তালেবানের এক বছর
কাবুল থেকে কান্দাহারের দিকে এগোচ্ছে আফগানিস্তান
যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মোটাদাগে কোনো ফয়সালা করতে পারেনি তালেবান। সংকট আছে বৈদেশিক স্বীকৃতি নিয়েও।
আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোকে তাড়াতে পারার ঘটনা তালেবানের জন্য গৌরবের ছিল। নির্বিঘ্নে এক বছর দেশ পরিচালনাও কম গৌরবের মনে করছে না তারা। ক্ষমতা গ্রহণের বছরপূর্তি উদ্যাপন করতে ১৫ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করে তালেবান। তবে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসবের আমেজ ছিল, তা নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মোটাদাগে কোনো ফয়সালা করতে পারেনি তালেবান। সংকট আছে বৈদেশিক স্বীকৃতি নিয়েও। আত্মঘাতী হামলার শঙ্কায় থাকতে হয় খোদ কাবুলেও।
তারপরও রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণে তালেবান সফলতার দাবি করছে। সর্বশেষ ১২ মাসে শাসকদের কোনো উপদলীয় কোন্দলও সামনে আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো জনবিক্ষোভ হয়নি। আবার বিশ্বের কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতিও দেয়নি।
তালেবানের ক্ষমতার ভিত্তি বাড়তি শক্তি পেয়েছে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই আফগানিস্তানে শাসক তালেবানের পুরো চিত্র আসে না। আবার দেশটির ভেতর থেকেও নির্ভরযোগ্য সংবাদের আকাল চলছে। সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে কাজ করা দুরূহ সেখানে।
টুইটার ও ফেসবুকের ওপর ভরসা করে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর সামান্য যা খবর মেলে, তার বড় অংশ পানশির ও সারে পোলে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহসংক্রান্ত। নারীদের আন্দোলন-সংগ্রামের কিছু খবরও শেয়ার করেন কেউ কেউ। এর বাইরে সামাজিক জীবনধারায় আফগানরা কীভাবে আছে, তার নির্মোহ বিস্তারিত প্রতিবেদন গত এক বছরে সামান্যই পাওয়া গেছে। যুদ্ধোত্তর আফগানিস্তান দুঃখজনকভাবে বিশ্ব মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে। আবার একই সঙ্গে তালেবানের প্রতি বৈশ্বিক মনোভাবও অন্ধভাবে বৈরী।
কিন্তু তালেবানের ক্ষমতা যে শক্ত ভিত পেয়েছে, তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিপরীত দিকে, গত বছরের আগস্টে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জন্য দেশের ভেতরে কোনো সহানুভূতি দেখা যায়নি। দেশের বাইরেও পুরোনো সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি জনসমর্থন প্রকাশ পায়নি।
তালেবান প্রশাসন অনেক বেশি সক্রিয়
কাবুলে ন্যাটোর বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথম বার্ষিকীতে সামান্য যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, তাতে সবাই যুদ্ধ থামাতে পারাকে বড় এক প্রাপ্তি হিসেবে দেখেছে। তবে রাজধানীতে নারীদের বারবার মিছিল করার চেষ্টা জানিয়ে দিচ্ছিল অতীতে দেশ রক্ষার যুদ্ধে পুরুষেরা যেভাবে একচেটিয়া ছিল, এখনকার টিকে থাকার যুদ্ধে তেমনি নারী সমাজ এককভাবে বিশেষ সংকটে আছে।
দেশজুড়েই নারীপ্রধান পরিবারগুলো সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে। নারীদের কাজের স্বাভাবিক অনুমতি নেই। ফলে আয়রোজগারও নেই। দীর্ঘ যুদ্ধের ফল হিসেবে পুরুষ হারানো এ রকম পরিবারের সংখ্যা বিপুল। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির হিসাবে দেশটিতে ৬০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দরকার। সহায়তা পাওয়া গেছে এর অর্ধেকের মতো। বাদাখশান, ঘোর, জাইকুন্দি ও আরুজগানে খাদ্য পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। শেষের তিনটি প্রদেশই মধ্য আফগানিস্তানে। তুলনামূলকভাবে ভালো পরিস্থিতির কাবুলেও দারিদ্র্যের ব্যাপকতা জানিয়ে দেয় কর্মহীন মানুষ ও সাহায্যপ্রার্থীদের বিপুল উপস্থিতি।
নিরাপত্তা পরিস্থিতিও গত বছরের চেয়ে ভালো। বহির্বিশ্বের যে কেউ চাইলে সেসব প্রান্তিক অঞ্চলেও যেতে পারে, যেখানে ২০২১ সালের আগে প্রাণভয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। হামিদ কারজাইয়ের মতো তালেবানবিরোধী নেতাও কাবুলেই থাকছেন। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আবার এত ভালো নয় যে পাকিস্তানে থাকা প্রায় ৩০ লাখ শরণার্থী দেশে ফিরতে পারবে।
গত এক বছরে চোরাগোপ্তা আত্মঘাতী হামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। বিশ্বজুড়ে সামরিক সংঘাত নজরদারি করা সংস্থা একলেড বলছে, গত এক বছরে আফগানিস্তানে অন্তত ৪ হাজার ১০০ মানুষ মারা গেছে সামরিক সহিংসতায়। বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল ৩৯৩টি। মৃত ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছিল গত সরকারের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এ ছাড়া আছে পানশির ও বাগলানের প্রতিরোধযুদ্ধের বিরুদ্ধে তালেবানের অভিযানে নিহত প্রায় ৪৮৫ জন।
তারপরও ২০২১ সালের আগের পরিবেশের তুলনায় এখনকার অবস্থা বেশ ‘শান্তিপূর্ণ’। এই সুযোগে দেশটিতে ব্যবসায়েও ভালো প্রসার ঘটছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না থাকার পরও তালেবান যে প্রশাসন চালিয়ে নিতে পারছে, তার বড় উৎস রাজস্বের ভালো জোগান। ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তে পণ্য লেনদেন ব্যাপক গতি পেয়েছে।
স্থলবন্দরগুলো থেকে গত এক বছরে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের সমান কর জমা হয়েছে কোষাগারে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উপকৃত পাকিস্তানিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার মুখে ইসলামাবাদ তুলনামূলক সস্তা দামে আফগান কয়লা পেয়েছে বেশুমার। দেশের ভেতর সমালোচনা হওয়ায় পরে অবশ্য তালেবান কয়লার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। রাজস্ব বাড়তে থাকায় অবকাঠামোগত কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগের সরকারের পালিয়ে যাওয়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতিমধ্যে নতুন সরকারে যোগ দিয়েছেন।
ডিক্রি আসছে মূলত নারী সমাজ ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সূত্রে কাবুলের প্রতিবাদী নারীরা বিশ্ব মনোযোগ কেড়েছেন সম্প্রতি। বছরজুড়েই তাঁরা কাবুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়। ১৫ আগস্ট বিজয় উৎসবের দিনও সে রকম এক বিক্ষোভ হলো। তাঁদের হাতে লেখা কাগজে স্লোগান ছিল ‘রুটি, কাজ, স্বাধীনতা’। বন্দুকধারীরা এসে তাঁদের দ্রুতই তাড়িয়ে দেয়।
ইসলামে নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ না হলেও তালেবান সরকার এখনো মাধ্যমিক স্তরে বন্ধ রেখেছে সেটা। শিক্ষা ও কাজের নিষেধাজ্ঞা দেশটির নারীদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলেছে। ইউনিসেফের হিসাবে গত আগস্টের আগে প্রায় আট লাখ মেয়ে দেশটির বিভিন্ন স্কুলে পড়ত। তালেবানের ওপরমহলে নারীশিক্ষা নিয়ে অনিচ্ছা আছে। মার্চে শুরু হওয়া স্থানীয় সমাজের নতুন বছর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় একবার। পরে সেই অনুমোদন বাতিল হয়। জুলাইয়ে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত ধর্মীয় মুরব্বিদের এক সম্মেলনে দেখা গেছে, দু-তিন হাজার প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দু-তিনজন মেয়েদের স্কুলের যাওয়ার পক্ষে। নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও নিষেধের তালিকামুক্ত হয়নি এখনো।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের ব্যাপারেও তালেবান মুরব্বিদের অবস্থান নেতিবাচক। গত এক বছরে শতাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম অফিস বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ করতে হয়েছে বিবিধ কারণে। সংবাদকর্মীদের বড় অংশ এখন বেকার সেখানে। পত্রপত্রিকাগুলো দ্বিমুখী চাপে আছে। একদিকে অর্থনীতির বিপন্নতা, অন্যদিকে পছন্দমাফিক খবর পরিবেশনের জন্য ক্ষমতাসীনদের চাপ। গত এক বছরে তালেবান যত ডিক্রি জারি করেছে, তার বড় অংশই নারী সমাজ ও গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে। সব সংবাদমাধ্যমেই তালেবানের ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক এখন।
ভারতও যখন তালেবানের প্রতি আগ্রহী
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আফগানিস্তান নিয়ে বৈশ্বিক আগ্রহ বেশ কমে যায়। পাকিস্তানে ক্ষমতার লড়াইয়ে ইমরান খান হেরে যাওয়ার পর সেই আগ্রহ আরও কমে।
ইমরান হামেশা তালেবানের প্রতি অন্যায় বৈরিতার জন্য বিশ্বনেতাদের দোষারোপ করে দেশটির দিকে সবার দৃষ্টি টেনে রাখতেন। ইমরানের উৎসাহের কারণ বোঝা কঠিন ছিল না। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এক অর্থে পাকিস্তানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল। তালেবানের মাধ্যমে দেশটিতে তারা প্রত্যাশিত প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়।
বিশেষ করে ন্যাটোর অধীনে আফগান মাটিতে ভারত যে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ভোগ করত, গত এক বছর সেটা ছিল না। পাকিস্তানের জন্য যা বড় এক সন্তুষ্টির জায়গা। তবে তালেবান যতটা ইসলামাবাদের অনুগত হবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা ঘটেনি। পাকিস্তানের তালেবানপন্থী টিটিপিকে দমনে বাড়তি কোনো সহায়তা দেয়নি কাবুল। এটা রাওয়ালপিন্ডিতে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে আফগানিস্তানে অন্তত এক দফা বিমান হামলা চালিয়ে সেই ক্ষোভ মেটানো হয়। ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত ২ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখার প্রাচীর বানানো নিয়েও নিমরোজ ও নানগাহর প্রদেশে তালেবানের অসন্তোষ দেখা গেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
এই উভয় দেশের যেকোনো দূরত্ব থেকে সুযোগ নিতে নয়াদিল্লিও পিছিয়ে নেই। ইতিমধ্যে আগের আফগান নীতি পাল্টেছে তারা। জুনে ভারতের একটি প্রতিনিধিদল কাবুল সফর করেছে। নয়াদিল্লি থেকে বার্তাটি ছিল স্পষ্ট। তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারা খুবই আগ্রহী। ইরানেরও একই রকম আগ্রহ। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও তেহরানে আফগান কূটনীতিবিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম আছে। তবে পশতুদের শাসনে শিয়া হাজারাদের নিরাপত্তাহীনতায় ইরান উদ্বিগ্ন এবং ইরান-আফগান সীমান্তের নিমরোজ এলাকায় গত ১২ মাসে কয়েক দফা ছোট আকারের সংঘর্ষও হয়েছে।
আফগানিস্তানে হাজারাদের মৃত্যুর বড় কারণ আইএস নামে পরিচিত গোষ্ঠীর আত্মঘাতী হামলা। তালেবান আন্তজার্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিলেও ওদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলে মনে হয় না। আইএস হাজারাদের মসজিদ ও উৎসবে হামলা চালিয়ে প্রায়ই তালেবানকে জানিয়ে দিচ্ছে তাদের উপস্থিতির কথা।
বিজয়বার্ষিকী যাদের জন্য বিব্রতকর ছিল
আফগানিস্তানে তালেবানের ১৫ আগস্টের বিজয় উৎসব ন্যাটো ও ওয়াশিংটনের জন্য নিশ্চিতভাবে বিব্রতকর এক মুহূর্ত। তবে গত বছর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় পালিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে চাপে ছিল, সম্প্রতি আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুষিয়ে নিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। জাওয়াহিরিকে লুকিয়ে রাখা তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দর–কষাকষিতে ওয়াশিংটনকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। পাকিস্তানের জন্যও এটা বিব্রতকর হয়েছে। তালেবানের হয়ে ইসলামাবাদ এত দিন বিশ্বজুড়ে সুপারিশ করে বেড়ালেও কাবুলে আল-কায়েদার উপস্থিতি তাদের এখন থামতে বাধ্য করেছে।
তালেবানের দফায় দফায় অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের হাতে আটকে থাকা সাত বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আফগান তহবিল ছাড় করেনি। কয়েক হাজার তালেবান সামরিক কমান্ডারকে মোকাবিলায় তাদের যুদ্ধোত্তর এই কৌশল বাস্তবে প্রায় চার কোটি সাধারণ আফগানকেই শাস্তি দিচ্ছে কেবল। এতে তালেবান শাসকদের আরেক ধরনের সুবিধাও হয়েছে। দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও খাদ্যাভাবের জন্য তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী হিসেবে তুলে ধরতে পারছে।
তালেবানের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরী মনোভাবের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের গত এক বছরের আফগান নীতিতেও। তারা গত এক বছরে প্রয়োজন ও প্রতিশ্রুতির মাত্র অর্ধেক সহায়তা দিতে পারল দেশটিতে। আন্তর্জাতিক সহায়তার এ রকম ঘাটতি আফগানিস্তানে নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তার অনেকখানি দায় অবশ্যই জাতিসংঘ এবং বাইডেন প্রশাসনের। তবে এই দুই শক্তি সাহায্য, সহযোগিতা এবং স্বীকৃতির পথে তালেবানের যেসব সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে, সেসবও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু তালেবান তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারিক প্রশাসনে মানবাধিকারমুখী কোনো ধরনের সংস্কারসাধনে আপাতত অনিচ্ছুক। বিশেষ করে কান্দাহারের নেতৃত্ব খুব রক্ষণশীল অবস্থান নিয়ে আছে।
যদিও গত এক বছরে শাসক পরিমণ্ডলে কোনো উপদলীয় সংঘাত ও মতদ্বৈধতা সামনে আসেনি। তবে এটা বোঝা গেছে, কাবুল ও কান্দাহারে দুটি ভরকেন্দ্র আছে তালেবানের।
কাবুলের শাসকেরা বৈশ্বিক চাওয়া-পাওয়া সমন্বয় করে এগোতে ইচ্ছুক। কিন্তু কান্দাহারে শেখ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নেতৃত্বে তালেবানের পুরোনো একাংশ দুই দশক আগের (১৯৯৬-২০০১) অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ। অনেক বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত যখন কান্দাহার থেকে আসছে, তখন কাবুলের অনেক নেতাই যে অস্বস্তি বোধ করবেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। একই কারণে, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাও কাবুলের নেতাদের সঙ্গে আলাপে কম আগ্রহী। সবাই জেনে গেছে, নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রয়োজনীয় সবুজসংকেত পেতে হবে কান্দাহার থেকে। কাতারের দোহাভিত্তিক তালেবান অফিসটিও ইতিমধ্যে গুরুত্ব হারিয়েছে।
সরকারের ভেতরে দুই ধারার এই ঠান্ডা লড়াইয়ের কারণে অনেক প্রদেশে শাসনের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। কাবুলেও ২০২১ সালের ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ মন্ত্রিসভাকে স্থায়ী আকার দেওয়া যায়নি এখনো। পাওয়া যায়নি স্বাধীনতা–পরবর্তী নতুন কোনো সংবিধানও। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জন-অনুমোদিত কোনো সংবিধান না থাকায় তালেবান নেতাদের কথাই আপাতত ‘আইন’ হিসেবে চালু হচ্ছে। যেকোনো বিষয়ে বাদী ও বিচারক তারাই। এক বছর শেষেও ‘তালেবান আন্দোলন’ প্রচলিত সরকারে অনুবাদ হয়নি এখনো।
●আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক