তাইওয়ানকে অস্ত্র দেওয়ায় ক্ষুব্ধ চীন

পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েন কাউন্টির বিমানঘাঁটিতে এফ-১৬ভি যুদ্ধবিমানে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করছে তাইওয়ানের বিমানবাহিনীর গ্রাউন্ড ক্রুরা
ছবি: এএফপি

তাইওয়ানের কাছে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অনুমোদনের পর চীন বলেছে, এটা বাতিল করা না হলে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পাল্টাব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টান টান উত্তেজনা বিরাজমান। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে ওই উত্তেজনা শুরু হয়। তাইওয়ানের চারপাশে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং।

বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে তাইওয়ানের কাছে এটাই সবচেয়ে অস্ত্র বিক্রির বড় অঙ্কের অনুমোদন। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে নতুন করে যে অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের অরেথিওন ‘রাডার ওয়ার্নিং সিস্টেম’ রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের বিষয়টি রয়েছে। ২০১৩ সালে এই সিস্টেম কেনে তাইওয়ান। এ রাডার–ব্যবস্থার মাধ্যমে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা যাবে। এ ছাড়া আছে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ৬০টি হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র, যা যেকোনো জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। এ ছাড়া রয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের সাইডউইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্র যা বিমানবাহিনী ব্যবহার করতে পারবে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট অফিসের মুখপাত্র চ্যাং তুন-হান এক বিবৃতিতে দ্বীপের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য অব্যাহত সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব অস্ত্র সেনাদের লড়াই করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সতর্কতা ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তুলবে।

চীনের ভূখণ্ড থেকে কিছু দূরে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপ শিয়ুতে গত বৃহস্পতিবার একটি ‘বেসামরিক ড্রোন’ গুলি করে নামান তাইওয়ানের সেনারা। এর এক দিন পরেই তাইওয়ানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, চীনের উচিত সংযম আচরণ করা এবং তাইওয়ানের আশপাশে সামরিক মহড়া অবিলম্বে বন্ধ করা। এদিনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির এ ঘোষণা আসে।

তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে চীন। যদিও চীনের এই দাবি বরাবরই নাকচ করে এসেছে তাইওয়ান। এমনকি চীন সরকার তাইওয়ানে অর্থনীতি–রাজনীতিতে পশ্চিমা (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের) প্রভাব বিস্তারের কড়া সমালোচক। তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত দ্রুত বদলে ফেলতে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংয়ু বলেন, ‘এটি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে ভুল সংকেত পাঠিয়েছে। চীন-মার্কিন সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করার পাশাপাশি তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে।’

পেংয়ু আরও বলেন, ‘পরিস্থিতির আলোকে চীন দৃঢ়তার সঙ্গে বৈধ এবং প্রয়োজনীয় পাল্টাব্যবস্থা নেবে।’

তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির এ অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তার জন্য এসব অস্ত্র খুব জরুরি। তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানের ওপর সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ দেওয়া থেকে সরে আসার জন্য আমরা বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই, এর পরিবর্তে তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনা করুক চীন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মুখপাত্র বলেন, তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণ এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। নিয়মিত অস্ত্র বিক্রির অংশ হিসেবেই এবারও অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে তাইওয়ানের কাছে এই অস্ত্র বিক্রিতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। তবে তাইওয়ান প্রশ্নে কংগ্রেসের উভয় দল সব সময় সমর্থন দিয়ে আসছে। তাই কংগ্রেস তাইওয়ানের কাছে নতুন করে এসব অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন শিগগিরই দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন