কেমন আছে আফগানিস্তান–৪

আফগান মাটি আর কখনো যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি হবে না: তালেবান মন্ত্রী

২০২১ সালে ২০ বছরের যুদ্ধে জয়লাভের পর তালেবান আফগানিস্তানে সরকার গঠন করে। কেউ কেউ একে দ্বিতীয় তালেবানের শাসন নামে অভিহিত করছে। কেমন আছে নতুন আফগানিস্তান, তা দেশটিতে ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শুভজিৎ বাগচী। তিনি গত ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে যান, ফিরেছেন ৫ নভেম্বর। আফগানিস্তান ঘুরে তাঁর লেখা প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ও অভিজ্ঞতা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব।

মৌলভি মুহাজের ফারাহি আফগানিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী। মাঠ পর্যায়ের একজন সৈনিক ও সাবেক ইউনিট কমান্ডার, ৪৬ বছর বয়সী মৌলভি ফারাহি ২০ বছরের যুদ্ধের ওপর লিখেছেন পাঁচটি বই। বেশ কয়েকবার ফিরেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। পরে কাজ করেছেন ইসলামি আমিরাত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। কখনো কোনো প্রদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে, কখনো–বা হেরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের মেয়র ও ডেপুটি গভর্নর হিসেবে। তালেবান নেতৃত্বাধীন আমিরাত সরকারের গত চার বছরের কার্যক্রম নিয়ে কাবুলে তিনি সম্প্রতি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শুভজিৎ বাগচীর সঙ্গে।
প্রথম আলো:

আপনি তথ্যমন্ত্রী, তাই গণমাধ্যমবিষয়ক একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। ২০ বছরের যুদ্ধের সময়, তালেবানরা তাদের বক্তব্য প্রচারের জন্য ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছিল। এখন কি আপনাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কোনো প্রচার আছে নাকি আপনারা গণমাধ্যমের ওপর নজরদারি জারি রেখেছেন? আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও বজায় রাখা প্রয়োজন। এগুলো নিয়ে কিছু বলবেন?

মৌলভি মুহাজের ফারাহি: গত ২০ বছরে গণমাধ্যমের সাহায্যে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি জিহাদ কী এবং কেন তা আফগানিস্তানে প্রয়োজন। এখন দৈনন্দিন প্রকৃত যুদ্ধ শেষ হয়ে গণমাধ্যমের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট তা চালাচ্ছে। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এ দেশে কায়েম করা গেছে। আফগানিস্তানে গণমাধ্যমকে সবকিছুই করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের সরকার আসার পরে ৫০টির বেশি এফএম রেডিও চ্যানেলকে পশতু ও দারি ভাষায় সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন ৩৭০টি রেডিও চ্যানেল আছে। ওয়েবসাইট ও টেলিভিশনও আছে। সাধারণত গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয় না।

প্রথম আলো:

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কী অবস্থা?

ফারাহি: সোশ্যাল মিডিয়াও এখানে আছে। কয়েক হাজার ইউটিউব চ্যানেল চালানোর জন্য অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।

কাবুল দখলের তৃতীয় বার্ষিকী উদ্‌যাপনে তালেবান সদস্যরা
ফাইল ছবি: এএফপি
প্রথম আলো:

সরকার যা বলতে চায় তা তুলে ধরার জন্যই এসব অনুমতি দেওয়া হয়েছে?

ফারাহি: না, মোটেই না। সব দেশেই গণমাধ্যমকে কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও আপনি সবকিছু বলতে পারবেন না। এখানে আপনি সবকিছু করতে পারেন। আমরা মাত্র তিনটি মৌলিক শর্ত দিয়েছি, যা মানা প্রয়োজন। এর একটা হলো ইসলামি মূল্যবোধকে সম্মান দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, জাতীয় মূল্যবোধও মাথায় রাখা উচিত…।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

জাতীয় মূল্যবোধ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?

ফারাহি: আমরা আফগান। আগ্রাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন জাতিকে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়তে বাধ্য করেছিল। তারা পাঠানদের উজবেকদের বিরুদ্ধে, উজবেকদের তাজিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য করেছিল। ইসলামি আমিরাত আজকের আফগানিস্তানকে একটি সংহত দেশে পরিণত করেছে। আমিরাতের লক্ষ্য গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা।

প্রথম আলো:

আপনি বলতে চাইছেন যখন কোনো শক্তি গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তখন আপনারা তা থামাতে চেষ্টা করবেন?

ফারাহি: ঠিক তাই।

প্রথম আলো:

তার মানে আফগানিস্তানে এখনো এমন কিছু শক্তি আছে যারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে মতপার্থক্য তা নিয়ে একটা প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে?

