জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে পুতিনের দলের সম্মেলন
আগামী সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সংসদ ডুমার নির্বাচন। ভোটের লড়াইয়ের আগে বিরোধীদের প্রতি চরম দমনপীড়ন চালানোসহ বিভিন্ন কারণে জনপ্রিয়তা কমেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির। নির্বাচনের আগে প্রার্থী ঠিক করা ও ভোটারদের মন জয়ের উপায় খুঁজতে পুতিনের উপস্থিতিতে আজ শনিবার রাজধানী মস্কোয় সম্মেলন করেছে দলটি।
সম্মেলনে পুতিন বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আমাদের দলের ২০ বছর পূর্তি হবে। এসময় রাশিয়ার মতো বড় একটি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কমরীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের অর্জন উদযাপন করতে হবে।
১৯৯৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট পদে রাশিয়ায় ক্ষমতায় রয়েছেন পুতিন। এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই নেতার বিরোধীরা দিন দিন নিজেদের অবস্থান পোক্ত করছে। দেশটিতে পুতিনবিরোধীদের প্রধান মুখ অ্যালেক্সি নাভালনি। পুতিনের বিরুদ্ধে তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তহবিল তছরুপের দায়ে চলতি বছরের শুরুতে নাভালনিকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন রাশিয়ার একটি আদালত। যদিও নাভালনি বরাবর বলেছেন, এসব অভিযোগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। চলতি মাসের শুরুতে মস্কোর একটি আদালত ‘উগ্রপন্থী’ ট্যাগ লাগিয়ে নাভালনির দলের কার্যক্রম বন্ধের আদেশ দিয়েছেন। এর পরপরই উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য, কর্মকর্তা এবং অর্থদাতাদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ রুদ্ধ করেছেন পুতিন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, জনপ্রিয়তা কমতে থাকায় পুতিন নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ওপর খড়্গ চালাচ্ছেন। বর্তমানে ডুমায় পুতিনের দল ইউনাইটেড পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তবে করোনা মহামারিকালে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, ব্যাপক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে জনপ্রিয়তা কমতে থাকায় তা ধরে রাখা নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
সম্মেলনের প্রাক্কালে রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংস্থা ভিটিএসআইওএমের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, এখন ইউনাইটেড রাশিয়ার প্রতি মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগের তুলনায় রাজনৈতিক দলটির প্রতি ১০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন কমে গেছে।
তবে ইউনাইটেড রাশিয়ার চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে আমাদের (ইউনাইটেড রাশিয়া দলের) ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে প্রচারের মাধ্যমে তা আরও বাড়াতে হবে।’ মেদভেদেভ পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এর আগে পুতিনের সঙ্গে পালাক্রমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
তবে ইউনাইটেড রাশিয়ার জনপ্রিয়তা কমলেও দেশটির ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার এখনো ব্যক্তি পুতিনকে সমর্থন করেন বলে জানিয়েছে ভিটিএসআইওএম।
এর জেরে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পরবর্তী নির্বাচনী লড়াইয়ে জয় পেতে পুতিনের ব্যক্তিগত ক্যারিশমা কাজে লাগাতে হবে দলটিকে। যদিও রাশিয়ার বিরোধী দলগুলো আসন্ন নির্বাচনে ৩০ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে ভিটিএসআইওএম। নাভালনিকে জেলে পুরে ও তাঁর দলের কার্যক্রম বন্ধ করার মাধ্যমে এবারের নির্বাচনে অনেকটাই চাপমুক্ত রয়েছেন পুতিন।
শুধু নাভালনিই নন, নির্বাচনের আগে অন্য বিরোধীদেরও চাপে রেখেছেন পুতিন। দেশটির বিরোধী দলের সাবেক আইনপ্রণেতা দিমিত্রি গাদকভ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। তবে চলতি মাসে তিনি ইউক্রেনে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র তাঁকে জানিয়েছেন, দেশ না ছাড়লে গ্রেপ্তার করা হবে। এ জন্য তিনি দেশ ছেড়েছেন।
গাদকভ পারলেও অনেকেই দেশ ছাড়তে পারেননি। পুতিনবিরোধী ওপেন রাশিয়ার সাবেক নেতা আন্দ্রেই পিভোভারোভের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলা সক্রিয় করা হয়েছে। আটক হয়েছেন তিনি। সেন্ট পিটার্সবার্গের মিউনিসিপ্যাল আইনপ্রণেতা ম্যাক্সিম রেজনিক ও মস্কোর কেটেভান খারাইদজেকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা সবাই সংসদ নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।