চীনকে মোকাবিলায় সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর ছিল না জাপানের। এই খাতে বড় কোনো বিনিয়োগও করেনি তারা। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। সামরিক শক্তি বাড়াতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এতে ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে জাপান, যা চীনে আঘাত হানতে সক্ষম।

গত শুক্রবার জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর নানা আশঙ্কা থেকে তারা সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সরকারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে রাশিয়া যে নজির স্থাপন করেছে, তাতে তাইওয়ানে আগ্রাসন চালাতে উৎসাহিত হবে চীন। এতে হুমকিতে পড়বে জাপান। জাপানের কাছে একটি দ্বীপে চীনের এ ধরনের হামলা হলে তাদের জলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক বাহিনীকে স্বীকৃতি দেয় না। সংবিধান অনুযায়ী, দেশটিতে নামমাত্র আত্মরক্ষামূলক সেনাবাহিনী থাকতে পারবে। তবে ফুমিও কিশিদার সরকার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ঢেলে সাজিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করেছে। সরকার বলেছে, আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় এখন যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠেকাতে তারা নানা পদক্ষেপ নেবে। এর মধ্যে রয়েছে খুচরা যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র মজুত, সামরিক রসদ ও সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো নানা বিষয়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করবে জাপান।

জাপান জাতীয় কৌশলপত্রে বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। চীন যে কৌশলগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, আগে কখনো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েনি জাপান।

তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়

জাপানের সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিতে সমর্থন জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ জাপানি নাগরিক এতে সমর্থন দিয়েছেন।

কিশিদার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বর্তমান বাজেটের ওপর ভিত্তি করে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে জাপানকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়ের দেশে পরিণত করবে। তবে কিশিদার প্রশাসন কীভাবে এ অর্থ ব্যয় করবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত পরিকল্পনা জানায়নি।

মূল লক্ষ্য প্রতিরক্ষা

জাপান বলছে, তারা যে প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করবে, তা মূলত পাল্টা হামলার সক্ষমতা অর্জনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জাপানের জাতীয় কৌশলপত্র অনুযায়ী, তাদের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তাদের পাল্টা হামলার সক্ষমতা অর্জন প্রয়োজন। চীনের ক্রমাগত সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঘটনায় জাপান তাদের আগের নীতি থেকে সরে এসেছে।

এর আগে জাপানের জাতীয় কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, বেইজিংয়ের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কৌশলগত অংশীদারত্ব রাখবে টোকিও। কিন্তু এখন দুই পক্ষের সেই ভাষা বদলে গেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার জাপানকে তাদের নীতির প্রতিফলন দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, জাপান সত্যকে উপেক্ষা করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং চীনকে অসম্মান করেছে।

আরও পড়ুন