ফারাহি: ২০ বছর আফগানিস্তান ‘অকুপেশন ফোর্স’ বা দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখানে ৪৮টি দেশের সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তারা তাদের মূল্যবোধ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। হয়তো এখনো কিছু শক্তি আছে যারা দখলদারদের জন্য কাজ করছে। তবে—আলহামদুলিল্লাহ—সাংবাদিক বা গণমাধ্যম নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। যখনই কোনো সমস্যা হয়, সাংবাদিকেরা এখানে আসেন এবং আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমিরাত সরকার আসার পরে একজন সাংবাদিকেরও মৃত্যু হয়নি। বর্তমানে আফগানিস্তানে একজন সাংবাদিকও কারাগারে নেই। তবে এটা হতে পারে যে একজন সাংবাদিক কাউকে হত্যা করেছে এবং তারপরে তাঁকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কাজের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

কিন্তু আমরা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে পড়ি যে এখানে প্রচুর ‘সেন্সরশিপ’ রয়েছে, সংবাদ পরিবেশন ও সংবাদপত্র চালানোর ক্ষেত্রে নানান বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগও রয়েছে।

ফারাহি: পশ্চিমের দেশগুলো এখানে ২০ বছরে আমাদের মানুষের বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমাদের শহর, স্কুল, মসজিদ ধ্বংস করেছে। লড়াইটা অব্যাহত রয়েছে। এটা বর্তমানে দৃশ্যমান একটা যুদ্ধ নয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে এখনো তারা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তারা আমাদের সম্পদ, টাকাপয়সা আটকে রেখেছে এবং অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইসলামি আমিরাতকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। প্রধানত আফগানিস্তানের সাবেক শত্রু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর অভিযোগ করে চলেছে। বলে চলেছে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, সেখানে নিরাপত্তা নেই, স্থিতিশীলতা নেই, শান্তি নেই। এসব দেখানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত। কিন্তু প্রশ্ন হলো এসব অভিযোগ করছে কে? আপনি দেখবেন এগুলো সামনে নিয়ে আসছে সেই পশ্চিমের গণমাধ্যম।

২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ব্যাপক বোমা হামলার মধ্য দিয়ে আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে
ফাইল ছবি : এএফপি
প্রথম আলো:

আপনাদের টাকাপয়সা যুক্তরাষ্ট্র আটকে রেখেছে। এটা আমরা জানি। সম্প্রতি শুনছি যে এই সম্পদ আপনাদের ফেরত দেওয়া হতে পারে যদি আফগানিস্তান বাগরাম ঘাঁটি হস্তান্তর করে। আমরা জানি যে এই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। এখন এই প্রস্তাব যে আপনারা ঘাঁটি হস্তান্তর করলে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে—এ নিয়ে আপনাদের সরকার কী ভাবছে?

ফারাহি: এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। ইসলামি আমিরাত কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে আবার এখানে আসতে দেবে না। তবে হয়তো তারা এখানে দূতাবাস খুলবে। কিন্তু বাগরাম ঘাঁটি হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।

প্রথম আলো:

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘাঁটি সীমিত আকারে ও অত্যন্ত কঠোর শর্তে এখানে স্থাপনের অনুমতি দেওয়া উচিত, যাতে তারা আফগানিস্তানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে আপনাদের অর্থ দেশে আনতে দেয়—এমন মত কি আপনার সরকারের ভেতরে আছে?

ফারাহি: আমরা এখানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সৈনিককেও আসার অনুমতি দেব না।

প্রথম আলো:

কিন্তু তারা যদি নিজেদের দূতাবাস রক্ষায় সৈন্য আনে?

ফারাহি: কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। এটা ইসলামি আমিরাতের নীতি। দোহায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন তারা তাদের দূতাবাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক হাজার সৈন্য মোতায়েন করতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু আমিরাত তা অনুমোদন করেনি।

বাগরাম ঘাঁটির বাইরে আফগান সেনা
ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্রথম আলো:

সাম্প্রতিক সময়ে ‘মস্কো ফরম্যাট’ শীর্ষক আলোচনায় চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ভারত প্রভৃতি দেশ আফগানিস্তানকে এই ইস্যুতে সমর্থন করেছে এবং বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে মার্কিন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

ফারাহি: এটা আমার বিষয় নয়। এ বিষয়ে মন্তব্যের অধিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তবে আমি বলতে পারি ইসলামি আমিরাত নির্দিষ্টভাবে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। আমরা সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও। আমরা রাশিয়া, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি কোনো দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। আমরা এটা নিয়ে ভাবি যে কোন দেশ কীভাবে আমাদের উপকার করতে পারে। আমরা রাশিয়ার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা স্থিতিশীলতা চাই। আমরা চাই আফগানিস্তান অর্থনৈতিক বিনিময়ের প্রশ্নে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করুক।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

প্রচারমাধ্যমের দায়িত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আপনি দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। ইসলাম ও জাতীয় মূল্যবোধ। এর বাইরে বা তৃতীয় কোনো বিষয় রয়েছে?

ফারাহি: এটা আমাদের দেশের ভূগোল।

প্রথম আলো:

আপনি বলতে চাইছেন দেশের সীমানা নিরাপদ করতে হবে এবং সীমান্ত প্রশ্নে আপস করা যাবে না?

ফারাহি: হ্যাঁ।

প্রথম আলো:

একটা বিষয় সাধারণ মানুষ জানতে চায়। বিষয়টি বাংলাদেশ বা ভারতে হয়তো সেভাবে জানতে পারে না। সেটা হলো তালেবান কীভাবে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেছিল। কীভাবে তারা মুজাহিদদের এক জায়গায় ধরে রাখতে পেরেছিল, যার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী পরাজিত হলো…

ফারাহি: এই যুদ্ধ ক্ষমতা দখলের জন্য হয়নি। মুজাহিদরা পদ পাওয়ার লোভে, অর্থ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য লড়াই করেননি। এটা ছিল জিহাদ। এটা অনেকে বুঝতে পারেন না। কিন্তু এটা প্রথম ও প্রধান সত্য। তাদের কাজ ছিল নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা। এটা শরিয়তেরই ভিত্তি। অবশ্যই এই যুদ্ধ জয়ের নানান কৌশলগত দিক আছে, যেটা আমি আমার বই মেমোরিজ অব জিহাদে ব্যাখ্যা করেছি।

প্রথম আলো:

ইসলামি আমিরাত যুক্তিসংগত স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, সহিংসতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এগুলো কি মূল অর্জন?

ফারাহি: সেগুলো অবশ্যই আছে, কিন্তু মূল অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হলো একটা কেন্দ্রীয় সরকার হিসেবে ইসলামি আমিরাতের স্থিতিশীলতা ও কাজকর্ম। একবার ভাবুন...গত ২০ বছরে দেশের রাষ্ট্রপতি প্রদেশের গভর্নরও পরিবর্তন করতে পারতেন না, এমন পরিস্থিতি ছিল। কারণ, তাঁরা (গভর্নররা) ইংরেজিতে যাঁকে বলে ‘ওয়ার লর্ডস’ বা অঞ্চলভিত্তিক যুদ্ধবাজ ছিলেন। কাবুল যে দেশের ক্ষমতার কেন্দ্র, সেটা মানতে তাঁরা অস্বীকার করতেন। আলহামদুলিল্লাহ, এখন ইসলামি আমিরাতের সরকার একটা কেন্দ্রীভূত সরকার ও প্রশাসন দিতে পেরেছে।

দ্বিতীয় প্রধান অর্জন হলো আফিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ। এ অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ আফিম চাষ আফগানিস্তানে হতো। ৪০ লাখ মাদকাসক্ত ছিল। আমরা তাদের অনেককে পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠাতে পেরেছি। আপনি যদি অতীতে আসতেন তাহলে সর্বত্রই নেশাগ্রস্ত মানুষ দেখতে পেতেন—সেতুর নিচে, পার্কে, প্রতিটি পাড়ায়। এখন একজনকেও খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলো মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখা। আমাদের মুদ্রা আফগানি ডলারের তুলনায় অনেকটাই কম। (এক ডলার‍=৬৬ আফগানি)

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল জালালাবাদে যাওয়ার পথে সুরভি উপত্যকায় মাছের দোকানের পাশে রাখা হয়েছে সোভিয়েত বাহিনীর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ট্যাঙ্ক। এমনভাবে সোভিয়েত ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে
ছবি: শুভজিৎ বাগচী
প্রথম আলো:

১৯৯০–এর দশকের তালেবান বা তালেবান ১.০ এবং ২০২৫–এর তালেবান ২.০–এর মধ্যে দুটি বা তিনটি প্রধান পার্থক্য কী?

ফারাহি: নব্বইয়ের দশকে যখন তালেবান ক্ষমতায় আসে, তখন তারা চলমান যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ছিল (এখানে প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তারপরে আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে)। গোটা দেশ তালেবানের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সে সময়ে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করা। তাই স্বভাবতই তারা দেশ গড়ার অর্থাৎ রাস্তাঘাট তৈরি ও মেরামতি, কলকারখানা নির্মাণ বা অন্যান্য কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করতে পারেনি। যুদ্ধ চলার কারণে তারা দেশ গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়নি। তারা একেবারেই নতুন ছিল। এই সরকারের গত ৩০ বছরের নানান অভিজ্ঞতা অবশ্যই হয়েছে।

প্রথম আলো:

কূটনৈতিকভাবে আপনারা অনেক পরিণত হয়েছেন।

ফারাহি: অবশ্যই। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ এটা একতরফা জয় ছিল না। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক—সব ফ্রন্টেই একটি বিজয় ছিল।

প্রথম আলো:

সব সাফল্য সত্ত্বেও, আমিরাত সরকারের বিরুদ্ধে একটা জোরালো অভিযোগ হয়তো তাদের সব ভালো কাজকে খর্ব করে দিচ্ছে। সেটা হলো, ষষ্ঠ শ্রেণির পরে মেয়েদের স্কুলে যেতে না দেওয়া। মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে আপনাদের নীতি ঠিক কী?

ফারাহি: আপনি আফগানিস্তানে এক মাস কাটাচ্ছেন। আপনার অনেক লোকের সঙ্গে দেখা হবে। সব প্রশ্নের উত্তর আপনি কি আমার থেকেই নেবেন?

প্রথম আলো:

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ফারাহি: ধন্যবাদ।