বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্রেথা। সেটি হলো, সরকারে এলে ১৬ বছর ও এর বেশি বয়সী নাগরিকদের ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে ২৯৬ ডলার করে দেবেন তিনি। এই অর্থ নিজ নিজ সম্প্রদায়ের পেছনে খরচ করতে পারবেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ফিউ থাই মানবাধিকার পক্ষে। আর গত ৯ বছর সামরিক শাসনের সময় অনেক দক্ষ নাগরিক থাইল্যান্ড ছেড়ে চলে গেছেন।  

নির্বাচনের কিছুদিন আগে ভয়েস অব আমেরিকাকে স্রেথা থাভিসিন বলেছিলেন, প্রাউথ চান–ওচার দলের সঙ্গে ফিউ থাই জোট গঠন করে সরকারে এলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন না। ২০১৪ সালে প্রাউথের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে।

তবে শেষ পর্যন্ত প্রাউথের দলের সঙ্গেই জোট করে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ফিউ থাই। স্রেথা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিতও হয়েছেন। এ নিয়ে গত সোমবার সাংবাদিককের তিনি বলেছিলেন, থাইল্যান্ডে তিন মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতেই তিনি আগে কী বলেছিলেন, তা ভুলে যাওয়াটা জরুরি।

আরও পড়ুন